শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তা নিয়ে তামাশা

বিকল্প প্রকল্পের কথা ভাবতে হবে

শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় পানির অভাবে হাহাকার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক এই নদী থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি দেওয়ার জন্য চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে চুক্তি হয়নি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণে। তারপর এক যুগ কেটে গেলেও অচলাবস্থা কাটছে না। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টনের ন্যায়ভিত্তিক চুক্তির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে উজানে তিস্তা নদী থেকে আরও পানি প্রত্যাহারের অপপ্রয়াস। এ উদ্দেশ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া উজানে একাধিক নতুন ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করায় তিস্তাপাড়ের মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ দেখা দিয়েছে। এমনিতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিসসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের মানুষ। প্রকৃতিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ। আশায় বুক বেঁধে রয়েছে তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ এজন্য যে, ভারত হয়তো তিস্তাপাড়ের মানুষের কান্না শুনে শুকনো মৌসুমে পানির ন্যায্য হিসসা দেবে। এমনিতেই পানির অভাবে তিস্তা মরতে বসেছে। এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন খাল খনন ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে এ অঞ্চল দ্রুত মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীতে ভারতীয় অংশে কোনো কিছু করতে হলে তা বাংলাদেশকে জানানো উজানের দেশের নৈতিক দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার দৃশ্যত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে না জানিয়ে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পে আরও দুটি খাল খননের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সে তামাশা বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা অস্তিত্ব হারাবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা ব্যারাজে দুটি খাল খননের পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা আশা করব শুধু চিঠি দিয়েই দায়িত্ব সারা হবে না। তিস্তার অস্তিত্ব রক্ষায় বিকল্প কী করা যায় সে বিষয়েও ভাবতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর