শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কল্যাণের পথে ডাক দেয় তাবলিগ

এম এ মান্নান

কল্যাণের পথে ডাক দেয় তাবলিগ

‘তাবলিগ’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘পৌঁছানো’।

ইসলামের শাশ্বত বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে তাবলিগ বলে। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির পর পৃথিবীতে লক্ষাধিক পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। তাঁদের সবাই আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই এ তত্ত্বের তাবলিগ করেছেন। সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করে শান্তি ও কল্যাণের ঐশীতত্ত্ব প্রচার করেছেন। বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের মর্মবাণী; যার ফলে আইয়ামে জাহেলিয়ার অবসান ঘটেছিল। বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। অতএব আমার একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ তাঁর এ নির্দেশ পালনে নিবেদিতপ্রাণ তাবলিগ জামাত। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশিত পথে জীবন গড়ার দাওয়াত দেওয়াকে কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে এ জামাত। দাওয়াত শব্দটি আরবি, এর আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা। ইসলামে দীনহারা মানুষকে দীনের দিকে বা ইসলামের দিকে আসার আহ্বান জানানোকে দাওয়াত বলে। বস্তুত আত্মবিস্তৃত মানব জাতিকে এক আল্লাহর পথে আহ্বান করাই ছিল নবী-রসুলদের প্রধানতম দায়িত্ব। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কোরআন মজিদে ‘দায়ি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আমি আপনাকে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪৬) বিশ্ব ইজতেমা দাওয়াতি কার্যক্রমের মহামিলন। আল্লাহর মনোনীত পথে মানব জাতিকে পরিচালিত করার জন্য দুনিয়ার প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) থেকে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবীর আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে। তারা আল্লাহ নির্দেশিত সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের কাফেলায় মানুষকে সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সর্বশেষ নবীর অনুসারীদের ওপর। মহানবীর বিদায়ের পর থেকে পর্যায়ক্রমে এ দায়িত্ব খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবেতাবেইন, সলফে সালেহিন, আলেম-ওলামা ও পীর মাশায়েখরা পালন করে আসছেন। দিল্লির মেওয়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের মুরব্বি মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ১৯২৬ সালে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু করেন, যার সম্প্রসারিত রূপ আজকের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা। এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সৎ কাজ করা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখাই এ দাওয়াতের মুখ্য উদ্দেশ্য। দাওয়াতি কাজের এ দায়িত্বটি তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা বেছে নিয়েছিলেন কোরআন-হাদিসের আলোকে। আল্লাহ কোরআনে আরও বলেন, ‘আমি চাই তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক, যারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করবে, ভালো কাজের আহ্বান করবে, আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ওই দলটাই হলো সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৪)। রসুল (সা.)ও দাওয়াতি কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ এবং রসুলের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে আনা, মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে তাবলিগ মিশন। জাগতিক লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে যথার্থ মানবকল্যাণের মিশনকে এগিয়ে নিতে চান এই কাফেলার সদস্যরা। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই এ বোধকে উজ্জ্বল করেছে আল্লাহপ্রেমীদের এ দলটি। অভাবগ্রস্ত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশেও তারা অবস্থান নিয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হুকুম অনুযায়ী। সোজা কথায় ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য মানুষকে সত্য ও সরল পথে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব পালন করছে তাবলিগ জামাত। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার যে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন তা আজ বিশ্বজুড়ে মোমিনদের মহা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের জানমাল মহান স্রষ্টার প্রতি উৎসর্গ করার তাগিদ সৃষ্টি করেছে তাবলিগ জামাতের শিক্ষা। সুরা আস সাফের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহপ্রেমীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের কি এমন একটি ব্যবসার সন্ধান দেব যা তোমাদের কঠোর আজাব থেকে রক্ষা করবে? তা হলো আল্লাহর ও তাঁর রসুলের ওপর ইমান আনবে, আল্লাহর রাস্তায় জানমাল দিয়ে মেহনত করবে।’ তাবলিগ জামাতের নিবেদিতপ্রাণ আল্লাহপ্রেমীরা সুরা আস সাফের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহর পথে মেহনত করাকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। হানাহানি ও পঙ্কিলতামুক্ত শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারা একে অন্যের প্রতি মহব্বতের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশিত পথ আঁকড়ে ধরতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছে। বস্তুগত স্বার্থ ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে। বিশ্বজুড়েই যার প্রয়োজন আজ সবচেয়ে বেশি।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সর্বশেষ খবর