বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

এফডিসিতে এক চক্কর

এফডিসিতে এক চক্কর

অন্ধকার জগৎ ছবিতে আনোয়ারা, ডি এ তায়েব ও মাহি

এফডিসি কর্মশূন্য, এটি পুরনো প্রবাদ। কালেভদ্রে এখানে ছবির কাজ হয়। বিজ্ঞাপন আর টিভি অনুষ্ঠানের আয় দিয়ে কোনোভাবে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল এফডিসিতে গিয়ে এই চিত্রই আবার দেখে এলেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আনোয়ারার আক্ষেপ

কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা অনেক দিন পর অভিনয় করছেন বদিউল আলম খোকনের ‘অন্ধকার জগৎ’ ছবিতে। এতে তার ছেলের ভূমিকায় দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ডি এ তায়েব, তার প্রেমিকার চরিত্রে কাজ করছেন মাহি। আনোয়ারা বললেন, এফডিসির এখনকার চিত্র দেখলে কষ্ট হয়, বুক ভেঙে কান্না আসে। একসময় তারকাদের ঢল থাকত এখানে। শুটিং করা বা দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না। আর এখন ছবি নির্মাণ নেই বলে এফডিসি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন পর মনের মতো গল্প আর চরিত্র পেয়ে কাজ করছি। দর্শক তায়েব আর মাহির চমৎকার কাজ দেখবেন ছবিটিতে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব আপনারা শিল্পটিকে ভালোবেসে আবার এফডিসিকে কর্মমুখর করে তুলুন।

 

ভাঙা চেয়ার আর ক্ষিপ্ত সম্রাট

এক নাম্বার শুটিং ফ্লোরের কাছে যেতেই আমবাগানে জটলা আর ফ্লোরের মেকআপ রুম থেকে শোরগোলের শব্দ। হঠাৎ একজন মাথায় করে হাত-পা ভাঙা একটি চেয়ার নিয়ে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। সহকারী পরিচালক এস এ মামুন জানালেন ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির শুটিং হবে। এতে শাকিবের বন্ধুরূপী সম্রাট আজ শুটিংয়ে অংশ নেবেন। তার সঙ্গে আছেন ডন, শিবাসানু, সাদেক বাচ্চু, মিশা সওদাগর প্রমুখ। মেকআপ রুমে ঢুকতেই সম্রাট ভাই এগিয়ে এসে বললেন দেখুন তো কি কাণ্ড, বসতে গিয়ে দেখি চেয়ারের হাত-পা ভাঙা। খেয়াল না করে বসে পড়লে আজ নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটত। এসি চলে না, অপরিচ্ছন্ন ওয়াশরুমের দুর্গন্ধে এখানে বসা দায়। চেয়ার নিয়ে হৈচৈ করার পর যে চেয়ারটি এনে দিয়েছে তাও ছেঁড়া, ভাঙাচোরা। এ অবস্থায় এখানে কাজ করব কীভাবে?

 

সমিতির বকেয়া ভাড়া

এফডিসিতে রয়েছে আটটি চলচ্চিত্র সমিতি ও দুটি কলাকুশলীর ট্রেড ইউনিয়ন অফিস। এসব অফিসের মাসিক ভাড়া আড়াই হাজার টাকা করে। বিদ্যুৎ ও পানির বিল আলাদা। এফডিসি প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, এত অল্প ভাড়া সত্ত্বেও সমিতিগুলো ভাড়া পরিশোধ করে না। বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ লাখ টাকায়। বিদ্যুৎ আর পানির বকেয়া বিলসহ এর পরিমাণ কোটি টাকার উপরে। এই ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করলে লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা প্রাণ পেত।

নামেমাত্র আধুনিকায়ন

বেশ কজন চলচ্চিত্রকার জানালেন ২০১১ সালে সরকার এই সংস্থার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য যে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুনে তা তো শেষ হয়নি বরং অনেক দেরিতে গত বছর শেষ হলেও তা হয়েছে নামেমাত্র। সময়মতো যথাযথভাবে কাজ করতে না পারায় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পর বাকি টাকা সরকার ফেরত নিয়ে গেছে। যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে তা যথাযথ না হওয়ায় অধিকাংশই পরিত্যক্ত ও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনগুলোর বাইরে ভিতরে সংস্কারকাজ দায়সারা গোছের হওয়ায় অল্প সময়ে তা বিবর্ণ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে প্রশাসনিক ভবনের রুমগুলোর ছাদ চুয়ে পানি পড়ে কাগজ ও আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। শুটিং ফ্লোরগুলোর কোনো সংস্কারই হয়নি।

 

এমডি যা বললেন

এফডিসির এমডি আমির হোসেনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তার কথায়, আমি গত বছর এখানে যোগদান করেছি। আমি আসার আগেই আধুনিকায়ন কাজ শেষ হয়েছে। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আমি যখন দায়িত্ব নেই তখন সংস্থার অ্যাকাউন্টে ৪৪ লাখ টাকা পাই। গত মাসে এই আয় দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ টাকায়। যা চলচ্চিত্র নির্মাণ নয়, বেশির ভাগ এসেছে বিজ্ঞাপন ও টিভির অনুষ্ঠানের কাজ থেকে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক বেতনের পরিমাণ ১ কোটি ২ লাখ টাকা। এফডিসির প্রায় তিন কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। তা থেকে লোন নিয়ে আয়ের সঙ্গে যুক্ত করে এই বেতন পরিশোধ করা হয়। সমিতিগুলোকে বার বার তাগাদা দিলেও তারা বকেয়া ভাড়া দিতে আগ্রহ দেখায় না। শুটিংফ্লোরসহ এফডিসির যত ভগ্নদশা রয়েছে তা সংস্কার করতে সরকারের কাছে ১৫ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চেয়েছি। এটি পেলে ডিসেম্বরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। চলচ্চিত্রকারদের অনুরোধ করব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান নয়, এখান থেকে টেকনিক্যাল আর যাবতীয় সুযোগ গ্রহণ করে সংস্থাটিকে রক্ষা করুন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর