সাম্প্রতিক একাধিক ভয়াল ঘটনায় কিশোর ও তরুণদের সংশ্লিষ্টতা অনেক অভিভাককেই সংক্ষুব্ধ করেছে। বিচলিত অভিভাবকদের কেউ হয়তো সন্তানের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন। আবার কেউ বলেছেন, ইন্টারনেটসহ আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অপব্যবহারের কথা।
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যেমন কঠিন, তেমনি বোকামিও। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেকে অবশ্য তার বদলে ব্যবহারের স্বাধীনতা দিয়ে সেটা নজরদারি মধ্যে রাখার কথা ভাবেন। সচেতন এবং আধুনিক অভিভাবকদের এই ভাবনা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু দিনে কতবার ছেলেমেয়ের ঘরে উঁকি মেরে দেখবেন? আর সে ক্ষেত্রে যারা চাকরি বা ব্যবসা করছেন, তাদেরইবা উপায় কী? শুধু তাই নয়, বাচ্চারাও এখন আর পিছিয়ে নেই। চোখ বুজে মোবাইল-ল্যাপটপে সময় দিলে ঘটতে পারে বিপদ। বাচ্চারা ধরেই নেই যে অনলাইনে তারা যা দেখে বা করে, তা তাদের অভিভাবকরা ভালোভাবে নেবেন না। তাই তারাও ব্যবহার শেষে অনলাইন হিস্টোরি মুছে ফেলে হরহামেশাই। এ ছাড়া হুট করে ঘরে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ করে দিলে হয়তো সন্তান আপনাকে না জানিয়েই বন্ধুবান্ধব কিংবা সাইবার ক্যাফেমুখী হতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ বাবা-মা জানেন না, সন্তান তাদের অগোচরে অনলাইনে উত্তেজক ও বেআইনি বিষয়বস্তু খুঁজে ফেরে। এখানেই শেষ নয়, ভয়ংকর হলেও সত্যি, এসবের ধারাবাহিকতায় বাচ্চাদের অনেকেই জড়িয়ে যায় সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ ও সম্পর্কে। একটি বা দুটি নয়, প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে বলে সব অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার হতে পারে আদর্শ সমাধান। সন্তানের অনলাইন গতিবিধি নজরে রাখার পাশাপাশি এতে সাইবার বুলিংসহ যে কোনো অনলাইন প্রতারণা প্রতিহত করতে পারবেন। বাজারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ বেশকিছু অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া গেলেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস উদ্ভাবিত ‘রিভ অ্যান্টিভাইরাস’ সর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন। এতে ব্রাউজার থেকে যে কোনো সাইট ব্লকিং ছাড়াও রয়েছে ক্যাটাগরিভিত্তিক ব্লকিং, যেখানে অ্যাডাল্ট, গ্যাম্বলিং ইত্যাদিসহ রয়েছে অর্ধশতাধিক ক্যাটাগরি। ক্যাটাগরিভিত্তিক ব্লকিংয়ের সুবিধা এই যে আপনি একটি ক্যাটাগরি ব্লক করে দিলে এ-সংক্রান্ত কোনো সাইটেই আর প্রবেশ করা যাবে না। আপনি চাইলে টাইম রেজড ব্লকিংয়ে নির্ধারিত সময় বা সপ্তাহের কোনো দিন, ঘণ্টা বা মিনিট ধরেও ব্লক করতে পারেন। তবে রিভ অ্যান্টিভাইরাসের অ্যাডভান্সড প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- আপনি চাইলে ব্লক না করে সার্ভেইলেন্স মোডে নজর রাখতে পারেন সন্তানের অনলাইনের কর্মকান্ডে। সার্ভেইলেন্স মোড চালু করে দিলে ওই পিসি থেকে কোনো সাইটে প্রবেশ করা মাত্র আপনি মোবাইলে একটি নোটিফিকেশন পাবেন। এটি সম্পূর্ণভাবে আপনার সন্তানের অজ্ঞাতেই পাঠানো হয়, ফলে এতে তার কৌশলী বা অভিমানী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইন্টারনেট সার্ভেইলেন্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এতে আপনি পরে সুবিধাজনক সময়ে সন্তানকে বেআইনি সাইট ব্রাউজার করার কুফল ও তা থেকে দূরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এ ছাড়া সাইবার বুলিং সেফটিসহ অনলাইনে নিরাপদ থাকতে সন্তানকে এসবের কুফল বুঝিয়ে বলুন। কম্পিউটার কেন আর অনলাইনেই বা তার করণীয় কী, তা তাকে জানিয়ে দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কী, কেন ও কাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বা যোগাযোগের জন্য তাও তাকে বুঝিয়ে বলুন। সর্বোপরি, বকাঝকা করে নয়, সন্তানকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে বন্ধুর মতো।
♦ আফতাব চৌধুরী