শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি

মো. আমিনুল ইসলাম

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি

আমাদের সবাইকে মরতে হবে। মৃত্যু অনিবার্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মউত, অর্থাৎ প্রতিটি জীবনকে মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)। কিন্তু মনে রাখতে হবে মরণই শেষ নয়। দুনিয়াতে অনেকেই দুঃখ-কষ্ট করে জীবন কাটায়, তারা মনে করতে পারে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই হয়তো সব দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটে। কিন্তু না। মৃত্যুর পর রয়েছে এক অনন্ত জীবন। যে জীবনের কোনো শেষ নেই। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের এক জীবন শেষে আরেক জীবনের সূচনা হয়। আর সে জগৎ হলো স্থায়ী। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো জাতি তার ধ্বংস যেমন ত্বরান্বিত করতে পারে না তেমনি তারা তা বিলম্বিতও করতে পারে না।’ (সুরা হিজর, আয়াত ৫)। ‘কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরবে না, আল্লাহর কাছে সে জন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)। এই মৃত্যুর পর আমরা পরবর্তী জীবনের জন্য নিজেকে কতটুকু প্রস্তুত করেছি বা করছি তা কি আমরা একটু চিন্তা করে দেখেছি? কী নিয়ে আমরা আল্লাহর দরবারে হাজির হব। তিনিই তো বিচার দিবসের মালিক। আমরা যদি আখেরাতে বিশ্বাসী হই তাহলে অবশ্যই আমাদের মৃত্যু-পরবর্তী আখেরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে আখেরাতের জীবনে অনুশোচনা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

আখেরাতের জীবনের প্রস্তুতি কী? এই প্রস্তুতি হলো আল্লাহর প্রতি গভীর ইমান। তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাস করা। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই রিজিকদাতা, তিনি আপদে-বিপদে সাহায্যকারী। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তিনিই সৃষ্টিকর্তা। যিনি এই নির্ভেজাল সত্যকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন তিনিই ইমানদার। তিনিই প্রকৃত মুসলমান। তার অন্তরে সব সময় যে ভয় কাজ করে তা হলো আমি যে কোনো সময়ে মৃত্যুর দুয়ারে হাজির হব সেই কথা চিন্তা করে সব সময় বিনয়ের সঙ্গে (খুশু ও খুজু) সালাত আদায় করা। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করা। রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। আল্লাহর ভয়ে তার অন্তর যেন কাঁপে। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাজাত পেতে অশ্রুসজল চোখে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে। অর্থাৎ তার মনে এই বিশ্বাস থাকতে হবে, তাকে যে কোনো সময় এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাকে নফসের তাড়না থেকে সর্বদা মুক্ত থাকতে হবে। শয়তানের ওসওয়াসা থেকে নিজেকে সংযত রেখে জীবন পরিচালনা করতে হবে। তাকে সম্পদের মোহ ত্যাগ করে গরিব-দুঃখী অনাহারিদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতে হবে। ঠিকমতো জাকাত আদায় করতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। আখেরাতের পুঁজি অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশ থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে হবে। একজন বয়স্ক মানুষকে দেখে চিন্তা করতে হবে উনিও এক দিন সুস্থ ছিলেন, আমার মতো কর্মক্ষম ছিলেন, দৌড়াতে পারতেন, কিন্তু আজ তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করছেন কিংবা হুইলচেয়ারে বসে এদিক-ওদিক যাচ্ছেন। আজ তিনি ইচ্ছা করলেই সবকিছু খেতে পারেন না। দাঁত নেই। চিবুতে পারেন না। তাকে আজ চলাচলের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং আমাদের সবাইকে এখনই সাবধান হতে হবে। পরহেজগার বন্ধু আত্মীয়স্বজনের সাহচর্যে সময় কাটানো আমাদের সবার উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে মৃত্যু আমাকে যে কোনো মুহূর্তে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেবে। পরবর্তী অনন্ত জীবনে আমাকে পাড়ি দিতে হবে। সুতরাং সেই অনন্ত জীবনের জন্য আমাকে এই দুনিয়াতে পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে দুনিয়ার একফোঁটা সম্পদও আমাদের সঙ্গে কবরে যাবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর