সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নবাব আহসানুল্লাহ

নবাব আহসানুল্লাহ

ঢাকার নওয়াব আহসানুল্লাহ খাজা ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ আগস্ট ঢাকার বিখ্যাত নওয়াব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাজা আবদুল গণি। নওয়াব আহসানুল্লাহ মাত্র বাইশ বছর বয়সে ঢাকা নওয়াব এস্টেট পরিচালনার দায়িত্ব পান। ঢাকার গোবিন্দপুর পরগনা কিনে তিনি এস্টেটের আয়তন বৃদ্ধি করেন। ১৮৭২ সালে ঢাকার নওয়াবদের বাসভবনের পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হলে তাঁর নামে প্রাসাদটির নামকরণ করা হয় আহসান মঞ্জিল। ১৮৬৪ সাল থেকে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ও অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ঢাকা পৌর এলাকায় গোরস্থান নির্মাণ ও উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আহসানুল্লাহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ৫০ লক্ষাধিক টাকা দান করেন। এতদাঞ্চলে এমন কোনো মসজিদ, দরগাহ কিংবা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ছিল না যা তাঁর দান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য দানের মধ্যে ছিল ঢাকার হোসেনি দালান পুনর্নির্মাণে (১৮৯৭) ১ লাখ টাকা, ঢাকায় প্লেগ নিবারণে (১৮৯৮) ১ লাখ টাকা, কুমিল্লা শহর উন্নয়নে (১৮৯৮) ৮০ হাজার টাকা, বড়লাটের দুর্ভিক্ষ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা, মক্কায় নহরে জুবায়দা সংস্কারে ৬০ হাজার টাকা, মিটফোর্ড হাসপাতালে বিভিন্ন দান প্রায় ১ লাখ টাকা ও লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতাল (ঢাকা) নির্মাণে (১৮৮৮) ৫০ হাজার টাকা ইত্যাদি। প্রতি বছর ৩০/৪০ জন হাজি তার অর্থে হজে যেতেন। তিনি পটুয়াখালী বেগম হাসপাতাল (১৯০০), মাদারীপুর মসজিদ ও মাদরাসা (১৮৮৬-৮৭) এবং বাইগুন বাড়ি মসজিদ নির্মাণ করেন। ঢাকার সাতগম্বুজ মসজিদ, খাজা আম্বর মসজিদ, শাহজালাল দাখিনীর মসজিদ, লালবাগ শাহী মসজিদ, কলতাবাজার মসজিদ, বেগমবাজার মসজিদ, ফতুল্লা মসজিদ, হাই কোর্ট (চিশতি বেহেশতির) মাজার, পীর ইয়ামেনির দরগাহ, শাহ নেয়ামতউল্লাহর সমাধি, শাহ মসউদ ও পীর জঙ্গীর দরগাহ, মগবাজার খানকাহ, বাবুপুরা দরগাহ, বিবিকা রওজা, মীরপুরের শাহ আলীর মসজিদ ও মাজার, নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল দরগাহ ইত্যাদি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে তিনি অর্থ সাহায্য দেন। আহসানুল্লাহ সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে ঢাকা শহরে প্রথম বিজলিবাতি দানের ব্যবস্থা করেন। ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর উক্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। তিনি ১৮৯৯ সালে ঢাকা মোহামেডান ইউনিয়ন স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা দেন। তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন। ঢাকায় তিনি মোহামেডান লিটারারি সোসাইটির শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।

কর্ম ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তিনি উর্দু ও ফারসি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। ‘কুল্লিয়াতে শাহীন’ নামে তাঁর একটি উর্দু-ফারসি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তার নির্দেশনায় ঢাকা থেকে ১৮৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ‘আহসানুল কাসাস’ নামক একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। তার লেখা ‘তারিখে খান্দানে কাশ্মীরিয়াহ’ নামক গ্রন্থটির (অপ্রকাশিত) একটি পান্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর