রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আলোচনা-সমালোচনায় শাকিব

আলাউদ্দীন মাজিদ

আলোচনা-সমালোচনায় শাকিব

শাকিব খান বর্তমানে ঢালিউডের শীর্ষনায়ক। প্রায় এক দশক ধরে এই নায়কের ওপর নির্ভর করে চলছে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প। শাকিবের ওপর এই নির্ভরশীলতার কারণ হচ্ছে শিল্পী সংকট। ২০০৮ সালে জনপ্রিয় নায়ক মান্নার মৃত্যু এবং রিয়াজের চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়ার ফলে ঢাকাই ছবির একচ্ছত্র নায়ক হিসেবে স্থান করে নেন শাকিব। তার আগে ও সমসময়ে অনেক নায়ক এলেও তারা সেভাবে প্রতিষ্ঠা পাননি।

ফলে শাকিব হয়ে যান ঢাকাই ছবির একচ্ছত্র নায়ক। কথায় আছে চাওয়ার চেয়ে পাওয়া বেশি হয়ে গেলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মানুষ। শাকিবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। এর উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়ে নির্মাতার বলেন- সময়মতো সেটে না আসা, শিডিউল ফাঁসানো, পছন্দের নায়িকাকে তার বিপরীতে কাস্ট করতে পরিচালকের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, নির্ধারিত অঙ্কের পারিশ্রমিকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরে নতুন করে বাড়তি অর্থ দাবি করা ইত্যাদি কারণে শাকিবের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েন নির্মাতারা। এর বাইরে একসময় যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধে কথা বললেও এখন সুর পাল্টে এই ধারার ছবিতে অভিনয় ও তাতে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, আমাদের ছবি দিয়ে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া শাকিব এখন বলছেন ভারতে সুযোগ-সুবিধা বেশি। সব দিক দিয়ে সেখানেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। একসময় ভারতীয় ছবির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শাকিবের এখন ভারত প্রীতি সত্যিই অবাক করার মতো। অনেক শিল্পী বলছেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ঠিক সেই সময় শুরু হওয়া ভারতীয় ছবির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে কাজে লাগিয়েছেন শাকিব। নির্বাচনের পর এদেশে ভারতের ছবি প্রদর্শন হলেও টুঁ শব্দ করেননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও শাকিবের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যর্থতার বিস্তর অভিযোগ। তিনি দুই মেয়াদে টানা চার বছর সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও শিল্পীদের কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে ক্ষোভ রয়েছে শিল্পীদের। জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হবে সমিতির বর্তমান কার্যকালের।

মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে শিল্পী সমিতির চলতি কমিটির কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রশিল্পীরা। শিল্পীদের কেউ কেউ বলছেন, বিগত নির্বাচনের আগে আগে শিল্পীদের আবাসনব্যবস্থা, দুস্থ শিল্পীদের ফান্ডসহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাকিব খান। বিজয়ী হওয়ার পর তার একটিও বাস্তবায়ন করেননি তিনি। এমনকি বছরে একটি পিকনিক করার গত দিনের রেওয়াজটা ভেঙে দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ আছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি কমিটির এ পর্যন্ত ১১টি সভা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সভাতেই সভাপতি শাকিব খান উপস্থিত ছিলেন না। বেশির ভাগ সময়ই পালাক্রমে দুই সহসভাপতি নাদির খান অথবা ওমর সানিই সভা করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চলতি কমিটির একজন সদস্য  বলেন, ‘আমার মনে হয় দুই-তিনটি সভায় সভাপতি শাকিব খান উপস্থিত ছিলেন। নেতাই যখন মিটিংয়ে থাকেন না, তাহলে কীভাবে এই কমিটি দিয়ে ভালো কাজ হবে?’

 শিল্পীরা বলেন শাকিব খান  দুস্থ অসহায় আর অসুস্থ শিল্পীদের কোনো খোঁজখবর নেননি। এমনকি কোনো শিল্পী মারা গেলে কাজ বন্ধ রাখা দূরে থাক জানাজায় পর্যন্ত শরিক হন না তিনি। অথচ সমিতির সভাপতি হিসেবে এটি তার দায়িত্ব। শিল্পীরা বলছেন. প্রথমবার ভোটে জিতে এফডিসিতে সমিতির অফিস সাজিয়েছেন শুধু। তাও নিজের সাজ সজ্জা বাড়ানোর জন্য। সেটাও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। সমিতির বাগানের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ করেননি তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে নায়িকা অপু বিশ্বাসের নিরুদ্দেশ থাকার বিষয়টি পর্যন্ত সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সুরাহা করছেন না শাকিব। এ বিষয়ে তার দায় সারা গোছের কথাবার্তা শিল্পীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করছে।

চলচ্চিত্রকার এবং সিনেমাহল মালিকরা বলছেন, শাকিব খান অবশ্যই একজন জাত অভিনেতা। তাই বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা তার উচিত হচ্ছে না। তার ছবির রেন্টাল, টেবিল কালেকশন এখন সর্বোচ্চ। শাকিবের ওপর নির্ভর করে এখনো দেশে চালু আছে দুই শতাধিক সিনেমা হল। কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে শিল্পী আর কলাকুশলীরা। অনেকের কথায় শাকিব না থাকলে ছবির অভাবে অনেক আগেই এফডিসি বন্ধ হয়ে যেত। কারণ শাকিব ছাড়া অন্য কোনো নায়কের ছবি চলে না। তাই বলে অহংকারে যদি মাটিতে পা না পড়ে, স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন, তাহলে অচিরেই  নিজের কফিনে শেষ পেরেকটি নিজেই ঠুকবেন শাকিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর