বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
রৌদ্র ছায়া

মীর জাফরের কবরে থুথু ফেলা হয়

মাকিদ হায়দার

মীর জাফরের কবরে থুথু ফেলা হয়

১৭৫৭ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে বাংলা, বিহার, ওড়িশা রাতারাতি হারালেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার নিকটাত্মীয় মীর জাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতায়। নিমকহারাম মীর জাফর, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ এবং সিরাজের আরেক নিকটাত্মীয় ঘসেটি বেগমের জিঘাংসা থেকে বাঁচতে সিরাজ সপরিবারে পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। এক লোভী ফকির ধরিয়ে দিয়েছিলেন সিরাজকে। লর্ড ক্লাইভ মীর জাফরকে আশ্বস্ত করেছিলেন বাংলা, বিহার, ওড়িশার নবাব হবেন মীর জাফরই। সেই আশ্বাসেই বিশ্বাসঘাতক। [যেমন বিশ্বাসঘাতক আমাদের দেশের খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরসহ আরও জনাকয়েকের শলায় সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা।] মীর জাফরকে নবাব বানালেও দীর্ঘদিন রাজত্ব করার আগেই তাকে বিদায় দিয়েছিল ক্লাইভ গং এবং জাফরের পুত্র মীরনকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিল ক্লাইভের কূটবুদ্ধিতে।

বাংলাদেশে তথা সমগ্র পৃথিবীতে ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে আমি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে গিয়েছিলেম অনুজ দাউদ হায়দারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাসির আহমদের বাড়িতে। দুজনই কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। নাসির আহমদ ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের তুখোড় ছাত্র। অনার্স এবং মাস্টার্সে নাসির আহমদ প্রথম শ্রেণি পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি জোটেনি। যেমন জোটেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. আবু হেনা মুস্তফা কামালের। অভিমানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। ৫০-এর দশকের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ড. হেনাকে পছন্দ করতেন না, যেহেতু তিনি অতি মেধাবী। মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবগুলোতেই ছিল ঈর্ষণীয় ফল। নাসির আহমদের ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছিল। অনুজ দাউদ থাকতেন বিখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক অন্নদা শংকর রায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে। দাদু অন্নদা শংকর এবং দিদি লীলা রায় দাউদকে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। সেই সময় দাউদ লেখাপড়া করেছিল তুলনামূলক সাহিত্যে এবং কলকাতার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় খণ্ডকালীন সাংবাদিকতা করতেন।

প্রায় ১৮-২০ বছর আগে আমি কলকাতায় গেলে দাউদ আমাকে নিয়ে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে নাসিরের বাড়িতে। নাসিরের এক আত্মীয় কাবুল চৌধুরী, প্রতাপশালী এবং ব্যবসায়ী। তিনি আমাদের দুই ভাইকে তার বাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে কিছু সময় পরেই এলেন নাসিরের বাড়িতে। নাসিরের স্ত্রী এবং এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। বেশ কয়েক দিন থাকার পর একদিন দাউদ, কাবুল চৌধুরীকে বললেন, আমাকে বহরমপুরের দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখিয়ে আনতে। কাবুল জানালেন, আগামীকাল সকাল ১০টায় রেডি হয়ে থাকবেন। বহরমপুরে দর্শনীয় জায়গায়গুলোতে আমার ‘ভেসপায়’ নিয়ে যাব। দেখাব হাজারদুয়ারী, নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি এবং আরও দেখবেন মীর জাফর আলী খানের কবর। পরের দিন তিনি যথাসময়ে এলেন প্রথমে নিয়ে গেলেন দর্শনীয় হাজারদুয়ারীতে এবং সেখানকার জাদুঘরে। ১৭৫৭ সালের কামান এবং গোলাবারুদের শূন্য বাক্স। সেখান থেকে আমরা গেলাম সিরাজের এবং তার পরিবারের সদস্যদের কবর দেখতে। ভাগিরথী নদী পেরিয়ে বেশ কয়েক মাইল যাওয়ার পর ‘ভেসপা’ রেখে প্রায় ঘণ্টা খানেক ছিলাম জরাজীর্ণ সিরাজদের কবরখানায়। অযত্ন-অবহেলায় কবরের অনেক ইটেই নেই সিমেন্ট-বালি। তবে কবরস্থানের বাইরে একটি সাইনবোর্ড দেখলাম এবং পড়লাম মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কথা।

এবার আমরা দুজন গিয়ে পৌঁছলাম মীর জাফরের সমাধিস্থলে। গিয়ে আমার ভালো লাগেনি সেখানেও একটি সাইনবোর্ড এবং মীর জাফরের কবরটি অতি যত্নসহকারে টাইলস দিয়ে বাঁধানো। এমন সময় আরও দেখলাম কলকাতার আশপাশের অনেক লোক বিশেষত মহিলারা মীর জাফরের কবরের ওপর থুথু ফেলছেন। কেউ কেউ বললেন, নিমকহারাম। এই হারামজাদার জন্যই ব্রিটিশরা ভারত শাসন-শোষণ করল ১৯০ বছর। কথা শেষে ওদের দেখাদেখি আমি আর কাবুল থুথু দিলাম মীর জাফরের কবরে। পর দিন কাবুল দেখতে নিয়ে গেলেন জগৎশেঠের বাড়ি এবং উমিচাঁদ ও মীর জাফরের বিশাল বাড়ি, সম্ভবত বহরমপুর শহরের উত্তর দিকে। মীর জাফরের বাড়িতে ঢুকতে দিল না বাড়ির কেয়ারটেকার। কাবুলকে বলা হলো- বাড়ির ভিতরে একটি পরিদর্শন বই আছে, সেখানে পরিদর্শকরা এসে যাচ্ছেতাই লিখে রাখে, বেইমান, নিমকহারাম ইত্যাকার। জাফরের বাড়ির কেয়ারটেকার কথাটি বলেই দরজা আটকে দিলেন।

১৯৫৭ সালের পরে দীর্ঘ ১০০ বছর ব্রিটিশরা এ দেশে লুটপাট, শোষণ, শাসন, নীলচাষসহ বিবিধ অত্যাচারে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তোলার পরে ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে শুরু হয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহ। আমি ইতিহাসের ছাত্র না হলেও ইতিহাস পড়তে গিয়ে আরও অনেক অতীত কথা ইতিহাস জানিয়েছে আমাকে।

১৮৫৭ সালের পরে ১৯৫৭ সালে ফেরা যাক। আমার বয়স তখন ১০ বছর। আমাদের গ্রামের বাড়ি দোহারপাড়ায় প্রচুর গাছপালা। ঘুঘুদের ডাকে সারাটা দিন আনন্দেই কেটে যেত। আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিকেই ছিল বিঘা খানেক জমির ওপর অনেক সুপারি গাছ। আমার মেজ কাকার মেয়ে কণা একদিন আমাকে জানাল, সুপারি গাছে প্রচুর সুপারি পেকে আছে। পাকাগুলো মাটিতে পড়ে গেলে পাড়ার লোকেরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। এমন সময় আমার ছোটবোন হেনা বলল- কণাবু মিথ্যে কথা বলছে। আমি জানতাম কণা মিথ্যা বলেনি, তাই রাগের বশে হেনাকে থাপ্পড় মেরে সুপারি বাগানে গিয়ে দেখি, কণার কথাই ঠিক। তক্ষণই কণাকে বললাম, শমসের রাখালকে বল, ওর ঘাসকাটা কাঁচিটা দিতে। একটু পরেই কাঁচি হাতে কণা এলে আমি ২০-২৫ ফুট একটি সুপারি গাছের অনেক সুপারির লাল-হলুদ চেহারা দেখে কাটতে গিয়ে কখন যে সুপারি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে গলার ‘কলার বোন’ দুই দিকের ডানের এবং বামেরটা ভেঙে হাড় বের হয়ে যাওয়ার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। কণা বাড়িতে গিয়ে খবর দিতেই মা-কাকি এবং প্রতিবেশী সবাই এসে উপস্থিত হয়েছিল। আর তখনই আমার মামার একমাত্র ছেলে গোলাম মোস্তফা ভাই তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন পাবনা সদর হাসপাতালে। তিনি এ হাসপাতালেই চাকরি করতেন। আমার বাবা শেখ মোহাম্মদ হাকিমউদ্দিন এবং আমার ভাগ্নি বকুলসহ অনেক আত্মীয়ই সেদিন এসেছিলেন হাসপাতালে। বাবা নাকি কেঁদেছিলেন শিশুরমতো। সেই ১৯৫৭ সালে আমার প্রথম হাসপাতালে থাকা। একটানা এক মাস। আমার বাড়ি ফেরা উপলক্ষে পাড়ার সবাই দেখতে এসেছিলেন।

মাঝখানের ১০ বছর অর্থাৎ ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পড়তাম জগন্নাথ কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মাত্র তিন মাসের আগেই এবার ভর্তি হতে হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ‘অ্যাপেনডিক্স’ অপারেশন করেছিলেন ডা. আজহার, তিনি থাকতেন আমাদের পাশের বাসায় ১৪/২ মালিবাগে। পেটের প্রচণ্ড ব্যথায় যখন চিৎকার করছিলাম তখন ডা. আজহার নিজেই ঢাকা মেডিকেলে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে নিয়ে গেলেন ঢাকা মেডিকেলে। তিনি ছিলেন সহকারী অধ্যাপক। ফলশ্রুতিতে উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট খারাপ হলো। এর মাঝে একাধিকবার অসুস্থ হয়েছি। হাসপাতালে থাকতে হয়েছে ২০০৭, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে বারডেমে ডায়াবেটিস নিয়ে। মাঝে বেশ ভালোই ছিলাম।

গত জুলাই ২০২২ এক রাতে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া নিয়ে ১৬ জুলাই গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলাম প্রফেসর ডাক্তার জালালুল ইসলাম ভূ্ইঁয়ার সঙ্গে। তিনি ভর্তি করিয়ে জানালেন আগামীকাল বিকাল ৪টায় আপনার অপারেশন হবে। হার্নিয়া এবং মূত্রনালি এবং অণ্ডকোষ একটি ডিমের আকার ধারণ করেছে ডানদিকের। ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে আসিফ হায়দার মিহির এবং তার এক বন্ধু আল আমিন আমাকে সান্ত্বনা দিল, ভয়ের কিছু নেই। পরদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা- ৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে তিনটি অপারেশন সাকসেসফুল হয়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে এক দিন এক রাত কাটানোর পর তৃতীয় দিন পাঠালেন আমার কেবিনে। দিন সাতেক হাসপাতালে থাকার পরে হাসপাতাল যে বিলটি দিল সেখানে দেখলাম অন্য দুজন ডাক্তার তাদের সম্মানী নিলেও নেননি প্রফেসর ডাক্তার জালালুল ইসলাম ভূঁইয়া। প্রফেসর ইসলামের ডিগ্রি একাধিক দেশে এবং বিদেশে। তিনি এফআরসিএস করেছেন ইংল্যান্ডের গ্লাসগো থেকে। একাধারে ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোলজি এবং ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন। আমার তিনটি অপারেশন খুব ভালোভাবেই হয়েছে।

আমি হাসপাতাল ছেড়ে আসার দুই দিন আগে একজন তরুণ ডাক্তার আমাকে দেখতে এসে বেশ কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থেকে কুশলাদি জানলেন। শরীরের পরীক্ষা শেষে ডাক্তার সাহেব জানতে চাইলেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। এখন কেমন আছেন। ভালো বললাম, তিনি তখনই বললেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘আপনার কলামগুলো পড়ে আনন্দ পাই। আর আপনি মাকিদ হায়দার, কবি, এই তথ্যটি আমাদের স্যার জালালুল ইসলাম ভূঁইয়া, তিনিও জানেন। তরুণটি শেষে জানালেন তিনিও একসময় গল্প-কবিতা লিখতেন।

তিনি চলে যাওয়ার পর আমার মনে হলো ডা. ভূঁইয়া কি আমাকে কবি জেনে তার পারিশ্রমিক নেননি? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম এবং মনে মনে ডা. ভূঁইয়াকে ধন্যবাদ দিলাম কবিদের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ জেনে।

বিকালের দিকে অনুজ জাহিদ হায়দার মেজভাই রশীদ হায়দারের বড় মেয়ে হৈমন্ত হায়দার, ছোট মেয়ে শাওন্তী হায়দার এলো। ইতিপূর্বে একাধিক স্বজন এসেছিলেন। জাহিদ কথা প্রসঙ্গে জানাল, ডা. মিতু আপনার শারীরিক অবস্থার কথা আমার কাছ থেকে জেনেছেন। আপনাকে দেখতে আসবেন।

তখনই আমার মনে পড়ল, ৪২ বছর আগের একটি কথা। আমি ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরি ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের একদিন জামালপুরের বিসিক অফিস থেকে এসে আমাকে জানালেন, স্যার আপনাকে জামালপুর যেতে হবে, আরও যাবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক কবি মোহাম্মদ রফিক এবং আপনার ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে, আমাকে পাঠিয়েছেন মিতু আপা। কবি মোহাম্মদ রফিক এবং অনুজের সঙ্গে আলাপান্তে স্থির করলাম, যাব জামালপুরের আখলাপাড়া মিতুদের বাড়িতে। কবি মোহাম্মদ রফিক ভাই এবং জাহিদের সঙ্গে আলাপান্তে ঠিক হলো যাব জামালপুরের আখলাপাড়া অ্যাডভোকেট সোবহান সাহেবের বাড়ি। যথারীতি ট্রেনে গিয়ে পৌঁছলাম জামালপুর রেলস্টেশনে। স্টেশনে দেখলাম অনেক ছেলেমেয়ে, দলনেতা শাহিনা সোবহান মিতু। মিতু চমৎকার রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছিলেন দুই দিনের কবিতা পাঠের আসরে। পরে তিনি ডাক্তার হয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি বই লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনিও প্রফেসর ডাক্তার।

অনুজ জানাল, গ্রিন লাইফ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. জালালুল ইসলাম ভূঁইয়া মুকুল ভাইয়ের স্ত্রী। সেই মিতু পর দিন আমার জন্য ওর ধানমন্ডির বাসা থেকে খাবার রান্না করে আনলেও খেতে পারিনি। যেহেতু আগেই আমি হাসপাতাল ছেড়েছিলাম। প্রফেসর জালালুল ইসলাম ভূঁইয়া অনেক অপারেশন রোগীর কাছে পারিশ্রমিক নেন না, যদি রোগী কবি, সাহিত্যিক শিল্পী হয়ে থাকেন। তথ্যটি শুনে ভালো লাগল, প্রফেসর জালালুল ইসলাম ভূঁইয়াকে তার কীর্তির জন্য শ্রদ্ধা এবং শাহিনা সোবহান মিতুকে অফুরন্ত স্নেহ।

লেখক : কবি।

সর্বশেষ খবর