বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তাকওয়া অর্জনই জান্নাতের পথ

এম এ মান্নান

তাকওয়া অর্জনই জান্নাতের পথ

তাকওয়া অর্জনই জান্নাতের পথ। তাকওয়া আরবি শব্দ। এর ভাবার্থ হলো- খোদাভীতি, আত্মরক্ষা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর ভয়ভীতি নিয়ে তাঁর নির্দেশসমূহ পালন করা এবং নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে বেঁচে থাকার নাম হলো ‘তাকওয়া’। যে ব্যক্তির তাকওয়া যত বেশি আল্লাহর কাছে তার সম্মান ততই বেশি। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ওই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা তাকওয়ার অধিকারী।’ (সুরা হুজরাত-১৩) তাকওয়া এবং খোদাভীতি মানুষকে পরিশুদ্ধ করে, আলোকিত করে, সৎকাজে উৎসাহ জোগায় এবং পাপাচার বর্জন করার প্রেরণা সৃষ্টি করে। তাকওয়া অর্জনের ফলে একটি মানুষ অন্যায়-অনাচার, সুদ-ঘুষ বর্জন করতে পারে। গড়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে স্বীয় তার প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিতি হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে। তার আবাসস্থল হলো জান্নাত।’ সূরা-নাযিয়াত। এই আয়াতে আল্লাহতায়ালাকে ভয় করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আমার বান্দারা যারা সীমা লঙ্ঘন করেছ তোমরা আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নৈরাশ হইও না। নিশ্চয় সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তিনিই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। সূরা- যুমার। আল্লাহতায়ালার আজাবের ভয় করা ও আল্লাহতায়ালার কাছে রহমতের আশা করা দুটি গুণ একসঙ্গে অর্জন করতে হবে।

আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে আল্লাহতায়ালা থেকে দূরে সরে না গিয়ে বরং আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী হয়ে আল্লাহতায়ালার রহমতের আশাবাদী হয়েই আল্লাহতায়ালার আজাব থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। মানুষ সব সময় আল্লাহতায়ালার আজাবের ভয় ও রহমতের আশা করবে। ইমাম গাজ্জালি রা. বলেন, মানুষ যখন সুস্থ ও আর্থিকভাবে সবল থাকে তখন আত্মনির্ভরশীলতার কারণে গুনাহ করার প্রবণতা বেশি থাকে। তখন গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহতায়ালার আজাবকে বেশি ভয় করতে হবে। আল্লাহতায়ালার আজাবের ভীতি মানুষকে গোপন পাপ থেকেও রক্ষা করে থাকে। বর্ণিত আছে, হজরত ওমর রা. জনগণের অবস্থা জানার জন্য একবার ফজরের কিছুক্ষণ পূর্বে গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এক কুঁড়েঘর থেকে একটি বয়স্ক মহিলার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। হজরত ওমর রা. ব্যতিক্রম কোনো কিছু কি না সেটা জানার জন্য কান পেতে শুনছিলেন। বয়স্ক মহিলা নিজের কন্যাকে বললেন, দুধ দোহন কি শেষ হয়েছে এবং দোহনকৃত দুধের পরিমাণ কত? কন্যা উত্তর দিলেন বকরি সামান্য পরিমাণ দুধ দিয়েছে। বয়স্ক মহিলা বললেন, ক্রেতারা তো পুরো পরিমাণই চাইবে। কন্যা বললেন, বকরির থেকেই কম দুধ পাওয়া গেছে। বয়স্ক মহিলা বললেন, যাক পরিমাণ পূর্ণ করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানি মিশিয়ে দাও। কন্যা বললেন, মা আমিরুল মুমিনিন ওমর তো এই ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছেন। বয়স্ক মহিলা বললেন, আমিরুল মুমিনিন ওমর তো এ সময়ে সব কাজ দেখছেন না। কন্যা বললেন- মা আমিরুল মুমিনিন দেখছে না তবে আমিরুল মুমিনিনের আল্লাহ তো দেখছেন। এটা হলো আল্লাহতায়ালার ভয়। ইতিহাসে বর্ণিত আছে, হজরত ওমর রা. নিজের ছেলের সঙ্গে এই কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং এই বিদুষী মহিলাই ন্যায়পরায়ণতার জন্য ইতিহাসে খ্যাত হজরত ওমর ইবনে আবদুল আযিযের নানি ছিলেন। হজরত রসুলে পাক (সা.) এই জন্যই আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করতেন হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার এমন ভয় কামনা করি যে ভয় আমি এবং আমার গুনাহের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যেহেতু বান্দা দুর্বল, চেষ্টা করার পরেও গুনাহ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তখন বান্দা যাবে কোথায়? সে জন্য আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার রাগ থেকে আমার রহমতের গতিই বেশি দ্রুত। অতএব যতই গুনাহ হোক আল্লাহ রহমত থেকেই নৈরাশ হওয়া যাবে না। ভয় এবং রহমতের আশা দুটিকে ধারণ করে আল্লাহতায়ালার গোলামি করতে হবে। কথিত আছে হজরত মূসা আ. একবার সকালে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করলেন হে আল্লাহ এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুনাহগার ব্যক্তি কে? তাকে আমি দেখতে চাই। আল্লাহতায়ালা বললেন, অমুক জায়গায় বসা নাফরমান ব্যক্তিটিই সবচেয়ে গুনাহগার ব্যক্তি। পুনরায় বিকালে বললেন, হে আল্লাহ এ সময় তোমার বেশি ইবাদতকারী পছন্দনীয় ব্যক্তিটি কে? তাকে একটু দেখতে চাই। আল্লাহতায়ালা বললেন, অমুক জায়গায় বসা ব্যক্তিটিই আমার পছন্দনীয় বেশি ইবাদতকারী ব্যক্তি। হজরত মূসা আল্লাহতায়ালাকে বললেন, হে আল্লাহ এই ব্যক্তি তো সেই ব্যক্তি যাকে আপনি সকালে বেশি বড় নাফরমান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা বললেন, লোকটিকে তার স্ত্রী নাফরমান বলে ধিক্কার দিয়েছেন, লোকটা বললেন আমি গুনাগার তবে আমার আল্লাহ বহু রহমতকারী এই বলে সে তওবা শুরু করে দিয়েছেন। যেহেতু আমার রহমতের আশায় সে তওবা শুরু করে দিয়েছে সেহেতু আমি তাকে উত্তম ইবাদতকারী হিসেবে কুবল করে নিয়েছি। অতএব, মূল কথা হলো অতি রহমতের আশাবাদী হয়ে গুনাহ করা যাবে না। গুনাহ হয়ে গেলে অতি ভয়ের অজুহাতে আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নৈরাশ হওয়া যাবে না। ভয় ও রহমতের আশা নিয়ে আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের তাঁর গোলামি করার তাওফিক দান করেন।  আমিন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর