মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভরা মৌসুমেও যাত্রাপালার দেখা নেই

আয়োজন নিয়ে যাত্রা পরিষদ ও শিল্পকলা একাডেমি মুখোমুখি

আলাউদ্দীন মাজিদ

ভরা মৌসুমেও যাত্রাপালার দেখা নেই

প্রতি বছরের দুর্গাপূজা আরম্ভ থেকে শুরু হয় যাত্রা পালার মৌসুম। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে এই পালার খরা চললেও এবার তা চরমে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ যাত্রাপালা পরিষদের। অন্যদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে নিয়মিত যাত্রাপালা হচ্ছে এবং যাত্রাপালা ও পুতুল নাচের উন্নয়নে একাডেমি জোরালো ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ যাত্রাপালা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি  মিলন কান্তি দে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের অনুমতি না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দীর্ঘ বিবৃতিতে বলেন, এই ভরা মৌসুমে যখন যাত্রাশিল্পের রমরমা অবস্থা থাকার কথা সেখানে যাত্রার অনুমতি মিলছে না। জেলা প্রশাসনের ওপর যাত্রা আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকলেও তারা সরাসরি বলছে এখন যাত্রার অনুমতি দেওয়া যাবে না। কারণ হিসেবে অশ্লীল নাচ-গানের খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালেও সেগুলো যুক্তিগ্রাহ্য হচ্ছে না। কারণ যাত্রা প্যান্ডেলের পাশেই নানারকম অনুষ্ঠানে অশালীন নৃত্যগীত পরিবেশন হতে দেখা যায়। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মেলায় যেমন ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া ও নেকমরদ মেলায় একসময় প্রচুর অশ্লীল নৃত্যগীত পরিবেশিত হতো। সেই ধারা এখন দেখা যাচ্ছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের কালীর মেলা ও ঐতিহ্যবাহী কান্তুজুর মেলায়। এখানে আপত্তিকর নাচ-গানের কারণে সেই প্যান্ডেলগুলো প্রশাসন  বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে এ দেশে যাত্রার নামে যিনি প্রথম অশ্লীল নাচ-গানের ধারা চালু করেন এবং মেয়েদের শর্ট-প্যান্ট পরিয়ে নাচানোর অভ্যাস চালু করেন সেই আনন্দ অপেরার মালিক মোশাররফ হোসেন নয়ন এখনো চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কোনো সতর্কবাণী কিংবা নির্দেশের তোয়াক্কা তিনি করছেন না। মিলন কান্তি দে বলেন, যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ যাত্রার নামে অপসংস্কৃতি আর মেনে নেবে না। যেখানেই অশ্লীলতা সেখানেই রুখে দাঁড়ানো হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এক দিনের জন্য যাত্রানুষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যাত্রাকে খুব ভালোবাসেন। ১৯৯৯ সালের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন থিয়েটার ও নাটক আসার অনেক আগেই এ দেশে যাত্রার জন্ম। যাত্রা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের লুকায়িত জীবনকে সমৃদ্ধ করছে। মিলন কান্তি দেসহ পরিষদের অন্য নেতারাও বলছেন, আমরা যাত্রার ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনব। তিনি বলেন, এবারের দুর্গাপূজার সময় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যাত্রাপালার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাও আবার সারা দেশে নয়, শুধু সিলেট ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি চা বাগানে। এবং ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েকটি নাট মন্দিরে। পরে আবার অক্টোবর মাসে সিরাজগঞ্জের সোনামুখী এবং রুহিয়া এবং কালীর মেলায় কিছুদিন যাত্রা চলেছিল। আমার বক্তব্য হলো সব দল অশ্লীলতা করে না। মাত্র গুটিকয়েক দলের অপকর্মের জন্য সারা দেশের যাত্রা বন্ধ হতে পারে না। মিলন কান্তি দে জানান, আমাদের পরিষদ অতীতেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালককে বিষয়টি অবহিত করেছিল এবং অচিরেই মহাপরিচালকের কাছে অশ্লীল যাত্রা দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এ ছাড়া যাত্রা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনের কাছে যাত্রা দলের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই তালিকায় যারা অশ্লীলতা করে তাদের চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও প্রশাসন অন্য দলগুলোকে অনুমতি দিতে টালবাহানা করছে। এখানে উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় বরগুনা ও নড়াইল জেলায় মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু বিষয়ে যাত্রা উৎসব করার আবেদন জানানোর পর প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। এ অবস্থার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছি এবং প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছি। এদিকে যাত্রাপালা মঞ্চায়ন নিয়ে এমন স্থবিরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, যাত্রাপালার যে আইন রয়েছে তা মনিটরিংয়ের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা এবারের যাত্রা মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেনি। আসলে যাত্রাপালা পরিষদ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে বলেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অশ্লীলতার অভিযোগ পেয়ে শিল্পকলা একাডেমি এরই মধ্যে কয়েকটি দলের নিবন্ধন বাতিল করেছিল। পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। বরং অন্য জায়গা থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর এসব নিবন্ধন বাতিল করা হয়। পরে অশ্লীলতা করবে না বলে মুচলেকা দিলে আবার তাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমি বলতে চাই গত যাত্রা মৌসুমে সারা দেশে ১০০টি যাত্রাপালা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এর আগের বছর দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। এর বাইরে গত বছর আরও ১২টি যাত্রাপালার আয়োজন করা হয় ঢাকা, তেজগাঁও, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগে। তখন প্রতি আয়োজককে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। লিয়াকত আলী লাকী জোর দিয়ে বলেন, যাত্রাশিল্প ও পুতুল নাচকে বাঁচাতে শিল্পকলা একাডেমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে।

সর্বশেষ খবর