বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাইক্রোপ্লাস্টিকের হুমকি

জনস্বার্থেই সচেতন হতে হবে

বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ শুধু নয়, জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। দেশের প্রায় সব নদ-নদীই এখন মাইক্রোপ্লাস্টিকের উন্মত্ত শিকার। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের তিনটি প্রধান নদীর পানিতে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য এ তিন নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন প্রজাতির শেলফিশ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকে। ৫ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, যা মাছ বা শেলফিশ সহজেই গিলে ফেলতে পারে। মাছের গিলে খাওয়া ওইসব প্লাস্টিকের কণা একপর্যায়ে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী এবং এর আশপাশের নদনদীগুলো। রাজধানীর চার নদনদীতে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয় অহরহ। মাইক্রোপ্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলীকে পরিণত করেছে চরম মাত্রার দূষিত নদীতে। এ নদীতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয়। এর পরই রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুলনা মহানগরী সংলগ্ন রূপসা নদী, যেখানে ফেলা হয় প্রায় ৩১.৭ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য। অন্তত ৭ মিটার উঁচু পলিথিনের বিশাল আস্তরের কারণে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ড্রেজিং প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখেই থামতে হয়েছে। বিজ্ঞানীদের অভিমত, মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মাছ-মানুষ সবারই ক্ষতি করছে। মাছের পেট কাটলে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সে মাছ মানুষ খাচ্ছে। নদনদীগুলোয় টনে টনে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষের তৈরি এ ভয়াবহ বিপদের ফলও ভোগ করছে মানুষই। এ বিপদ থেকে বাঁচতে যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে। দেশের নীতিনির্ধারকদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে করণীয় ঠিক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে এখনই। মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থেই নদীনালা-জলাশয় যাতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভাগাড় না হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা।

সর্বশেষ খবর