বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নবীজি (সা.) যেভাবে শাবান মাস পালন করতেন

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

নবীজি (সা.) যেভাবে শাবান মাস পালন করতেন

হিজরি সনের অষ্টম মাস হলো পবিত্র ‘শাবান’ মাস। এ মাসটি পেরোলেই শুরু হয় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারক। রমজানের আগের দুটি মাস রজব ও শাবানজুড়ে তিনি বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া করা ও রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতেন। বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের কারণে এ মাসটিকে ‘শাবানুল মুআজ্জম’ বলা হয়। এর অর্থ হলো, মহান শাবান মাস। ঐতিহাসিকদের নির্ভরযোগ্য তথ্যানুসারে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নামাজ আদায়ের পরিবর্তে পবিত্র কাবা ঘরের দিকে নামাজ পড়ার নির্দেশনা এবং রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ দুটি বিধান এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। এ মাসে বিশেষ ইবাদতের অন্যতম হলো যথাসাধ্য বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। এ ছাড়া এ মাস হলো আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাস। রসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী বিশেষ একটি দোয়া করতেন ‘আল্লহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। ‘হে আল্লাহ! রজব মাস এবং শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন, আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলমানের ওপর রোজা রাখা ফরজ। রমজান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসে রোজা রাখা ফরজ নয়। তবে নফল রোজা রাখার অনেক অনেক ফজিলত রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি ফটক রয়েছে। কিয়ামত দিবসে এতে রোজাদারগণ প্রবেশ করবেন। তারা ব্যতীত কেউ এতে প্রবেশ করবে না। আহ্বান করা হবে রোজাদারগণ কোথায়? তারা প্রবেশ করার পর ওই ফটক বন্ধ করা হবে। অতঃপর আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বোখারি, মুসলিম)। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ‘আল্লাহর জন্য কেউ একদিন রোজা পালন করলে এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তাকে সত্তর বছর দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ (সহিহ বোখারি, মুসলিম) আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) এমন ধারাবাহিকভাবে রোজা রেখে যেতেন যে, আমরা ধারণা করতাম তিনি আর রোজা বিরতি দেবেন না। আবার বিরতি দিলে আমরা ধারণা করতাম হয়তো আর রোজা রাখবেন না। এক মাস রমজান ব্যতীত পূর্ণ মাস রোজা পালন করতে আমি রসুল (সা.)-কে দেখিনি। দেখিনি তাকে শাবান মাস অপেক্ষা অপর কোনো মাসে অধিক পরিমাণে রোজা পালন করতেও। (নাসায়ি : ২১৭৬)। অপর এক হাদিসে তিনি বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন তোমাদের মধ্যে যতটুক সামর্থ্য আছে ততটুকু আমল কর। কারণ তোমরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা প্রতিদান বন্ধ করেন না। নবীজি (সা.)-এর কাছে বেশি পছন্দনীয় নামাজ হলো যা নিয়মিত করা হতো, যদিও তা পরিমাণে স্বল্প। আর তিনি যখন কোনো নফল নামাজ আদায় করতেন এর ধারাবাহিকতা তিনি অব্যাহত রাখতেন।’ (সহিহ বোখারি)

শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখার রহস্য সম্পর্কে সাহাবি উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। লোকজন রজব ও রমজান-মধ্যবর্তী মাসটিকে অবহেলায় উপেক্ষা করে অথচ এই মাসে বান্দার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি পছন্দ করি আমার আমল পেশ করার সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকি।’ (আবু দাউদ)

লেখক : গবেষক ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর