শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ইতিহাস

বখতিয়ার খলজি

জাফর খান

বখতিয়ার খলজি

বখতিয়ার খলজি ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে নদীয়া জয় করেন এবং বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। উত্তর আফগানিস্তানের গরমশিরের বাসিন্দা ইখতিয়ারউদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি ছিলেন তুর্কি সম্প্রদায়ভুক্ত। গজনিতে তিনি তাঁকে সৈনিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য মুহম্মদ ঘুরীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু খর্বাকৃতি ও বাহুদ্বয় হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। ভগ্নমনোরথ হয়ে বখতিয়ার এর পর দিল্লির দিকে অগ্রসর হন এবং কুতুবউদ্দীন আইবেকের অধীনে চাকরি প্রার্থী হন। কিন্তু সেখানেও তাঁর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো না। এরপর তিনি বদাউনে যান এবং সেখানে তিনি মালিক হিজবরউদ্দীন কর্তৃক একটি নিম্নপদে নিযুক্ত হন। অল্পকাল পরেই তিনি বদাউন পরিত্যাগ করে অযোধ্যায় উপস্থিত হন। বদাউনের শাসনকর্তা মালিক হুসামউদ্দীনের অধীনে তিনি মির্জাপুর জেলার ভাগওয়াত ও ভিউলী নামে দুটি পরগনার জায়গির প্রাপ্ত হন এবং মুসলমান রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে  সীমান্ত রক্ষীর কাজে নিয়োজিত হন। এখান থেকেই বখতিয়ার খলজি তাঁর ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টায় সফল হন। তিনি সীমান্তবর্তী ছোট ছোট হিন্দু রাজ্য আক্রমণ করে সম্পদ বৃদ্ধি করেন এবং খলজি সম্প্রদায়ের অন্যান্য লোক তাঁর দলভুক্ত হলে সৈন্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শীতকালে তিনি ঝাড়খন্ডের দুর্গম অরণ্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মণ সেনের অবকাশকালীন রাজধানী নদীয়া আক্রমণ করেন। বলা হয়ে থাকে, মাত্র ১৭ জন ঘোড় সওয়ার সৈন্য লক্ষণ সেনের সঙ্গে নগরে প্রবেশ করেছিল। নগরবাসী তাঁকে ঘোড়া ব্যবসায়ী বলে মনে করেছিল এবং সে কারণেই বখতিয়ার খলজি অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে সহজেই রাজপ্রাসাদ দখল করতে পেরেছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন নৌপথে তাঁর রাজধানী বিক্রমপুরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইতোমধ্যে বখতিয়ার খলজির মূল বাহিনীও এসে পড়েছিল। ফলে নদীয়া মুসলমানদের  অধিকারে আসে। বখতিয়ার খলজি স্বল্প সময়ের জন্য নদীয়ায় অবস্থান করেন এবং পরে তিনি গৌড়ের দিকে যাত্রা করেন। তিনি ৬০১ হিজরিতে (১২০৫ খ্রি.) বিনা বাধায় গৌড় জয় করেন এবং লখনৌতি নাম দিয়ে সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। পূর্বে গৌড়ের নাম ছিল লক্ষণাবতী। বখতিয়ার খলজির রাজ্য উত্তরে বর্তমান পূর্ণিয়া শহর থেকে দেবকোট (দিনাজপুর) জেলা হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে সোজাসুজিভাবে রংপুর শহর পর্যন্ত, দক্ষিণে পদ্মা নদী, পূর্বে তিস্তা ও করতোয়া নদী এবং পশ্চিমে তাঁর পূর্ব অধিকৃত বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বখতিয়ার খলজির জীবনের শেষ উল্লেখযোগ্য কাজ তিব্বত অভিযান। তবে এ অভিযানে তিনি সফল হননি।  

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর