২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময় থেকে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জন্য কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। গত ৫ আগস্ট- পরবর্তী সময়েও বিএনপি যে কণ্টকমুক্ত পথ চলছে তেমন নয়। তবে এ পথচলা অপেক্ষাকৃত সহজতর হলেও সুগম নয় অদ্যাবধি। বহমান এ সময়ে যিনি আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, সাহস জোগাচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি সেনা সন্তান থেকে আজ একজন সফল জাতীয় নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে স্বীকৃত হয়েছেন। দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন সত্ত্বেও, তিনি জনগণের কাছে ‘আগামীর নতুন বাংলাদেশের কাণ্ডারি হিসেবে সুপরিচিত; তার নাম- তারেক রহমান।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পিতা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, শহীদ প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, যাঁর উনিশ দফা ছিল দেশের রাজনৈতিক দর্শনে এক অনন্য স্বাক্ষর। ক্ষণজন্মা জীবনে শহীদ জিয়াউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশকে তিনি করেছিলেন স্বাবলম্বী। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের ধমনিতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন বাস্তবতায় প্রোথিত রাজনৈতিক দর্শন, আর হৃদয়মূলে গেঁথে আছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বহুধা বিস্তৃত এক মহিরুহ। অন্যদিকে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের উজ্জ্বল গুণাবলিও তারেক রহমানকে করেছে আলোকিত।
২০০৮ সালে নির্বাসনকাল হতে অদ্যাবধি লন্ডন প্রবাসেও বুকের ভিতর লাল-সবুজের বাংলাদেশকে ধারণ করে চলছেন তারেক রহমান। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলব এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের সবরকম উপকরণ ব্যবহার করেও বিগত দেড় দশকের অব্যাহত চেষ্টার পরেও কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। বরং দেশের অপার সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমানের সততা ও সত্যের পক্ষে রায় দেওয়ায় সেই বিচারক মোতাহার হোসেন জীবননাশের হুমকি মাথায় নিয়ে দেশান্তরী হন।
বললে অত্যুক্তি হবে না ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশের একটি বিতর্কিত গোয়েন্দা সংস্থা এবং ‘আওয়ামী সফট পাওয়ার’-এর যোগসাজশে তারেক রহমান ও বিএনপিবিরোধী যে চক্রান্ত শুরু হয় সেটির ফলাফল ছিল ওয়ান-ইলেভেন। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীনতা ও অনমনীয় দেশপ্রেমের বিনিময়ে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা, ভারত এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার যা দিয়েছে তা হলো দেশনেত্রীকে অবৈধভাবে নিজের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ, অন্যায়ভাবে কারাবাস, দুই সন্তান তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর নির্বাসিত জীবন (একপর্যায়ে কোকোর অকাল মৃত্যু) এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে দীর্ঘ সময় বিএনপির এক শ্বাপদসংকুল পথে যাত্রা।
২০০৮ সালে লন্ডনে নির্বাসিত সময় থেকে অদ্যাবধি তারেক রহমানকে যিনি দ্বিধাহীন চিত্তে সমর্থন দিয়ে গেছেন তিনি তাঁর সহধর্মিণী বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোবাইদা রহমান। ডা. জোবাইদা রহমান হলেন সাবেক নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের কনিষ্ঠ কন্যা। ডা. জোবাইদা রহমান ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্নাতক, পরবর্তীতে যিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন থেকে।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ তারেক রহমানের সহচর, ছায়াসঙ্গী ও সহধর্মিণী ছিলেন ডা. জোবাইদা রহমান। পারিবারিক, মানসিক, রাজনৈতিক যে সমর্থন এবং দেশজুড়ে সেবামূলক কাজের যে স্বাক্ষর তিনি বহন করেছেন বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার সহধর্মিণী হিসেবে সেটি রীতিমতো নজিরবিহীন। বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য বিপ্লবী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সহধর্মিণী উইনি ম্যান্ডেলার অবদানের সঙ্গে তুলনীয় দল, দেশ, স্বামী, দেশনায়ক ও গণতন্ত্রের জন্য ডা. জোবাইদা রহমানের অবদান এবং সক্রিয়তা। যে পরিবারে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেই পরিবারের পরিপ্রেক্ষিতে খুব সহজেই তিনি বেছে নিতে পারতেন এক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন।
একদিকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান আর অপরদিকে মহীয়সী নারী ডা. জোবাইদা রহমানের পিতা নৌবাহিনীপ্রধান মাহবুব আলী খান ও চাচা মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী। আমরা মনে করি দেশপ্রেম, জীবন ও কর্মে তারা উভয়েই পূর্বসূরিদের কৃতিত্বের ধারক ও বাহক হয়ে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুচারুভাবে পালন করে যাচ্ছেন। আমরা যদি নির্মোহভাবে নির্বাসিত প্রবাসজীবনে সুদূর লন্ডন থেকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক নির্দেশনা, বক্তব্য এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে বিশ্লেষণ করি, তবে আমরা যে তারেক রহমানকে পাই সেটি তাঁর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্ব থেকে জাতীয় নেতা হয়ে ওঠার অবয়ব। তাঁর যে অবয়ব পরিলক্ষিত হয় আমাদের সামনে, সেই অবয়ব ধারণ করে নিখাদ এক বাংলাদেশকে এবং এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারক, বাহক ও রক্ষক।
তিল তিল করে ত্যাগ ও তিতিক্ষার ভিতর দিয়ে যে দূরদর্শী তারেক রহমান তৈরি হয়ে উঠেছেন। সেই তারেক রহমান শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নন, তিনি বাংলাদেশের তারেক রহমান, তিনি সর্বজনমান্য তারেক রহমান।
একজন তারেক রহমান বাংলাদেশকে ধারণ করেন বলেই সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন থেকে শুরু করে সব জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে দ্বিধাহীনভাবে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক দলকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ন্যায়ভিত্তিক প্রতিটি জনবান্ধব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, সেই গণআন্দোলন একপর্যায়ে গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গত দেড় দশক ধরে টানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভিতর দিয়ে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা স্বৈরাচার
আওয়ামী লীগবিরোধী যে জনমত তৈরি করেছিল; সেই জনমত ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল দারুণভাবে। শুধু প্রভাবিতই করেনি বরং আন্দোলনের গতিপথও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণআন্দোলনের দিকে ধাবিত করেন তারেক রহমান।
গণআন্দোলন চলাকালে কখনো কখনো আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ভারতীয় চরদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দিশাহারা হয়ে গেছে। কিন্তু তারেক রহমানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস ও শ্রমিক দল সার্বক্ষণিকভাবে রাজপথে থেকে অকাতরে জীবন বিসর্জন দিয়ে গণআন্দোলনকে গণবিপ্লবে রূপান্তরিত করেছে।
যার প্রমাণ ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ ৮৭৫ জনের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। নিন্দুক বা সমালোচকেরা যাই বলুক না কেন বিএনপির মতো একটি বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ছাত্র-জনতার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশ না নিলে গণবিপ্লব অবশ্যই ব্যর্থ হয়ে যেত। আমরা যদি ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যায়, সেখানে কোথাও জিঘাংসা চরিতার্থতা কিংবা প্রতিশোধের কথা নেই। অবৈধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ কিংবা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রচার করতেন- ‘আওয়ামী লীগ বা হাসিনা শাহির পতন হলে তাদের ১০ লাখ লোক মারা যাবে!’
সেখানে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনায় দেশে কোনো ধরনের হতাহত কিংবা মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়নি।
বাংলাদেশে বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন দল, মত, পেশার সুবিধাবাদী লোকেরা এবং স্বৈরাচারের ল্যাসপেন্সাররা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার মধ্য দিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে সেখানে তারেক রহমান তাঁর রাজনৈতিক দল
বিএনপির তরফ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তম্ভের সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া এবং সহযোগিতার বিষয়ে তারেক রহমান দ্বিধাহীন ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেনা সন্তান তারেক রহমান নিজের পিতা ও মাতার মতো একজন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও নিবেদিত নেতা। যিনি নিজের জীবন এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে এক নতুন রূপে সাজাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারেক রহমানের ত্যাগ, ধৈর্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর।
তারেক রহমান শুধু বিএনপির নেতা নন, বরং সারা দেশের একজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। যার লক্ষ্য- বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং উৎপাদনের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাবে তা স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা হতে চলেছে।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক