দিনগুলো কেমন যাচ্ছে?
জি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি। আমরা চলি তাঁর ইশারায়, তাই তিনি যেমন চালাচ্ছেন।
গানের ব্যস্ততা কেমন?
গানের মানুষ গান নিয়েই থাকি। টেলিভিশন ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। এ ছাড়া হাতে বেশ কিছু নতুন গান আছে, সেই গানগুলো শেষ করছি।
বর্তমান সময় শিল্পীদের জন্য কতটা সহায়ক?
আমার মনে হয়, শিল্পীদের জন্য সব সময়ই ভালো। আলাদা কোনো ভালো সময় নেই। কারণ লালনের সময়ও লালন সাঁই নানা সংকট ও
সুসময়ের মধ্য দিয়ে গান করেছেন। আর একটি বিষয় হচ্ছে, এখন অনেক নতুন শিল্পী বেশ ভালো গান করে।
গানের জগতে আসার গল্পটি জানতে চাই?
আসলে আমার পরিবারে কেউ গানের অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু আমাকে গানের জগৎ যেন টানত। আমার হৃদয় গানের জন্য ব্যাকুল ছিল। তখন আমি নিজে নিজে গান করতাম। এরপর আমার গ্রামে একজন মাটির গান করতেন। তিনি ছিলেন সাত্তার হোসেন। আমি তখন তার কাছে গান শিখতাম। তিনি আমার প্রথম গানের শিক্ষক। আজ তিনি নেই, ওই পারে আছেন। তার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে, আমি ওই পারে গেলে। তিনি যখন চলে গেলেন তারপর আমি আস্তে আস্তে লালনের গান শুরু করি। আর এ ব্যাপারে আমার বাবা ও আমার সহধর্মিণী আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। এভাবেই আজ আমি বাউল শফি ম-ল ।
লালন গান কেন বেছে নিলেন?
আমি সুফি থেকে বাউল। লালনের গান মানুষের কথা বলে। ভাগ্যদেবে বলা হয়েছে ‘মানুষ অমৃত পুত্র’। বাইবেলে বলা হয়েছে ‘মানুষ ঈশ্বরের সন্তান’। ত্রিপিটকে বলছে ‘মানুষ সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা’ এবং কোরআনে বলা হয়েছে ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব’। এই সত্য বাণীগুলো বাউল গানের মধ্যে বেশি বলা হয়। আর বাউলরাই মানুষের মধ্যে প্রভুকে প্রতিষ্ঠা করেন। আর লালনের গানে সেই বাণী ফুটে উঠেছে। তাই আমি লালনের গান গাই ও আমি একজন বাউল।
লালন সাঁইজীর অনুসারী কী করে হলেন?
আমার বয়স তখন ৩৩ হবে এবং ১৯৮৫ সালের দিকে আমি লালন সাঁইজীর অনুসারী হই। একটি দেশের যেমন বিভিন্ন শহর উপশহর থাকে, তেমনি গানেরও বিভিন্ন শহর উপশহর থাকে। আমি পথ চলতে চলতে হঠাৎ একদিন এই জগতে ঢুকে পড়ি আর তখন এই লালনের শহর আমাকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যে আমি আর এখান থেকে ন্ডে বের হতে পারিনি। আমার সত্তা এখানে বসতজুড়ে বসল। এভাবেই আমার এই জগতে আসা। আমি বহুদিন ধরে বিভিন্ন আশ্রমে আশ্রমে ঘুরে বেড়িয়েছি। বাউলের আত্মাকে খুঁজেছি।
আপনার সব থেকে বড় পাওয়া বা অর্জন কী?
আমার বড় পাওয়া আজ সারা বিশ্বে শফি ম-লের একটা ঘরানা তৈরি হয়েছে। আমি সব সময় বাণীর পেছনে ছুটেছি। আমি লালনের গানগুলোও আমার মতো করে গেয়েছি। আর এটাই আমার নিজস্ব ঢং। আমি আমার সেই ঢং সবার মাঝে বিলাই। আর তাই সবাই গ্রহণ করে আজ আমাকে বাউল শফি ম-ল বানিয়েছে- এটাই আমার বড় পাওয়া।