বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রে বিতর্ক ছড়াচ্ছেন কারা

চলচ্চিত্রে বিতর্ক ছড়াচ্ছেন কারা

দেশীয় চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রায় অস্তিত্ব সংকটের পথে। ছবি নির্মাণ হ্রাস, সিনেমা হল বন্ধ, সিনেমা হলবিমুখ দর্শক, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি নেই। এমন অগণিত সমস্যায় যখন চলচ্চিত্রশিল্প মৃতপ্রায় অবস্থায় তখনই কিছু শিল্পী আবার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজের সামনে চলচ্চিত্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ সিনিয়র চলচ্চিত্রকারদের। তাদের বলা কথা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

এ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না

কাজী হায়াৎ

চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। চলচ্চিত্র দেশ সমাজ ও পরিবার বিনির্মাণে প্রচুর ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্র না থাকলে ভালো-মন্দের মানে সচেতনতা সৃষ্টির অভাবে দেশ, সমাজ ও পরিবারের অনেক ক্ষতি হবে। আবার বলতে পারি চলচ্চিত্র হচ্ছে আবেগ তৈরির কারখানা। চলচ্চিত্র দেখে দর্শক অনেক ভালো কিছু শিখতে পারে। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবারই এই শিল্পের মানমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার দিকে দৃষ্টি দেওয়াটা একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়টিকে অবহেলা করে যারা নানা বিতর্কিত কাজের মাধ্যমে শিল্পটিকে কলুষিত করছেন বা যাদের দ্বারা কলুষিত হচ্ছে তাদের কোনোভাবেই এই অঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এদের চলচ্চিত্রের মানমর্যাদা রক্ষায় নিজেকে সংযত রেখে বুঝেশুনে চলা উচিত। কারণ চলচ্চিত্রের প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি থাকে। তাই কারও কোনো নেতিবাচক কর্মকান্ড মেনে নেওয়া যায় না।

 

চলচ্চিত্রের জন্য দুঃখজনক

রোজিনা

আমার একটিই ক্ষোভ এক সময় তো এমন অবস্থা ছিল না। এখন কেন প্রায় দেখতে পাই চলচ্চিত্রের কিছু মানুষ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করে চলচ্চিত্র শিল্পের বদনাম ছড়াচ্ছে এবং চলচ্চিত্র জগৎটাকেই কলুষিত করছে। এটি এই জগতের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক। বিশেষ করে মেয়ে শিল্পীদের মধ্যে অনেকে কেমন যেন লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি এদের যেন কোনো আগ্রহ নেই। চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করে কেউ যদি বিতর্কিত কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে এই শিল্পের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। চলচ্চিত্রের মতো একটি সমাজ সচেতন বিনোদন শিল্পকে কারও  অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া কখনো এই শিল্প বা এর বাইরের সচেতন মানুষের কাম্য হতে পারে না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

 

কঠোর ব্যবস্থা চাই

আবু মুসা দেবু

শিল্পী বা অন্য কেউ চলচ্চিত্রের মান মর্যাদার দিকে লক্ষ্য না রেখে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিল্পটির মুখে কালিমা লেপন করছে ও দুর্নাম ছড়াচ্ছে তারা কখনই এই শিল্পে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি চলচ্চিত্র শিল্পের অস্তিত্বের জন্য অবশ্যই হুমকি স্বরূপ। প্রকৃত চলচ্চিত্রকাররা কখনো তাদের মেনে নিতে পারেন না। চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি কোনো অনৈতিক কাজ করে চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর উচিত তৎক্ষণাৎ তাদের বিরুদ্ধে  কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এই শিল্পের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। মানুষের দৃষ্টিতে চলচ্চিত্র যেন অনন্য উচ্চতায় থাকে সেই ব্যবস্থা করাও সিনিয়র চলচ্চিত্রকারদের দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

 

তাদের ঘৃণা করি

মিয়া আলাউদ্দীন

চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি কোনো বিতর্কিত কর্মকান্ড করে তা এই শিল্পের জন্য সত্যিই খুব দুঃখজনক। কারণ চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষ সুস্থ বিনোদন লাভ করে ও সমাজ বিনির্মাণে অনেক কিছুই শিখতে পারে। এক সময় শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই মানুষ সিনেমা দেখতে যেত এবং এ নিয়ে আমরা চলচ্চিত্রকাররা গর্ববোধ করতাম। আজ চলচ্চিত্রের কিছু মানুষের দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষের জন্য শিল্পটি বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে এবং চলচ্চিত্র শিল্পের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ  হচ্ছে। এ ধরনের শিল্পী বা এই শিল্পে আসা  যে কেউ কোথা থেকে কীভাবে আসছে সে বিষয়ে শুরু থেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের জন্য শিল্পটির বদনাম  হোক তা আমি মেনে নিতে পারি না এবং তাদের আমি ঘৃণা করি।

 

সমিতি এদের দায়িত্ব নেবে না

মিশা সওদাগর

চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি এই শিল্পের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে অপকর্ম করে তা শিল্পটির জন্য অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জাজনক। যারা এমন গর্হিত কাজ করে তাদের পজিটিভ উদাহরণ হিসেবে রাজ্জাক, শবনম, শাবানা, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানাসহ আমাদের নিয়ে ভাবা উচিত। আমরা সুস্থ কাজের মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে মানমর্যাদার আসনে উপবিষ্ট করিয়েছিলাম। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হলে আগে নিজেকে সংযত রাখতে হবে। কোনো শিল্পী যদি বিতর্কিত কাজ করে শিল্পী সমিতি তার সেই অপকর্মের দায় কখনো বহন করবে না। বরং অপকর্ম প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

 

কোনো বিতর্ক কাম্য নয়

খোরশেদ আলম খসরু

একটি পরিবারে ভালো মন্দ দুইই থাকতে পারে। চলচ্চিত্র পরিবারও তাই। এখানেই কিছু মন্দ মানুষ থাকতেই পারে। চলচ্চিত্রকারদের কাজ হচ্ছে যারা এসব করবে তাদের জন্য ঘরোয়াভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ আমি চাই না কারও কারণে চলচ্চিত্রের মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হোক এবং বাইরের মানুষ তা জেনে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি তাদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মাক। আর যারা অপকর্ম করে তারা যেই হোক তাদের আমি কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। কারণ এতে এই প্রধান গণমাধ্যমটির সম্মানহানি হয়। কারও বিতর্কিত কার্যকলাপ কোনো সুস্থ মন-মানসিকতার মানুষের কাম্য হতে পারে না।

 

শিল্পীরা বিতর্কে কেন জড়াবে

জায়েদ খান

শিল্পীদের ধ্যান জ্ঞান হতে হবে কাজ। তারা শুধু কাজের পেছনেই ছুটবে। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি সুস্থ শিল্প সংস্কৃতি চর্চার স্থান। এখানে কোনো অসুস্থ মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের স্থান নেই। তাদের জন্য এই শিল্পের প্রতি কেউ আঙুল তুলুক বা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুক তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃত অর্থে শিল্পীরা সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে মানুষকে সুস্থ বিনোদন ও বাণী  দেবে। তারা কেন বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে শিল্প ও শিল্পীদের মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে। এই অবস্থা কখনো মেনে নিতে পারি না। কোনো শিল্পী যদি ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কে জড়ায় তাহলে তাকে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে বয়কট করা উচিত।

সর্বশেষ খবর