বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

উঠতি তারকারা কেন আত্মহত্যা করেন?

উঠতি তারকারা কেন আত্মহত্যা করেন?

বাঁ থেকে জ্যাকুলিন মিথিলা, সুমাইয়া আজগর রাহা, মিতা নূর ও মঈনুল হক অলি। এদের মধ্যে মিতা নূর উঠতি ছিলেন না। অন্যদের চেয়ে সফল হয়েও দাম্পত্যকলহে জীবন ছেড়েছেন।

উঠতি তারকাদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। কিন্তু এর পেছনে কারণটা আসলে কী। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোসহ উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রথমে গুজব মনে করা হলেও পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে জ্যাকুলিন মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন। মূল ধারার মিডিয়ায় তিনি খুব বেশি আলোচিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে ছিলেন। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ভুল পথ। যার শেষ পরিণতি হলো জীবননাশে। শোবিজ অঙ্গনে ইদানীং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে।

কয়েক বছরে তারকাদের আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছেন— মডেল-অভিনেত্রী মিতা নূর, লাক্স তারকা রাহা, মডেল-অভিনেতা মঈনুল হক অলি, সিনহা, নায়লা, লোপা, পিয়াসসহ অনেকেই। অন্যদিকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে গেছেন  লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মম, কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি, মডেল-অভিনেত্রী প্রভা ও সারিকা। যদিও প্রভা এবং সারিকা আত্মহত্যা চেষ্টার খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ব্যাধি কিন্তু বেড়েই চলছে।

চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন বলেন, সামাজিক অবক্ষয়, বিদেশি অপসংস্কৃতির প্রভাব, মাদকাসক্তি, বেকারত্ব, সন্তানদের প্রতি মা-বাবার অবহেলাসহ আরও অনেক নেতিবাচক কারণে আসলে ছেলেমেয়েরা সহজেই আত্মহননের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আর মিডিয়ায় এই প্রবণতা বাড়ার কারণ হলো নতুনদের ধারণা রুপালি জগতে আসতে পারলেই সহজে অর্থবিত্ত আর খ্যাতি পাওয়া যায়। পরে বাস্তবতার সঙ্গে স্বপ্নের দূরত্ব তৈরি হলেই অপমৃত্যুর পথে এগোয় তারা।

অভিনেত্রী ববিতা বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ কমছে বলেই এই প্রবণতা বাড়ছে। সঙ্গে রয়েছে বিদেশি অপসংস্কৃতির অনুকরণ। এখন সহজেই তরুণরা মাদকাসক্ত হতে পারছে। হতাশার কারণেই প্রথমে মাদকের আশ্রয় তারপর অপমৃত্যুর পথ বেছে নেয় তারা। মিডিয়ায় এসে কাজ না পেয়ে অনেকে অনৈতিক পথে পা বাড়ায়। তারপর হতাশা থেকে আত্মহত্যা করে। এই প্রবণতা দূর করতে পরিবার আর সমাজকে সত্যিকার অর্থে সচেতন হতে হবে।

বছর দুয়েক আগে দাম্পত্যকলহের জেরে আত্মহত্যা করেন টিভি অভিনেত্রী, মডেল মিতা নূর। পুলিশ রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসার ড্রইংরুম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। মিতা নূরের বাবা ফজলুর রহমান সরকার অভিযোগ করেন, স্বামীর নির্যাতনের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

২০১২ সালে লাক্স তারকা সুমাইয়া আজগর রাহা আত্মহত্যা করেন। মোহাম্মদপুরের বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। কিন্তু রাহা কেন আত্মহত্যা করেছেন, আজও তার সঠিক তথ্য মেলেনি।

থিয়েটার-কর্মী, মডেল-অভিনেতা মঈনুল হক অলি ২০১২ সালের মার্চে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, পারিবারিক অশান্তির জেরেই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন।

২০১৪ সালে আত্মহত্যা করেন প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিন রাত্রি’ ধারাবাহিক নাটকের টুনি চরিত্র রূপদানকারী অভিনেত্রী লোপা নায়ার। পারিবারিক অশান্তির কারণেই নাকি এই অপমৃত্যু।

এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার।  ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে ডলি আনোয়ার বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। অনেকের মতোই ডলি আনোয়ারের এই মৃত্যু রহস্য থেকে গেছে। নব্বই দশকের সাড়া জাগানো অভিনেতা সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অভিযোগ উঠে, তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকাণ্ডের কোনো আইনি সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি।

লোকনাট্য দল বনানীর সদস্য ছিলেন নায়লা। মঞ্চে কাজ করে নিজের অভিনয়ের দক্ষতাও বাড়াতে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করেই হতাশা পেয়ে বসে তাকে। কী কারণে তার এই হতাশা, সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ২০১৪ সালের ২০ মার্চ তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। শ্যামলীর বাসা থেকে নায়লার সিলিং ফ্যানে ঝুলানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কণ্ঠশিল্পী পিয়াস রেজা রাজধানীর ভাসানটেকে ২০১৪ সালের ঈদের দিন ফ্যানের সঙ্গে প্রেমিকার ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি।

সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে চট্টগ্রামের বন্দর থানার নিজ বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন মডেল জ্যাকুলিন মিথিলা। জ্যাকুলিনের লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের পর তার ভালোবাসা কমে গেছে।’

মনোবিজ্ঞানী ড. মেহতাব খানমের কথায়— দুজনের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গায় ফাটল ধরলেই নানা সমস্যা তৈরি হয়। বিবাহবিচ্ছেদ থেকে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে। আর তারকাদের মধ্যে নানা হতাশার কারণেই শেষ পর্যন্ত এমন অপমৃত্যুর দিকে তারা পা বাড়ায়। যা মোটেও উচিত নয়।

সর্বশেষ খবর