বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ক্রিকেটে এক অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ হলেই জিততে জিততে হেরে যাওয়ার ট্র্যাজেডি থেকে এ ম্যাচে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরাজয়ের আশঙ্কায় মনঃক্ষুণ্ণ দর্শকের সিংহভাগ মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে পরপর পাঁচজন আউট হওয়ার পরই। ভারতের ১৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ৪ উইকেটে টাইগাররা করে ১২৮ রান। এরপর মাত্র ৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের। পরাজয় যেন নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর শেষ উইকেটের মহাকাব্যিক জুটি সব আশঙ্কা আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বন্দরনগর চট্টগ্রামে শেষ উইকেটে ৫৮ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও পেসার শফিউল। মিরপুরে সেই ঘটনাকেও যেন ছাপিয়ে গেল মিরাজ-মুস্তাফিজের অবিস্মরণীয় কীর্তি। মিরাজ ৩৯ বলে অপরাজিত ৩৮ রান করে খাদের কিনারা থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে যান বিজয়ের সোপানে। ওয়ানডের পরিসংখ্যানে এ রান হয়তো তেমন কিছুই নয়! কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই ৩৮ রানের ইনিংসটাই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল। ভারতের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে হারের যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা তৈরি হয়েছিল তা-ও দূর হয়ে গেল।
এ ম্যাচে মিরাজ মহানায়ক হলে নিশ্চয়ই নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান। তবে সেটা তার বোলিংয়ের জন্য নয়। ১১ বলে অপরাজিত ১০ রানের ছোট্ট এক ইনিংস দিয়ে তিনি সমর্থকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। দারুণভাবে তিনি সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজকে। ভারতকে ১৮৬ রানে ৪১.২ ওভারেই অলআউট করে বাংলাদেশ। ১২৮ রান পর্যন্ত সন্দেহবাদীরাও ছিল বাংলাদেশের হয়ে বাজি ধরার পক্ষে। কিন্তু পরের ৫ উইকেট ৯ রানে হারালে জেতা ম্যাচে দেখা দেয় সীমাহীন অনিশ্চয়তা। সে অনিশ্চয়তা জয় করে মিরাজ ও মুস্তাফিজ যেভাবে দলকে জেতালেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হারার আগেই হেরে যাওয়ার যে লজ্জাজনক মানসিকতায় ভোগে বাংলাদেশ, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে এ জয়।