শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদায় গর্বাচেভ

পশ্চিমে শোকের ছায়া, দেশে উপেক্ষা

সর্বশেষ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেছেন মস্কোতে ৯১ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তিম যাত্রা নিশ্চিতকারী এই সংস্কারবাদী নেতা। গর্বাচেভের মৃত্যুতে পশ্চিমা জগতে ছড়িয়ে পড়েছে শোকের ছায়া। তবে যে দেশের নাগরিক তিনি সে দেশে তাঁর মৃত্যু উপেক্ষার শিকার হয়েছে। পরপর বেশ কজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রক কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদ অলংকৃত করেন মিখাইল গর্বাচেভ। প্রবীণদের বদলে পলিটব্যুরোর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য গর্বাচেভকে দুনিয়ার অন্যতম পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্ণধার করা হয় দেশকে তিনি আরও মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারবেন এ আশায়। তাঁর পূর্বসূরি মাত্র এক বছর দায়িত্বে থাকার পর ৭৩ বছর বয়সে মারা গেলে বয়স্কদের ভিড়ে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সর্বময় ক্ষমতা হাতে পান গর্বাচেভ। ক্ষমতায় এসে তিনি যে গ্লাসনস্ত বা উন্মুক্ত হওয়ার নীতি গ্রহণ করেন তাতে সোভিয়েতের অনেক অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী চিন্তার উদ্ভব হয়। আর এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়নের পতন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন গর্বাচেভ। পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে একজন সংস্কারক হিসেবে দেখে, কারণ তিনি স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন আনায় ১৯৯০ সালে তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে যে নতুন রাশিয়ার জন্ম হয়, সেখানে রাজনীতিক হিসেবে তাঁর পাত্তাই ছিল না। মানুষের কাছে ছিল না গ্রহণযোগ্যতা। ১৯৯৬ সালে তিনি একবার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ০.৫ শতাংশ ভোট পান। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে বিশ্বব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট নয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বিশ্বশক্তির বদলে বিশ্বে একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের রাজত্ব কায়েম হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের উন্নয়নও ঘটেনি প্রতিপক্ষের অনুদার ভূমিকার কারণে। ফলে গর্বাচেভের মৃত্যু রাশিয়ায় যে দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে তা কোনোভাবেই কারও জন্য প্রত্যাশিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর