সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্মৃতিতে এখনো অমলিন স্মিতা পাতিল

আলাউদ্দীন মাজিদ

স্মৃতিতে এখনো অমলিন স্মিতা পাতিল

খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন মাত্র ৩১ বছর বয়সে পরপারে চলে যান স্মিতা পাতিল। ১৯৮৬ সালে ১৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হন তিনি। দূরদর্শনের সংবাদপাঠিকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু তাঁর। থিয়েটারে কাজের সময় ডাক আসে বড় পর্দার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক ছবিতে নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন স্মিতা। সত্তরের মাঝামাঝি সময় থেকে আশির শেষ দিক পর্যন্ত হিন্দি, বাংলা ও মারাঠি সমান্তরাল সিনেমায় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতেও সমান সাবলীল ছিলেন স্মিতা। নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরী, শাবানা আজমিদের সঙ্গে দেশের সমান্তরাল সিনেমায়ও তখন নতুন যুগের ছোঁয়া।

‘মন্থন’, ‘ভূমিকা’, ‘আক্রোশ’, ‘চক্র’, মির্চ মশালা’, ‘বাজার’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘মান্ডি’, ‘অর্ধসত্য’র মতো সমান্তরাল সিনেমা ছাড়াও ‘অর্থ’, ‘শক্তি’, ‘নমক হালাল’, ‘আজ কা আওয়াজ’- সবটায়ই দাপুটে অভিনয় ছিল তাঁর। পুণের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ছাত্রী স্মিতা দুটি জাতীয় পুরস্কারসহ ফিল্মফেয়ার পান। ’৮৫ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার।

 

ভাঙেন ধারণা

নায়িকা হতে হলেই গায়ের রং হতে হবে ফর্সা- এমন প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেন স্মিতা পাতিল। শ্যামলা বরন দিয়েই জিতে নিয়েছিলেন হাজারো দর্শকমন। এমনও হয়েছে যে, একটি শব্দও মুখ থেকে বেরোয়নি অথচ তিনি বলে গেছেন কত না কথা। তাঁর অভিব্যক্তি জাগিয়ে তুলেছে নীরবতাকেও। এমনও দেখা গেছে যে, নির্মাতারা স্মিতাকে মাথায় রেখে চরিত্র তৈরি করেছেন। শুধু দেহাবয়ব বা চাকচিক্যই নয়, শুদ্ধতম অভিনয়শিল্পের মধ্য দিয়ে ওঠে আসা একটি নাম- স্মিতা পাতিল। তিনি একাধারে অভিনয় করেছেন হিন্দি, তামিল ও মালয়ালাম চলচ্চিত্রে। চরিত্রের দাবিতে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে নিতেন।

 

শ্যাম বেনেগালের দৃষ্টিতে

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল স্মিতা পাতিল সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তিনি গিরগিটির মতো ছিলেন। চরিত্রে প্রবেশ করতে গিয়ে রং বদলানোর অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তাঁর। কাহিনির অংশ হয়ে ওঠার দক্ষতাও ছিল। সহজাত ছিলেন। অবলীলায় বিভিন্ন সিন করে দিতে পারতেন। ক্যামেরা তাঁকে ভালোবাসত।

 

অমিতাভকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন

স্মিতাকে নিয়ে অমিতাভ বচ্চন এক স্মৃতিচারণে জানান, এক দিন হঠাৎ রাত ২টায় ফোন আসে স্মিতার। তখন অমিতাভের ‘কুলি’ ছবির শুটিং চলছিল। স্মিতা অমিতাভকে জানান, সেদিন রাতে তিনি অমিতাভকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই সকালের অপেক্ষা না করেই ফোন করেন। পরের দিন সকালেই ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ‘কুলি’র সেটে গুরুতর আহত হন অমিতাভ। শুরু হয় জীবন নিয়ে লড়াই। অমিতাভ জানান, স্মিতা আগে থেকে কিছু একটা আঁচ পেয়েছিলেন। এত বছর পরও বিগ-বি খুঁজে পাননি সেই রাতের রহস্য।

 

রাজ বব্বরের সঙ্গে সম্পর্ক

স্মিতা ছিলেন স্পষ্টভাষী। লুকিয়ে রাখেননি বিবাহিত রাজ বব্বরের সঙ্গে সম্পর্ক। ‘ভিগি পলকে’ সিনেমার সেটে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ। রাজ আগেই বিবাহিত ছিলেন এবং প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি স্মিতার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্মিতা পাতিল  দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন। তাঁর বোন মান্য পাতিল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নিজের পরিসরে স্মিতা ছিলেন নিঃসঙ্গ। রাজ বব্বরের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারেননি। আবার, রাজ-নাদিরার সংসার ভাঙার জন্য অপরাধবোধেও কষ্ট পেতেন। স্মিতা মা হতে চেয়েছিলেন তাড়াতাড়ি। রাজ-স্মিতার একমাত্র সন্তান প্রতীকের জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৮ নভেম্বর। এরপর জটিল হয়ে ওঠে স্মিতার শারীরিক অবস্থা। আর সুস্থ হতে পারেননি। দুই সপ্তাহের সদ্যোজাত পুত্রকে রেখে চলে যান স্মিতা ১৯৮৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাত্র ৩১ বছর বয়সে। জন্ম পুণে। ১৯৫৫ সালের ১৭ অক্টোবর।

সর্বশেষ খবর