বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শর্তসাপেক্ষে ঋণ পাচ্ছেন সিনেমা হল মালিকরা

আলাউদ্দীন মাজিদ

শর্তসাপেক্ষে ঋণ পাচ্ছেন সিনেমা হল মালিকরা

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণ ও উন্নয়নে মালিকরা কাক্সিক্ষত ঋণ পেতে যাচ্ছেন। এক বছরেরও বেশি সময় আগে সরকার এই ঋণের ঘোষণা দিলেও নানা জটিলতায় শুধু কালক্ষেপণ হয়েছে আর ঋণ না পেয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের হতাশা বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে সরকার সিনেমা হল/সিনেপ্লেক্স নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়। পরে একনেকের  বৈঠকে সিদ্ধান্তটি পাসও হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারও জারি করে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। সিনেমা হল উন্নয়নে ঋণ আর প্রদান করেনি ব্যাংক। গড়িয়েছে দীর্ঘ সময়। আশা হারিয়ে ফেলেন সিনেমা হল মালিকরা। এরপর গত ২৬ আগস্ট সরকার জরুরিভাবে এ নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করে। ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানের জন্য দ্রুত সার্কুলার জারি করবে বলে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি আগের মতো আবারও ঝুলে যায়। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে ২৬ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল নির্ধারিত ব্যাংকগুলো নির্দেশনা পাঠাবে। কিন্তু বাস্তবে কোনো নির্দেশনাই পাঠায়নি ব্যাংকগুলো। এ অভিযোগ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির। সমিতির কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগ্রহী ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাননি। এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারা বরাবরই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। সম্প্রতি এ বিষয়টি প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নজরে আনেন এবং আবেদন করেন অন্তত প্রধান ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উপস্থিতিতে একটি সভা যাতে আহ্বান করা হয়। এর জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাসকে যে কোনোভাবেই অন্তত ৫০টি সিনেমা হলের প্রকল্প প্রস্তাব সমিতির মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলেন এবং তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্প দাখিল ও অনুমোদনের ব্যবস্থা করবেন। এমনকি প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করবেন। তথ্যমন্ত্রী আশার বাণী শুনিয়ে বলেন, প্রকল্পের আওতায় সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানের সীমা ৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতিমধ্যেই প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে সুদের হার কমানো এবং সুদ সমেত ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার সময়সীমা ৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করার যে আবেদন জানিয়েছে মন্ত্রী তাতে নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রদর্শক সমিতিকে দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে, এ বিষয়ে অগ্রগতির কথা জানতে চেয়ে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে আরেকটি বৈঠক ডেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব দ্রুত জমা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২৬ আগস্ট তথ্য সচিব মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসরকারি ব্যাংক খাতের পূবালী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা, ইউসিবিএল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ প্রধান প্রধান ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ঋণ বিতরণের অচলাবস্থা কাটিয়ে গতি আনার জন্য এক জরুরি গুরুত্বপূর্ণ সভা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসান, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ও সমিতির আইনবিষয়ক সম্পাদক ইউনুস রুবেল, অতিরিক্ত তথ্য সচিব (চলচ্চিত্র) খাদিজা বেগম, এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন, যুগ্ম সচিব নজরুল ইসলাম এবং উপসচিব সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতি তথ্য সচিব তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে সৃষ্ট এই তহবিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সাময়িক সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠে দ্রুত ঋণ বিতরণের অনুকূলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মাঠপর্যায়ের ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপকদের বরাবর প্রেরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ এবং নির্দেশনায় দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নকল্পে তথা শক্তিশালী একটি চলচ্চিত্র বাজার তৈরির লক্ষ্যে এই ঋণ পূর্ণ অর্থায়ন তহবিল গঠিত হয়েছে। সরকার চায় জরুরিভাবে এই তহবিলের সুষ্ঠু বিতরণের মাধ্যমে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়ন হবে এবং নতুন সিনেমা হল এবং সিনেপ্লেক্স নির্মিত হবে। তিনি নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরির ক্ষেত্রে বহুমুখী আয়ের ব্যবস্থা রাখার যেমন ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের আয়ের ব্যবস্থাসমৃদ্ধ সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ওপর বেশি জোর দেন ও ব্যাংকারদের প্রতি দ্রুত ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানান।  সভায় আগ্রহী সিনেমা হল মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিজ দায়িত্বে সব প্রকল্প সারপত্র তৈরি করে প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়ের ঋণ বিতরণ বিভাগে যোগাযোগ করতে প্রদর্শক সমিতির নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন সভায় উপস্থিত ব্যাংকাররা।

সর্বশেষ খবর