শিক্ষা খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেমেয়ের ভর্তির হার সমান। একের পর এক পাবলিক পরীক্ষায় ছেলের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব। এ সরকারের আমলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে গত ১৪ বছরের অর্জন অবিস্মরণীয়। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।
স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন। একসঙ্গে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে এটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষা বিস্তারে বঙ্গবন্ধুর এ সিদ্ধান্ত বিশেষ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছেন। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ছয়টি। বর্তমানে দেশে ৫২টি পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩১ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। একসময় বছরে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ভারতে উচ্চশিক্ষা নিতে যেত, এখন যায় না বললেই চলে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছে বর্তমান সরকার। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাদরাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে বিশ্বমানের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব; যা বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাফল্য আকাশছোঁয়া। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে ৫১ শতাংশ। ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৯১ শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫১ জন। প্রাক-প্রাথমিকে ৫০ দশমিক ৩০ শতাংশ মেয়ে। ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯২ জনই মেয়ে। মাদরাসায় ৫৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে। ৩৯ লাখ ১৫ হাজার ১৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে ২১ লাখ ৩ হাজার ৫৭২ জন। এর মধ্যে দাখিল স্তরে ৬০ দশমিক ৪৭, আলিমে ৫৬ দশমিক ৩০, ফাজিলে ৫০ দশমিক ৭৮ ও কামিলে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১৭ শতাংশ। সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে মেইনস্ট্রিমে আনতে বদ্ধপরিকর। প্রফেশনাল ১৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানে (মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ইউনানি/আয়ুর্বেদিক, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হেলথ টেকনোলজি, টেক্সটাইল টেকনোলজি, লেদার টেকনোলজি, ল অ্যান্ড আর্ট কলেজ, এগ্রিকালচারাল কলেজ, আর্মড ফোর্সেস অ্যান্ড আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং লাইব্রেরি সায়েন্স) মেয়ে শিক্ষার্থী ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ৮০২ জন।
স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গেলেও শিক্ষার অগ্রগতিতে গত এক দশকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত করে বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এক দশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও টেকসই। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক।
বর্তমান সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে। সব মহলের মতামত নিয়ে সমগ্র জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন, জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, যথাসময়ে ক্লাস শুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনে ফল প্রকাশ, সৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, স্বচ্ছ গতিশীল শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করে ঝরে পড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্কুল ও মাদরাসায় সব ধরনের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে যথাসময়ে বই পৌঁছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এ অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতির কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বসমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)