বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → অনন্ত জলিল

চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছি

চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছি

দেশীয় চলচ্চিত্রে আধুনিকতার সূচনা করেন এম এ জলিল অনন্ত। ২০১০ সালে মুক্তি পায় তার প্রযোজিত ও অভিনীত ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ ছবিটি। এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্র। অনন্তের তৈরি পথ ধরেই ঢাকার চলচ্চিত্র দেশ-বিদেশে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। অনন্তের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্রকার হিসেবে অল্প সময়ে স্বতন্ত্র এবং প্রশংসিত অবস্থান করে নিয়েছেন, এটি কীভাবে সম্ভব হলো?

একটা সময় দেখলাম বিশ্বের চলচ্চিত্র যখন নির্মাণ এবং প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সময় উপযোগী পথে হাঁটছে তখন আমরা অ্যানালগ নির্মাণ, প্রদর্শন আর পুরনো ফর্মুলার গল্প, অভিনয় নিয়ে পড়ে আছি। এ কারণে দর্শক দেশীয় চলচ্চিত্রবিমুখ হচ্ছে। তাই বিবেকের তাড়না থেকে চলচ্চিত্রের আধুনিকায়নে ২০১০ সালে এগিয়ে এলাম এবং সর্বস্তরের ইতিবাচক সাড়া পেলাম। আমার ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিটি যখন ব্যাপক সাড়া জাগায় তখন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি এক প্রশংসাপত্রে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনার ছবিকে অনুসরণ করে যদি সবাই নির্মাণে এগিয়ে আসেন তাহলে এদেশের চলচ্চিত্র আবার সোনালি অতীত ফিরে পাবে। এদেশের চলচ্চিত্রের ব্যবসা চাঙ্গা করতে কলকাতা বা বিদেশি ছবির আর প্রয়োজন হবে না।’

 

২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬টি সফল ছবি উপহার দিয়েছেন, তারপর প্রায় ৫ বছর চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন-

আসলে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততা তখন এতটাই বেশি ছিল যে, চলচ্চিত্র নির্মাণ বা অভিনয়ের কোনো সময় আমার হাতে ছিল না। এ কারণেই সাময়িক বিরতি নিয়েছিলাম বলতে পারেন।

 

বর্তমানে ‘দিন দ্য ডে’ ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন-

হ্যাঁ, ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মাণ করছি। প্রযোজনার পাশাপাশি এতে আমি এবং বর্ষা অভিনয় করছি। ১০০ কোটি টাকা বাজেটের এই ছবিটির শুটিং হয়েছে বাংলাদেশ, ইরান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের সুন্দর সব লোকেশনে। ছবিটির গল্পে একজন মানুষের যাপিত জীবনের নানা দিক হৃদয়গ্রাহীভাবে উঠে আসছে। ছবিটি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, পস্তু ও ফরাসি ভাষায় নির্মিত হচ্ছে। এ ধরনের বহু ভাষার ছবি এদেশে তো নয়ই, হলিউড- বলিউডেও আজ পর্যন্ত নির্মিত হয়নি।

বিশ্বব্যাপী ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। বলা যায়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ছবিটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

 

এখন থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে কী আবার নিয়মিত হবেন?

ইনশাআল্লাহ, ‘দিন দ্য ডে’র কাজ শেষ করে ‘দ্য স্পাই’, ‘সৈনিক’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম থ্রি’সহ আরও অনেক ছবি নিয়ে আসছি। বলতে পারেন আমি ২০১০ সালে যখন চলচ্চিত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম তখন এই শিল্পে চরম খরা চলছিল। দর্শক ও প্রদর্শকরা তখন ‘খোঁজ দ্য সার্চ’-এর মতো যুগোপযোগী ছবি পেয়ে এই শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলেছিলেন। পরে এই নতুনত্বের পথ ধরে অনেকেই এগিয়ে এসে সফল হন। বর্তমানে ফের শিল্পটি খরার কবলে পড়েছে। এই অবস্থার উত্তরণে আবার চ্যলেঞ্জ নিয়ে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছি। আমি আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ।

 

সিনেমা হলের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে, তাহলে ব্যবসায়িক সুরক্ষা কীভাবে হবে?

দেখুন, ভালো ছবি পেলে যে দর্শক দেখে তা একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে। ভালো ছবি নির্মাণ হলে দর্শক আনুকূল্য পেয়ে সিনেমা হল বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবেন। যেসব প্রযোজকের সিনেমা হল আছে তারা যেন অন্য প্রযোজকদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা করেন। অযথা অন্যদের ঠকালে সিনেমা ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যেই থাকবে। তাছাড়া আমাদের ছবি নির্মাণ করতে হবে আন্তর্জাতিক বাজার টার্গেট করে। এতে ব্যবসায়িক ঝুঁকি মোটেও থাকবে না। আর এখন বিশ্বব্যাপী সিনেপ্লেক্স কালচার চলছে।

দর্শক চায় একই সঙ্গে শপিং, ফুড কর্নার, বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থাসহ ছবি দেখতে। তাই দেশব্যাপী সিনেপ্লেক্স বাড়াতে হবে। ভালো ছবি আর সিনেপ্লেক্স পেলে এদেশের ছবি আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ।

 

এবার অন্য প্রসঙ্গ। সরকার আপনাকে ‘সেরা করদাতা’ ঘোষণা করেছে, অনুভূতি কেমন?

ভালো লাগছে এই জন্য যে, আমি রাষ্ট্রের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। দেশবাসীর দায়িত্ব হলো সরকারকে কর দেওয়া, এটি দান নয়, সরকারের প্রাপ্য। সবাই নিয়মিত কর পরিশোধ করলে দেশ অবশ্যই স্বনির্ভরতার পথে আরও এগিয়ে যাবে।

 

চলচ্চিত্র ও করদাতার শ্রেষ্ঠত্বের মতো অন্য ব্যবসায়ও সরকারের পক্ষ থেকে আপনি সম্মাননা পেয়েছেন?

হ্যাঁ, আমি যখনই যে কাজ করি তা শতভাগ দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের মধ্যে রেখেই করি। ভালো কাজের ক্ষেত্রে কোনো আপস করি না। এ জন্য সরকার আমাকে একাধিকবার সিআইপিসহ নানা সম্মাননা দিয়েছে।

কাজের ক্ষেত্রে আমার এই সততা ও নিষ্ঠা আজীবন অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর