শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল

পৃথিবী নামক মরা গাঙে আজ জোয়ার এসেছে। মহাবিশ্বের অশান্ত জগতে খুশির বান ডেকেছে। প্রাণিকুলের মনবাগানে আনন্দের ফুল ফুটেছে। বিশ্বাসীদের শুষ্ক আত্মায় রহমতের বর্ষণ শুরু হয়েছে। গাছে গাছে কানাকানি, পাখপাখালির জানাজানি- ওই শোনো! নবীজির মিলাদের মাস রবিউল আউয়াল এসেছে। হে ফুলপাখিরা! নাচো! গাও। হে মানবকুল! আনন্দ কর। হে ফেরেশতাগণ! দরুদের সুর তোলো। হে জানা-অজানা গ্রহনক্ষত্ররাজি! রহমতের নবীর শানে পড়! সাল্লে আলা মুহাম্মাদ! হতাশায় নিমজ্জিত হে পৃথিবীবাসী! আর ভয় নেই। শঙ্কা নেই। চিন্তা নেই। সব ভয়-ডর দূর করতে এসেছে রবিউল আউয়াল। জগতের অন্ধকারে আলোর ফুল ফোটাতে এ মাসেই ধরায় আগমন করেছেন রহমতের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। পৃথিবী যখন অশান্তির দাবানলে পুড়ে ছাই, সে ছাই থেকে সোনা ফলাতে এসেছেন মুহাম্মাদ (সা.)। এ মাসের ১২ তারিখেই তাঁর আগমন। শুভ জন্মদিন হে নবী! আমাদের সালাম নিন হে নবী!

সুরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! উম্মতকে বলে দিন, আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামতরাজি দিয়েছেন তার জন্য আনন্দ-উল্লাস কর।’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ আমাদের যত নিয়ামত দিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো স্বয়ং হুজুর (সা.) নিজে। সুরা আলে ইমরানের ১৬৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ ইমানদারদের ওপর রসুল পাঠিয়ে অনুগ্রহ করেছেন।’ এরপর ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর আগমন উপলক্ষে আনন্দ করা, উল্লাস করা, খুশি হওয়া, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা, নফল নামাজ ও রোজা রাখা সবকিছুই আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যম। বুখারির হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) নিজের জন্মদিন পালন করতেন রোজা রেখে। তিনি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন সে দিনটি ছিল সোমবার। তাই হুজুর (সা.) প্রতি সোমবারই রোজা রাখতেন।

রসুল (সা.)-এর জন্মদিনে খুশি হওয়া উচ্চস্তরের ইবাদত। এটা এমন মর্তবার ইবাদত যে, কোনো কাফেরও যদি নবীর আদর্শ নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে তার বিনিময়ও আল্লাহ দিয়ে থাকেন। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বুখারিতে আবু লাহাব সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটি। হজরত উরওয়া (রা.) বর্ণনা করেন, কট্টর কাফের আবু লাহাবকে যখন দাসী সুয়াইবা এসে খবর দিল, আপনার ভাই আবদুল্লাহর স্ত্রী আমেনা পুত্রসন্তান প্রসব করেছে, তখন আবু লাহাব খুশি হয়ে দাসী সুয়াইবাকে আঙুলের ইশারায় মুক্ত করে দেন। হুজুরের নবুয়ত প্রকাশের পর আবু লাহাব হুজুরকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আবু লাহাব যখন মারা যায় তখন ওই যে নবীর জন্ম উপলক্ষে খুশি হয়ে দাসী মুক্ত করেছিল এর বিনিময়ে আল্লাহ তার কবরের আজাব হালকা করে দেন। বুখারির বর্ণনা থেকে জানা যায়, আবু লাহাবের মৃত্যুর পর হজরত আব্বাস (রা.) তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ভাই আবু লাহাব তুমি কেমন আছ? জবাবে আবু লাহাব বলে, ভাই আব্বাস! মৃত্যুর পর থেকে আমি খুবই যন্ত্রণায় আছি। মারাত্মক আজাব আমাকে ঘিরে রেখেছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে প্রতি সোমবার আমার আজাব কমিয়ে দেওয়া হয়। আর পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লে হাতের আঙুল চুষলে মধু খেতে পারি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর