মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেসি ম্যারাডোনা ও চে’র আর্জেন্টিনা

সুমন পালিত

মেসি ম্যারাডোনা ও চে’র আর্জেন্টিনা

ফুটবলও কখনো কখনো হতে পারে কূটনীতির হাতিয়ার। ফুটবলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরোর বাংলাদেশ সফর সে সত্যই তুলে ধরেছে। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার মানুষ জেনে যায় বাংলাদেশের মানুষের ফুটবল প্রেমের কথা। আর্জেন্টিনার প্রতি তাদের ভালোবাসার কথকতা। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রতি বছরই ওড়ে আর্জেন্টিনার কয়েক লাখ পতাকা। শিশু থেকে বৃদ্ধ লাখ লাখ মানুষের গায়ে শোভা পায় আর্জেন্টিনার জার্সি। বাংলাদেশের মানুষের এমন ভালোবাসা আর্জেন্টিনার মানুষকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। ক্রিকেট সম্পর্কে অনুৎসাহী হলেও আর্জেন্টিনার মিডিয়ায় স্থান পায় ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা। এমনকি বাংলাদেশের পতাকাও পরিচিত এখন আর্জেন্টেনীয়দের কাছে। ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসি জাদুতে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছেই আর্জেন্টিনা একটি পরিচিত নাম। সর্বকালের সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের কালামানিক পেলের মতে, ম্যারাডোনার চেয়ে ফুটবল প্রতিভার দিক থেকে মেসিই এগিয়ে। মানুষ হিসেবেও অনেক গোছানো। কিন্তু পাঁচ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে প্রথম চারটিতে মেসিকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। প্রতিবারই তিনি বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিয়েছেন দেশবাসীকে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে। কিন্তু ফুটবলের রাজপুত্রের কাছে স্বপ্নের সোনালি ট্রফি ধরা পড়েছে তার ফুটবল জীবনের পড়ন্ত বেলায়। বিশ্ববাসী কাতার বিশ্বকাপে দেখল ৩৫ বছর বয়সী মেসি খেললেন এবং পুরো দলকে খেলালেন। প্রথম খেলায় সৌদি আরবের কাছে হেরে কোটি কোটি সমর্থকের মনে যে হতাশার সৃষ্টি করেছিলেন, তা পুষিয়ে দিয়েছেন ফাইনালে বীরের মতো বুক চিতিয়ে লড়াই করে। ফুটবলের আরেক রাজপুত্র এমবাপ্পের ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার জন্য ছিনিয়ে এনেছেন শিরোপা। আর্জেন্টিনা নামের দেশটিকে বিশ্ববাসী চেনে তিনজন স্বাপ্নিক মানুষের জন্য। এদের একজন চে গুয়েভারা। অন্য দুজন দিয়েগো ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসি। আজ থেকে ৬০ বছর আগে এক তরুণ ডাক্তারের কারণে দুনিয়ার দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার নাম। এই তরুণ ডাক্তার শুধু তার দেশ নয়, পুরো ল্যাতিন আমেরিকার মানুষকে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের শোষণ থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। বিশ্ববাসীকে শোষণমুক্ত করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। চে গুয়েভারার দেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন ফুটবলের কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। যিনি আর্জেন্টিনাবাসীকে ফুটবলে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। শুধু স্বপ্ন দেখানো নয়, ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপের ট্রফি তিনি উপহার দেন তার প্রিয় দেশবাসীকে। রাজনীতির ধারেকাছে না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন চে গুয়েভারারও ভক্ত। চে’র প্রতি ভালোবাসার কারণেই কিউবান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনার গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।

দুই. ষাট ও সত্তর দশক ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তির দশক। ষাটের দশকের শুরুতেই ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে সফল হয় কিউবান বিপ্লব। এ বিপ্লবে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন চে গুয়েভারা। তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার অধিবাসী। বিশ্ববিপ্লবে বিশ্বাসী ছিলেন এই তরুণ চিকিৎসক। বিপ্লবের ডাকে তিনি বেছে নেন কঠিন জীবন। বিদেশি তাঁবেদার শাসক বাতিস্তার বিরুদ্ধে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় যে বিপ্লব হয়, তাতে ছিল চে গুয়েভারার অসামান্য ভূমিকা। ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি কিউবায় গঠিত হয় বিপ্লবী সরকার। ফিদেল কাস্ত্রো চে গুয়েভারাকে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেন। কিউবার সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের সহ-অধিনায়ক হিসেবেই তাঁকে এ মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিখাদ বিপ্লবী চে গুয়েভারাকে কিউবান বিপ্লব কিংবা মন্ত্রিত্ব তৃপ্ত করতে পারেনি। তিনি ফিদেল কাস্ত্রোকে ছেড়ে চলে যান লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ এবং আফ্রিকার নিপীড়ত মানুষের ডাকে। কিউবা ছেড়ে যাওয়ার আগে চে গুয়েভারা সহযোদ্ধা ফিদেল কাস্ত্রোকে যে চিঠি লেখেন তাতে এই মহান বিপ্লবীর মানসিকতা অনুধাবন করা যায়। তিনি কিউবার বিপ্লব রক্ষা ও দেশগড়ার সংগ্রামে ফিদেলের সাফল্য কামনা করেন। তাঁর সাহচর্য ও ভালোবাসার জন্য প্রকাশ করেন কৃতজ্ঞতা। লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের যেখানেই সাম্রাজ্যবাদের ছোবলে মানুষ শোষিত ও নির্যাতিত, সেখানেই তাদের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ পায় সেই চিঠিতে। এই অসামান্য বিপ্লবী তাঁর স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে রেখে যান প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো তথা কিউবার জনগণের জিম্মায়।

লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং আফ্রিকার কঙ্গোয় বিপ্লবী মিশন শেষে চে গুয়েভারা বলিভিয়ার বিপ্লবীদের ডাকে সাড়া দেন। শুরু করেন গেরিলা যুদ্ধ। চে গুয়েভারার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলিভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। ওয়াশিংটনের তাঁবেদারদের জন্য যা সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে। অপপ্রচারে মেতে ওঠে তারা। বলিভিয়ায় ১৯৬৭ সালে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গ্রেফতার হন চে গুয়েভারা। তাঁকে বিনা বিচারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। চে গুয়েভারার মৃত্যু সারা দুনিয়ার বিপ্লবীদের শোকাহত করে। তবে এ শোক অচিরেই শক্তিতে পরিণত হয়। একজন মহান আন্তর্জাতিকতাবাদী এবং খাঁটি বিপ্লবী হিসেবে চে’র অবদান ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে। ১৯৭০ সালে আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। সে সময় প্রথম শুনি চে গুয়েভারার কথা। কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির ইংরেজি মুখপাত্র গ্রানামায় চে গুয়েভারা সম্পর্কে ফিদেল কাস্ত্রোর লেখা পড়ে আগ্রহ জন্মে এই বিপ্লবীর প্রতি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম বাংলা থেকে প্রকাশিত চে গুয়েভারা সম্পর্কে লেখা একটি বই হাতে আসে। আমাদের যুববেলায় চে গুয়েভারা ছিলেন সারা বিশ্বের যুবসমাজের কাছে স্বপ্নপুরুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও ছিলাম এই বিপ্লবীর দ্বারা প্রভাবিত। ১৯৭২ সালে তাঁকে নিয়ে লেখা আমার একটি কবিতার কথা উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। কবিতাটি হলো- শ্মশ্রুর বনে ঢাকা সেই প্রিয় মুখ/হাভানা চুরুট শোভিত সেই প্রিয় ছবি/আমরা আর কোথাও দেখব না।/খবরের কাগজ অথবা বিবিসির ইথারে/শুনব না কল্পকথার বিনুনি/তবু তিনি বেঁচে থাকবেন/আমাদের মাঝে;/হƒদয় কার্নিশে পেরেকবিদ্ধ আত্মজন/-কমরেড চে।

১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ায় গ্রেফতারের পর মার্কিন তাঁবেদার সেনাবাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন চে গুয়েভারা। সে দেশের প্রচারমাধ্যমে তাঁকে অন্তর্ঘাতক, বিদেশি চর ইত্যাদি নানান অভিধায় চিহ্নিত করা হয়। বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় সে দেশের মানুষের মন। চে ছিলেন মনেপ্রাণে একজন সমাজতন্ত্রী, দেবত্ববাদের বিরোধী। কিন্তু কালের বিবর্তনে চে গুয়েভারা বলিভিয়াসহ পুরো লাতিন আমেরিকায় এখন এক ‘দেবতার’ নাম। বলিভিয়ার জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম লা হিগুয়েরার কৃষক সেদিন চে গুয়েভারার লাশ দেখে আঁতকে ওঠেন তাকে যিশু ভেবে। যিশুর মতোই চেহারা ছিল এই বিপ্লবীর। তাঁর শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখ লাখ লাখ বিপ্লবীর কাছে যেমন অনুপ্রেরণা জোগায়, তেমন তা আবেগ সৃষ্টি করে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনেও।

চে গুয়েভারা ছিলেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত একজন নিখাদ বিপ্লবী। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন হাঁপানি রোগী। সারাক্ষণ এ রোগ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে ডেকে নিয়ে গেছে বিপ্লবী জীবনে। গভীর বনজঙ্গল, পাহাড় আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অর্ধাহার-অনাহারে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। রাতের পর রাত। সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন ত্যাগ করে বেছে নিয়েছেন অনিশ্চিত জীবন।

সাম্রাজ্যবাদ এবং শোষক শ্রেণির প্রতি কঠোর হলেও সাধারণ মানুষ তো বটেই স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের প্রতি ছিল নিখাদ ভালোবাসা। ২০০৩ সালের নভেম্বরে রুশ-কিউবা মৈত্রী সমিতির আমন্ত্রণে চে গুয়েভারার মেয়ে আলেইদা গুয়েভারা মস্কো সফর করেন। রুশ পত্রিকা ইজভেস্তিয়ায় আলেইদার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেখানে তিনি চে গুয়েভারার কোমল হƒদয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বলেন, বাবা যখন মারা যান তখন তাঁর বয়স ছিল ছয়। তিনি বাবা হিসেবে, স্বামী হিসেবে, সন্তান হিসেবে ছিলেন কোমল হƒদয়ের মানুষ। চে গুয়েভারা যখন বলিভিয়ার গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিতে যান তখন তাঁর অনুভূতিতে মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল। স্ত্রী, শিশুসন্তান ও বাবা-মার কাছে তিনি যে চিঠি লিখে যান তাতে সে আভাসই পাওয়া যায়। শিশুকন্যা আলেইদার জন্য তিনি যে চিঠি রেখে যান তাতে লেখা ছিল- ‘আমার ছোট্ট আলেইদা! তুমি অবশ্যই বড় হয়ে উঠবে এবং মাকে বাড়ির সব কাজে সাহায্য করবে। দাদিকেও বাড়ির কাজে সহায়তা করবে। স্কুলে কারওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না’ ইত্যাদি। ছেলে এরনেস্তো গুয়েভারাকে লেখেন- ‘তুমি বেড়ে ওঠো! বেড়ে ওঠার পরও যদি যুদ্ধ চলতে থাকে তবে আমি আর তুমি একসঙ্গে যুদ্ধ করব। কিন্তু যুদ্ধ যদি থেমে যায় তবে আমি তোমাকে নিয়ে চাঁদে ছুটি কাটাতে যাব।’

চে গুয়েভারা কতটা স্বাপ্নিক ছিলেন তাঁর চিঠি সে প্রমাণ রেখেছে। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যখন তিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন, তখনও তিনি ছেলের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছেন, অবসর পেলে তাকে নিয়ে চাঁদে যাবেন। এই মহান বিপ্লবী তাঁর স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মার জন্য মৃত্যুর সময় কয়েকটি চিঠি ছাড়া কিছু রেখে যেতে পারেননি। মেয়ে আলেইদা যখন বড় হয়ে ওঠেন, তখন তাঁকে লেখা বাবার চিঠিটা বেশ পীড়া দিত। তিনি ভাবতেন বাবা তাঁকে রান্নাঘরে বন্দি রাখতে চেয়েছেন আর ভাইকে নিয়ে চাঁদে বেড়াবার কথা ভেবেছেন। তাঁর ধারণা ছিল বাবা হয়তো তাঁর চেয়ে ভাইটিকে বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু কিউবার মন্ত্রিসভা কক্ষে গিয়ে সেই ভুল ভাঙে। ইজভেস্তিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আলেইদা বলেন, মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেটে যেখানে বাবা বসতেন, সেখানে টেবিলের কাচের নিচে চারটি ছবি আবিষ্কার করি। তার তিনটিতেই ছিল আমার সঙ্গে বাবার ছবি। আলেইদা তাঁর বাবার কথা মনে করেই চিকিৎসা পেশা বেছে নেন। সমাজকর্মী হিসেবেও তিনি বাদবাকি সময় ব্যয় করেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করেন তিনি। চে গুয়েভারা জন্মসূত্রে কিউবান না হলেও তাঁর ছেলে-মেয়ের জন্ম কিউবায়। বলা যায়, কিউবান বিপ্লবের সন্তান তাঁরা। কেমন আছেন দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবী চে গুয়েভারার সন্তানরা? এ প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন রুশ দৈনিককে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে। নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি কিউবান বিপ্লবের ফসল। কিউবার জনগণের মেয়ে। এ দেশের লাখ লাখ মানুষের মতোই সহজসরল জীবন আমাদের। তবে অন্যদিক থেকে দেখলে বলা যায়, চে গুয়েভারার সন্তান হিসেবে কিউবান জনগণের উষ্ণ অনুভূতি ও ভালোবাসা পাই। এ অনুভূতি তাদের প্রতি আমার মনোভাবকেও প্রভাবিত করে। চে গুয়েভারা নেই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যে আদর্শ রেখে গেছেন সে আদর্শের মৃত্যু নেই। চে গুয়েভারা চেয়েছিলেন সারা বিশ্বকে সাম্রাজ্যবাদী থাবা থেকে মুক্ত করতে। তিনি সফল হননি। কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল হার না মানা মনোভাব। চে গুয়েভারার মৃত্যুর পর বহু বছর কেটে গেছে। বিশ্ব এখন আগের চেয়ে আরও নাজুক অবস্থায়। সত্তর দশকে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের পাশাপাশি ছিল সমাজতন্ত্রী শিবির। আজ সেই শিবির বিপর্যস্ত। একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াও ইতোমধ্যে সাম্রাজ্যবাদী দেশে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন তারই প্রমাণ। দুনিয়ার নিপীড়িত জাতিগুলোর এই দুর্দিনে একজন চে গুয়েভারার অভাব সত্যিকার অর্থেই অনুভূত হচ্ছে। দেবদূতের মতো যিনি আবির্ভূত হবেন দেশে দেশে। গ্রিক উপকথার প্রমিথিউসের মতো মানুষের মুক্তির জন্য যিনি হবেন নিবেদিতপ্রাণ। আধিপত্যবাদীর শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যিনি গড়ে তুলবেন গণপ্রতিরোধ। মানুষের মনে জাগাবেন স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাবেন যিনি।

বলছিলাম আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা। সোমবার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই দিনই বাংলাদেশে তাঁর দেশের দূতাবাসের উদ্বোধন করেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক উভয় দেশের স্বার্থে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর্জেন্টিনা হতে পারে লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম বাজার। দুই দেশের কৃষির উন্নয়নেও রয়েছে সহযোগিতার সুযোগ।

পাদটীকা : বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফি নিতে যাওয়ার আগে লিওনেল মেসির গায়ে কালো রঙের বিশেষ আলখেল্লা পরিয়ে দেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। সেই আলখেল্লা পরেই ট্রফি হাতে তোলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কাতারের এক আইনজীবী কিনে নিতে চেয়েছিলেন ওই আলখেল্লা। আহমদ আল বারওয়ানি নামের ওই আইনজীবী টুইটারে পোস্ট করে জানিয়েছেন, মেসির আলখেল্লার জন্য ১০ লাখ ডলার দিতেও প্রস্তুত তিনি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১১ কোটি টাকা। সেটিকে তিনি সাজিয়ে রাখতে চান ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। যাতে গোটা বিশ্ব জানতে পারে মেসির সেই আলখেল্লা তিনি কিনে নিয়েছেন। মেসির তরফ থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে সাড়া দেওয়া হয়নি। আমাদের মতো হতভাগাদের কাছে ১১ কোটি টাকা স্বপ্নের চেয়ে বেশি হলেও মেসির কাছে বড় কিছু নয়। ফলে ১১ কোটি টাকার প্রস্তাবে আলখেল্লাটি হাতছাড়ার বিষয়টি বিবেচনায়ও আনেননি তিনি।    

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর