সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিনি সীমানার বাইরে ভাবতে পারেন

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

তিনি সীমানার বাইরে ভাবতে পারেন

বলছি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। তিনি ৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং আগের এক মেয়াদসহ এবার টানা তিন মেয়াদ নিয়ে চারবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এত বড় সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি আপন পরিচয়টি হলো তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। রক্ত কথা বলে, এ সত্যটি  গত ৪২ বছরের রাজনীতিতে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। রাষ্ট্র-রাজনীতিতে গতানুগতিকতা, গড্ডলিকা প্রবাহ দেশ ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। কঠিন জাতীয় সংকট ও প্রবল দ্বন্দ্বমূলক ইস্যুতে গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে যিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনিই ইতিহাসে অমর হন।  বঙ্গবন্ধু সেটা পেরেছিলেন বলেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই বঙ্গবন্ধু শুধু ইতিহাসে অমর নন, তিনি বাঙালি, বাংলা, বাংলাদেশের সর্বত্র বিরাজমান থেকে আজও বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার বাস্তব বহির্প্রকাশ আমরা শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণে আবশ্যকীয়, কিন্তু আমির-আমত্য, সভাসদ, পন্ডিত ব্যক্তিবর্গসহ পার্শ্ব খেলোয়াড়রা যা ভাবতে পারেন না এমন চিন্তা যখন কোনো ব্যক্তি বা নেতৃত্ব করতে পারেন তখন সেটিকে বলা হয়- আউট অব দ্য বক্স বা সীমানার বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু   বাঙালি জাতি নয়, বিশ্ব অঙ্গনে অনন্য এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর সীমানার বাইরে চিন্তা করার যে দূরদর্শিতা তার সবচেয়ে বড় ও প্রথম প্রতিফলন ৬ দফা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে ঘটে ১৯৬৬ সালে। তখন বাঙালির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, বুদ্ধিজীবী ছিলেন। কিন্তু কেউ ৬ দফার সম্ভাবনা সম্পর্কে ভাবতে পারা তো দূরের কথা এটি প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে সবাই সে সময়ের শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। নিজ দল আওয়ামী লীগের সিনিয়র  নেতারা, এমনকি তখন দলের সভাপতি ৬ দফা দিয়ে কিছু হবে না, বরং এটা সবকিছু নষ্ট করে দেবে বলে দল ত্যাগ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অটল থেকেছেন, নতুন করে দলকে পুনর্গঠন করেছেন এবং ৬ দফা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। ৬ দফার পথ ধরেই লৌহমানব আইয়ুব খানের পতন, ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর বিছানো জালে ধরা পড়েছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্ব মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখন এটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠিত সত্য, ৬ দফাই ছিল আমাদের    স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম ও মৌলিক ম্যাগনাকার্টা। তারপর সত্তরের নির্বাচনের প্রাক্কালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাত-পা বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করায় মওলানা ভাসানীসহ অনেক বাঙালি নেতা ও রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে অটল থাকায় স্বাধীনতা অর্জনের আরেকটি ধাপ আমরা পেরিয়ে যেতে  সক্ষম হই।

সত্তরের নির্বাচন না হলে এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। সত্তরের নির্বাচনের পথ ধরেই এলো একাত্তরের ৭ মার্চ। সেদিন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রে ও তীব্র আকাক্সক্ষায় উদ্বুদ্ধ লাখ লাখ মানুষ সামনে লাঠি হাতে, সবাই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে চায়। কিন্তু পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কামান ও যুদ্ধবিমান প্রস্তুত, রাজনৈতিক সমাধানের পথে আলোচনা তখনো চলছে। কী করবেন লিডার। আবারও সেই কঠিন প্রশ্ন; ‘টু বি অর নট টু বি’। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ এমনভাবে শেষ করলেন, যার মধ্য দিয়ে সাপ মরবে লাঠি ভাঙবে না দর্শনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে গেল। অভাবনীয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গবন্ধুর অনন্য চিন্তার অমর কীর্তি বাহাত্তরের সংবিধান, বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শের বিন্যাস এবং তার রক্ষাকবচ হিসেবে আলাদাভাবে দুটি অনুচ্ছেদ- ১২ ও ৩৮ যেভাবে সন্নিবেশিত হয় তার উদাহরণও বিরল। বলছিলাম রক্ত কথা বলে। সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে পদার্পণের ১৫ বছর ও পঁচাত্তরের জাতীয় ট্র্যাজেডির ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। দুই সামরিক শাসকের ১৫ বছর, সামরিক শাসক জিয়ার উত্তরসূরি বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ১৯৯১ সালে সরকার গঠন ও পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বলতে যা বুঝায় তার ওপর দিয়ে যে সুনামি বয়ে যায় এবং রাষ্ট্র, রাজনীতিসহ কয়েকটি নতুন প্রজন্মের মনোজগতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধবিরোধী যে কুমন্ত্রণা বাসা বাঁধে, একাত্তরে প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণহীন সমর্থনের কথা মানুষের মন থেকে মুছে ফেলে যেভাবে ভারত-বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি হয় সেই প্রেক্ষাপটের ওপর দাঁড়িয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সরকার গঠনের মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২১ বছরের ভয়াবহ ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে তিনিও বাবার মতো আউট অব দ্য বক্স বা সীমানার বাইরে চিন্তা করতে পারেন। পৃথিবীর বহু দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং তার মীমাংসার ইতিহাস আমরা অনেকেই পড়েছি। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ অন্য কোনো রাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ বা পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়নি। অথচ শান্তি বাহিনীর রাজনৈতিক পক্ষ জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে এর আগে এরশাদ সরকারের সময় ৬ দফা এবং ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার কর্তৃক গঠিত সংসদীয় কমিটি ১৩ বার বৈঠক ও আলোচনা করেও কোনো ফল আনতে পারেনি। এখানে স্মরণযোগ্য, বিএনপির ওই সংসদীয় কমিটিতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় প্রতিনিধি ছিলেন এবং তারা কমিটির কার্যক্রমে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ একই বিষয়ে যখন সংসদীয় কমিটি করল তখন প্রথমদিকে বিএনপির প্রতিনিধিরা দু-একটিতে উপস্থিত থাকার পর সব সভার কার্যক্রম বর্জন এবং ঘোষণা দেয় শান্তিচুক্তি হলে ফেনী থেকে পুরো বৃহত্তর চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হয়ে যাবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বললেন, ফেনীর পর সব ভারত হয়ে গেছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার জন্য স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির ফলে শুধু বাংলাদেশের ভ্রাতৃঘাতী রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে তা নয়, পাহাড়ি মানুষ মূল ভূখন্ডের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সমান অধিকার পেয়েছেন এবং নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছেন। তাও শুধু নয়, এ চুক্তির ফলে সমগ্র উপমহাদেশের ১৮০ কোটি মানুষ পারমাণবিক যুদ্ধের বড় এক ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসহ সব ধরনের সমর্থন দিয়েছে।

বিএনপির সদস্যরা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন, ভারতের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা স্বাধীনতাকামী এবং বাংলাদেশের উচিত তাদের সমর্থন দেওয়া। সংগত কারণে ভারতও এক সময়ে টিট ফর ট্যাট নীতিতে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি না হলে সবদিকের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বাড়াবাড়িতে ভারত-পাকিস্তান হয়তো এতদিনে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে উপমহাদেশকে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিতে ফেলত। শান্তিচুক্তির অব্যবহিত পর ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে ক্ষমতায় বসে সেবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে কত বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল তার নিদর্শন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, যেটি ধরা পড়ে ২০০৪ সালে। ২০০৯ সালে নতুন সরকার নিয়ে দ্বিতীয়বার যাত্রা শুরুর মাত্র ৫১ দিনের মাথায় পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশাল কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়। আবার পরীক্ষা। কিন্তু ওই বাবার রক্ত; দল, দলের বাইরের এবং দেশ-বিদেশের অনেকের অনেক পরামর্শ হয়তো শুনেছেন। কিন্তু একান্ত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তিবলে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন বলেই সেদিন আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং দেশ এক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। এবার আসুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথায়। দেশের বৃহত্তর মানুষ বিচার চায়।

কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটা প্রতিরোধ করার চেষ্টায় দেশব্যাপী শুধু জ্বালাও-পোড়াও নয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায়। কয়েকজনকে হত্যা করে। একই সঙ্গে সশস্ত্র জঙ্গিদের মাঠে নামিয়ে দেয়। উদার মতাদর্শের মানুষ এবং খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্ম যাজকদের ওপর জঙ্গিরা পরিকল্পিত আক্রমণ চালায় এবং হত্যাকান্ড ঘটাতে থাকে, যাতে ভারতসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সরকার কঠিন দ্বন্দ্বের মুখোমুখি। ইয়েস অর নো, শেখ হাসিনাকেই বলতে হবে। এত বড় কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে তিনি বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আবার এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তিনি। তখন জামায়াত, বিএনপি ও কথিত নিরপেক্ষ গোষ্ঠী শুধু নয়, ছদ্মবেশী, সুযোগসন্ধানী, যারা পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তাদের বড় এক অংশের অতি উল্লাসী বিএনপিপ্রীতির ভাব দেখে অনেকের তখন মনে হয়েছে আবার তাহলে বোধ হয় জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী মিডিয়ার লোকজনও যেভাবে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার একাডেমিক ও বুদ্ধিজীবীদের সমাদর বাড়িয়ে দিলেন, তা দেখে তখন হতভম্ব হয়ে গেছি। পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন, উপ-সম্পাদকীয় লেখা এবং টেলিভিশনের টকশোর জন্য বিএনপির লোকজনকে দৃষ্টিকটু আদর-সমাদর করতে থাকে কিছু মিডিয়া, যারা এখন আবার আওয়ামী লীগের অনেক বড় স্নেহধন্য হয়ে আছেন। কিন্তু সেদিন সেই দুঃসময়ে কেউ যেটা ভাবতে পারেনি, শেখ হাসিনা সেটা করলেন। সরাসরি টেলিফোন করলেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। সব রকমের ছাড় দেওয়ার অঙ্গীকারসহ গণভবনে চায়ের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু টেলিফোনেই সেদিন বেগম খালেদা জিয়া ঔদ্ধত্য আচরণ করলেন।

শেখ হাসিনা আবার জিতে গেলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রসঙ্গে একটু না বললে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এত বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য প্রায় অপরিহার্য। উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার পথে এবং আঞ্চলিক কানেকটিভিটি নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে ওঠে অপরিহার্য এক প্রকল্প। পদ্মা সেতু যাতে না হয়, তার জন্য দেশের একশ্রেণির সুশীল বিশেষজ্ঞ কী করছেন তার পুনরোল্লেখ এখন আর প্রয়োজন নেই, সবাই তা জানেন। শুধু এতটুকু বলি পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটা কানাডার ফেডারেল আদালতে প্রমাণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের পর ওই একই সুশীল বিশেষজ্ঞরা চিৎকার করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির সক্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব বিপদ বার্তাকে উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সুসম্পন্ন করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যা ঘটেছে তার একটা ভালো দিকও আছে। ওই সুশীল বিশেষজ্ঞরা দেশের স্বার্থে নয়, হীন কোনো উদ্দেশ্যে নিজের শিক্ষা ও অবস্থানকে কাজে লাগাতে চায় তা দেশের মানুষের কাছে একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। সুতরাং আগামীতে সবাই নিশ্চয় সতর্ক থাকবেন। কেউ যেটা ভাবতে পারেন না, লিডার সেটা ভাবতে পারেন। শুধু পদে বসলে হয় না, লিডারশিপ কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। যারা পারেন তারা লিডার থেকে রাষ্ট্রনায়ক হন।  শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের প্রথম পর্বের নায়ক ইন্দ্র চরিত্র বর্ণনায় শ্রীকান্তের জবানীতে শরৎচন্দ্র বলেছেন, ‘পর দুঃখে ব্যথা পাইয়া চোখের জল ফেলা সহজ নহে, তাহা অস্বীকার করি না; কিন্তু তাই বলিয়া সেই দুঃখের মধ্যে নিজের দুই হাত বাড়াইয়া আপনাকে জড়িত করিতে যাওয়া- সে ঢের বেশি কঠিন কাজ।’   এই ঢের বেশি কঠিন কাজ বঙ্গবন্ধু যেমন করেছেন, তেমনি করে চলেছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে সবাইকে পেরিয়ে সীমানার বাইরে ভাবতে পারেন তার সর্বশেষ উদাহরণ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর