শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
স্মরণীয় বরণীয়

রবীন্দ্রনাথ ও লালন সাঁই

সুদীপ সুজন

রবীন্দ্রনাথ ও লালন সাঁই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধার্মিক ছিলেন। ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমী। তাঁর অসংখ্য কবিতা ও সংগীতে ঈশ্বরপ্রেম পরিস্ফুটিত। তবে এ ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। তাঁর মানবিক সত্তা কখনো ধর্মসত্তার কাছে জিম্মি হয়নি। রবীন্দ্রনাথের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে লালন সাঁইয়ের সেই বাউল গানটির কথা। মানবধর্মের প্রতি গভীর আস্থাশীল লালন সাঁই নিজের জাতপাত সম্পর্কে লোকজনের জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন গানের মাধ্যমে। গানটি হলো- ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/সুন্নত দিলে হয় মুসলমান/নারী জাতির কী হয় বিধান/আবার বামন যিনি পৈতায় প্রমাণ/ বামনী চিনি কী ধরে?’

লালন জাতপাতে বিশ্বাসী ছিলেন না। এমনকি তাঁর ধর্মবিশ্বাসও সংকীর্ণ গন্ডিতে আবদ্ধ ছিল না। নিজের জাতপাত সম্পর্কে লালন ভক্তদের হেঁয়ালির মধ্যে রাখতে চেয়েছেন। তিনি সবাইকে যে সত্যের দিকে দিকনির্দেশ করেছেন তা হলো, মানুষের প্রধান পরিচয় সে একই আদমের সন্তান। সে পরিচয়ের কাছে জাতপাত বা ধর্মীয় পরিচয় নিতান্তই গৌণ। লালন সাঁইর জাতপাত নিয়ে সাধারণ মানুষের অনুসন্ধিৎসার সংগত কারণ ছিল। লালন জšন্ডে§ছিলেন অতি সাধারণ ঘরে। ভাগ্যের বিড়ম্বনা শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাঁকে। এ বিচ্ছিন্নতা অবশ্য লালনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। অসহায় লালনকে অপত্যস্নেহে পালন করেন ফিরোজ সাঁই। লালন সাঁই নামের ভাবজগতের যে মহিরুহকে আমরা জানি তার জনক মূলত ফিরোজ সাঁই। ফিরোজ সাঁই ধর্মীয় সত্তার চেয়ে মানবিক সত্তার বেশি মূল্য দিতেন। পালকপুত্র বা প্রিয় শিষ্য লালনের মধ্যেও তিনি এ ধারণা গেঁথে দিতে সক্ষম হন। লালনের পরিচয় নিয়ে হেঁয়ালি থাকলেও তিনি যে জাতপাতকে হেলা করে সবাইকে বুকে টেনে নিতে পারতেন তাতে কোনো সংশয় নেই। লালনের অহংকার করার মতো জন্মপরিচয় না থাকলেও তাঁর ভাবশিষ্য রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এ ক্ষেত্রে ঈর্ষা করার মতো সৌভাগ্যের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কলকাতার সুবিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান। তৎকালীন বাংলায় এ পরিবারটির আভিজাত্য ছিল আকাশছোঁয়া। ঠাকুররা ছিলেন বড় মাপের জমিদার। যে কারণে জাতপাত শনাক্তকরণে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হেঁয়ালি সৃষ্টির অবকাশ কম। রবীন্দ্রনাথ যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ধর্মীয় অঙ্গনে তাদের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। জাতপাতের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। তাঁরা মুক্তবুদ্ধি ও মুক্ত চেতনার প্রতিনিধিত্বকারী একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ধর্মমত প্রচার করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন রবীন্দ্রনাথেরই বাবা।

            

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর