শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃষি

শাইখ সিরাজ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃষি

শেষ হয়ে গেল আরও একটি বছর, ২০২২। গেল বছরটি ছিল করোনার সীমাহীন আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা থেকে অনেকটাই মুক্তির। তারপরও সারা পৃথিবীতে করোনার প্রভাব আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে খাদ্য সংকট রয়েই গেছে। চলছে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা-এসব বড় দুর্যোগে কৃষকের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করা মানেই দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখা। মনে রাখতে হবে এই কৃষকের নিরলস পরিশ্রমের কারণেই আমাদের এখনো পর্যন্ত কোনো খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হয়নি। বিপদ বা কোনো সংকটেই থেমে নেই কৃষি। নতুন নতুন উদ্যোগে উন্মোচন হচ্ছে একেকটি সম্ভাবনা। আমাদের উর্বরা মাটি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আর কর্মশক্তি মিলে এগিয়ে যেতে পারছি, বদলে দিতে পারছি কৃষিকে। কৃষি এখন রূপান্তরিত হচ্ছে বাণিজ্যিকায়নে। কৃষক ছুটছেন বাণিজ্যিক লাভের আশায়। কৃষি এখন অনেক গতিশীল একটা পেশা, বিশেষ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব যখন পড়ছে কৃষিতে। শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসে তিনটি বিপ্লবের কথা বলা হয়। ১৭৬০ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার মানুষকে এনে দেয় সহস্র বছরের গতি। ফলে উৎপাদন শিল্পে আসে আমূল পরিবর্তন। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯৬০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভবের ফলে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্প খাতে আনে অভাবনীয় পরিবর্তন। শিল্পের বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। কিন্তু যন্ত্র কি কৃষিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি? ইতিহাস বলে লাঙ্গলই ছিল কৃষির প্রথম যন্ত্র। পরে ধীরে ধীরে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে কৃষিযন্ত্র। এখন উন্নত কৃষি মানেই যন্ত্রনির্ভর কৃষি। জমি তৈরি থেকে ফসল বপন, ফসল তোলা, সংরক্ষণ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে যন্ত্রের ব্যবহার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধরন ও ধারণ। শুধু যন্ত্রই এখন শেষ কথা নয়। এই যন্ত্রের ব্যবহার স্বয়ংক্রিয় করে তোলাটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক প্রয়াস। ইউরোপের দেশগুলো খাদ্য ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু প্রযুক্তি উৎকর্ষে তারা এগিয়ে। জার্মানিতে কৃষক পর্যায়ে দেখেছি অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। আর এই জার্মানিতেই সূচিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবটি মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করছে; কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে যন্ত্র নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে। ২০১৮ সালে চীনের শিনশিং কাউন্টির একটি গ্রামে কৃষকের খোঁজ করছিলাম। মাঠের পর মাঠ ফসল ফলে আছে। কিন্তু কৃষকের দেখা নেই। একটা মাঠে দেখলাম বিশাল এক ট্রাক্টর জমি চাষ করছে। ভাবলাম, যা হোক অবশেষে পাওয়া গেল কৃষকের সন্ধান। কিন্তু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি সেই ট্রাক্টরে কোনো চালক নেই। বুঝতে পারলাম দূর থেকে রিমোটে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই যন্ত্র। কৃষিযন্ত্র উৎপাদনে চীন এগিয়েছে বহু পথ। প্রতিবছর চীনে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ কৃষিযন্ত্রের প্রদর্শনী জানান দেয়, গোটা পৃথিবী প্রতিনিয়ত প্রস্তুত হচ্ছে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। পৃথিবীতে এযাবৎকালে যন্ত্র চলেছে মানুষের স্বয়ং উপস্থিতি ও পরিচালনায়। আজকের দিনে যন্ত্রকে দেওয়া হচ্ছে নিজে চালিত হওয়ার শক্তি। সেটিই বিজ্ঞানের আধুনিকতম উৎকর্ষ। ২০১৯ সালে করোনার আগে চীনের শ্যাংডং প্রদেশের চিনদাওয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কৃষি যন্ত্রপাতি মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে আগামী দিনের কৃষিযন্ত্র নিয়ে পৃথিবীর কৃষি প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা ও গবেষণাও উঠে আসে। কৃষিযন্ত্রের মাঠ প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখেছি চীনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো এখন ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোকে মাথায় রেখে স্বয়ংক্রিয় সব কৃষিযন্ত্র উন্নয়ন করছে। সে ভ্রমণে চীনের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির বৃহৎ প্রতিষ্ঠান লোভোলের হেডকোয়ার্টার এবং যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। লোভোল হচ্ছে কৃষি, নির্মাণ ও অবকাঠামো যন্ত্রাংশ ছাড়াও ভারী ও বৃহৎ যানবাহন নির্মাণকারী হিসেবে চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এটি উচ্চতর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও চালকের আসনে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লোভোল কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। লোভোল ১২০টি দেশে তাদের আধুনিকতম কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করছে। তখন অক্টোবরের শেষদিক। এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে চিংদাও শহর থেকে রওনা করলাম। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে উয়েফাং শহরের উপকণ্ঠে এক বিস্তীর্ণ খেতে দেখলাম অসাধারণ দক্ষতায় চলছে সব কৃষিযন্ত্র। সব যন্ত্রই চালকবিহীন। বিস্ময়কর এক প্রদর্শনী। কী নেই! দানবাকার বিশাল ট্রাক্টর থেকে রোবটাকৃতির কীটনাশক ছিটানোর যন্ত্র, স্বয়ংক্রিয় ড্রোন। সেখানেই কথা হলো লোভোল হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (ওভারসিজ) সানডেমিংয়ের সঙ্গে। তিনি জানালেন, চীনের বিশাল কৃষি খামারগুলোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। শুধু চীনেই নয়, তাদের বাজার এখন পৃথিবীজুড়ে। আমার জিজ্ঞাসা ছিল, বাংলাদেশের মতো দেশের যেখানে খণ্ড খণ্ড ভূমি রয়েছে, সেখানে এত বিশাল আকারের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই, এ নিয়ে তাদের কোনো বিকল্প চিন্তা আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে খুব কৌশলী ছিলেন সানডেমিং। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য কৃষিযন্ত্র তৈরির কথা ভাবছি না। চীনের অন্য কোম্পানিগুলো ছোট যন্ত্র তৈরি করছে। তবে বাজারে বড় চাহিদা তৈরি হলে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরিতেও লেগে যাব।’ বোঝা গেল লোভোল কোম্পানি কৃষিশিল্পের যন্ত্রপাতির বাজারটা নিয়েই আগ্রহী। কারণ আগামীর কৃষি যে শিল্পের কৃষি সে সত্য তারা বেশ ভালোভাবেই বুঝেশুনে নিয়েছে। যা হোক লোভোল কোম্পানির যন্ত্র নির্মাণের বিশাল সব কারখানার কিছু অংশের কাজকর্মও দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। কোথাও তৈরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ, কোথাও চলছে অ্যাসেম্বলিং। বিরাট কর্মযজ্ঞ। বিশ্বব্যাপীই কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে পৃথিবী। কার চেয়ে কে কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে পারে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আসা যাক আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। এই মুহূর্তে যান্ত্রিকীকরণের যে তথ্যটি সবচেয়ে আগে আমাদের সামনে আসছে তা হলো, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভর্তুকিতে কৃষিযন্ত্র বিতরণের লক্ষ্যে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব উপজেলায় কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। প্রশ্ন হলো, এই বিপুল অঙ্কের প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষ, গবেষণা, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্তিকরণের জায়গাটি কোথায়। শুধু কৃষিযন্ত্র কেনা, নাকি এসব উন্নয়ন ও উৎকর্ষের জায়গাতেও কাজ করছে এই প্রকল্প। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কৃষিকে আলাদা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখেই আমাদের চলতে হবে। আগামীর কৃষি যে যান্ত্রিক ও প্রযুক্তির কৃষি সে কথা মাথায় রেখেই সরকার কাজ করছে।’ আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বড় সাফল্যটি হিসাব করা হয় জমি কর্ষণে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আবিষ্কার ভূমি কর্ষণের ক্ষেত্রে এখন থেকে শত বছর আগে এই ভূমিতে যে ট্রাক্টর এসেছিল, সেই জায়গাতে আমরা শতভাগের কাছাকাছি ব্যবহার পূর্ণ করতে পেরেছি ধরে নেওয়া হয়। যদিও দুর্গম এমন অঞ্চলও রয়েছে যেখানে এখনো ট্রাক্টর পৌঁছেনি। দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিত্র হলো জমি চাষে ৯৫ ভাগ, সেচব্যবস্থায় ৯৫, ফসল তোলা বা হারভেস্টে ১.৫, ধান মাড়াইয়ে ৯৫, রোপণে দশমিক ৫ ভাগেরও কম। মূল সংকটের জায়গাটি এখানেই। ফসল উৎপাদন-পূর্ববর্তী যান্ত্রিকীকরণে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, উৎপাদন ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণে পিছিয়ে থাকায় আমাদের বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।

আমাদের দেশের কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতা দেখতে গত ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম সিলেট শহরের আলমপুর বিসিক শিল্পনগরীতে। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আলিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে। ১৯৬৫ সালে ছোট এক ওয়ার্কশপ থেকে যাত্রা শুরু করে এই কোম্পানি এখন দেশের কৃষিক্ষেত্রের বর্তমান ও আগামীর চাহিদা বিবেচনা করে কৃষিযন্ত্র প্রস্তুত করছে। এখন গোটা পৃথিবীই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে আমাদের দেশেও শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন কৃষিতে। কৃষিযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিকতম প্রযুক্তি সংযুক্তির বিষয়ে কতদূর অগ্রসর হচ্ছে আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলো, সে বিষয়েও কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলিমুল আহসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, কৃষি আর আগের মতো থাকছে না। যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষই এই পরিবর্তনের জায়গাটি দখল করছে। এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সেটি গভীরভাবেই বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা পথ হাঁটলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কিংবা স্মার্ট কৃষির পথে আমাদের কোনোরকম অগ্রগতি নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তিকে দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থে। এর জন্য সুদূরপ্রসারী গবেষণা, মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে চীন। এখানে সব মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিযন্ত্রের বিশাল একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা কৃষি যন্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে না যেতে পারলে শুধু ক্রেতা হিসেবেই আধুনিক প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের প্রশ্নে সবার সমান অধিকার রয়েছে। এই অধিকার নিয়ে আমাদেরও শামিল হওয়া দরকার অত্যাধুনিক স্মার্ট কৃষির মিশনে। নতুন বছর হোক বাংলাদেশের প্রযুক্তি কৃষির প্রসারের। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

[email protected]

সর্বশেষ খবর