শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসে কেয়ামতের বর্ণনা...

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসে কেয়ামতের বর্ণনা...

আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে তখন তারা কবর থেকে উঠে তাদের প্রভুর দিকে ছুটতে থাকবে।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৫১) ‘এরপর যখন শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে তা হবে একটি মাত্র ফুঁ।’ (সুরা আল হাক্কাহ, আয়াত ১৩) এ আয়াত দুটি থেকে স্পষ্ট শিঙায় ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হবে আর তখনই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘শিঙায় ফুঁ দেওয়ার পর আমিই প্রথম মাথা ওঠাব। তখন আমি দেখতে পাব মুসা (আ.) আরশ ধরে আছেন। (তিনি বলেন) আমি জানি না তিনি কি এভাবেই ছিলেন নাকি শিঙায় ফুঁ দেওয়ার পর হুঁশে এসে এরূপ করেছেন।’ (বুখারি) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ দেহে খতনাবিহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করা হবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ হবে? তারা কি একে অন্যের প্রতি তাকাবে? এরূপ হলে তো খুবই লজ্জার বিষয়। উত্তরে তিনি বললেন, হে আয়েশা! কেয়ামতের দিনটি এত ভয়াবহ ও বিপন্ময় হবে যে, সেদিন কেউ কারও দিকে তাকানোর খেয়ালও থাকবে না।’ (বুখারি, মুসলিম) আল্লাহ বলেন, ‘আর ভূমন্ডল ও পাহাড়গুলোকে উঠিয়ে নেওয়া হবে, তারপর উভয়টাকে একেবারেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে। ঠিক সেদিনই মহাঘটনাটি সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ ফেটে পড়বে, এরপর তা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা আল হাক্কাহ, আয়াত ১৪-১৬)

দুবার শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। প্রথম ফুঁতে জমিন ও আসমানের মধ্যবর্তী সব ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় ফুঁর ফলে পুনরায় সব মৃত জীবিত হয়ে উঠবে। সেদিন নিজ সন্তান কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, মা, বাপ, স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের থেকে পালাতে থাকবে, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অবস্থার মধ্যে এমনভাবে লিপ্ত থাকবে যে তার কারও কথা মনে থাকবে না।’ (সুরা আবাসা, আয়াত ৩৪-৩৭) আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সেই দিনটিকে ভয় কর যেদিন একজন আরেকজনের কোনোই কাজে আসবে না, একজনের কাছে আরেকজনের কোনো সুপারিশও গ্রহণ করা হবে না। মুক্তির জন্য কারও কাছ থেকে কোনো মুক্তিপণ নেওয়া হবে না। না তাদের সেদিন কোনো সাহায্য করা হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ৪৮)

সুরা জিলজালে আল্লাহ বলেন, ‘যখন প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে পৃথিবীকে প্রকম্পিত করা হবে এবং পৃথিবী তার মধ্যে রক্ষিত বোঝাগুলো বের করে দেবে তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে বলতে থাকবে তার কী হয়েছে?’ (আয়াত ১-৩) আল্লাহ আরও বলেন, ‘সে প্রশ্ন করে কখন কেয়ামতের দিন আসবে? যখন চোখ স্থির হয়ে যাবে। চাঁদ হয়ে পড়বে কিরণহীন। আর যখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে আজ পালাবার স্থান কোথায়?’ (আয়াত ৬-১০) কেয়ামতের দিন সবার দৃষ্টিতে ধাঁধা লেগে যাবে। ফলে চোখ কোনো স্থির বস্তু দেখতে পাবে না। চাঁদ জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে। সুরা আল কারিয়াহ আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষগুলো বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হয়ে পড়বে। পাহাড়গুলো ধুনিত রঙিন তুলার মতো হবে।’ (আয়াত ৪-৫) কারিয়াহ শব্দের অর্থ মহাবিপদ। আল কারিয়াহ শব্দটি কেয়ামতের একটি নাম। আগুন জ্বালানোর পর পতঙ্গ যেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে আগুনের দিকে ছুটে আসে সেদিন মানুষ তেমনিভাবে হাশরের ময়দানে ছুটে আসবে। সেদিন সারা দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা ল-ভ- হয়ে যাবে। পাহাড়গুলো ধোনা পশমের মতো হয়ে যাবে যা বাতাসে উড়তে থাকবে।

রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কেয়ামত ঘনিয়ে আসবে তখন মানুষের আমল হ্রাস পাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। (সাহাবিরা জানতে চাইলেন হারজ কী। তিনি বললেন, হত্যা, হত্যা)।’ (বুখারি)

 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর