শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার :- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

প্রয়োজনে জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়াতে হবে

প্রয়োজনে জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়াতে হবে

দেশে না হলেও বিদেশে ঠিকই মুক্তি পাচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’।  যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রেক্ষাগৃহে আগামী ১০ মার্চ থেকে দেখা যাবে সিনেমাটি। ইতোমধ্যেই এর ট্রেইলারও প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ফারুকী। তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শনিবার বিকেল দেশে নয়, মুক্তি পাচ্ছে আমেরিকা ও কানাডায়। এ বিষয়ে কী বলবেন?

যদি ছবিটা একই দিনে বাংলাদেশসহ আমেরিকা-কানাডায় মুক্তি পেত, আমি সবচেয়ে খুশি হতাম। কিন্তু কেন সেটা হয়নি এটা তো সবাই জানেন। তবে আমি ভীষণ খুশি ফাইনালি ছবিটা মানুষ দেখতে পাবে বলে। আমেরিকা এবং কানাডার সব বাংলাভাষী মানুষকে আহ্বান জানাব ছবিটা দেখতে। এই ছবির একজন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারের ভাষায় ‘আমরা অভাগা বাংলাদেশি’, তাই নিজের দেশে ছবিটা দেখতে পারলাম না এখনো।

 

সিনেমার ট্রেইলার মুক্তি পেয়েছে। অনেকে বলেছেন ট্রেইলারে বিশেষ কিছু দেখানো হয়নি?

এই কদিনে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক শুভানুধ্যায়ী চিঠি লিখেছেন। অনেকেই তাদের ভালো লাগা জানিয়েছেন। আবার অনেকে এটাও বলেছেন, ট্রেইলারে কেন কোনো কিছুই দেখাইনি। ট্রেইলার দেখে অনেকের কাছে মনে হয়েছে, খুব নিরাপদে বানানো একটা কিছু। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, ট্রেইলারে আমরা গল্পের ইঙ্গিতবাহী বা হার্ডহিটিং সবকিছু অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি এর পেছনের কারণটা খেয়াল করেন তাহলে আমাকে হয়তো বুঝতে পারবেন। শনিবার বিকেল তো ‘ডুব’ নয় যে, শান্ত শীতল ট্রেইলার হবে। এটা সম্ভবত আমার সবচেয়ে এনগেজিং এবং ইনটেনস ছবি। ছবিজুড়েই আমাদের পরিচয়, আবেগ, সংকট বিষয়ে নানা হার্ডহিটিং মোমেন্টস বা ডিবেট আছে। একজন দর্শক যখন পুরো ছবিটা এক বসায় দেখবে সে তখন পুরো ছবির কনটেক্সটে বিষয়-আশয়গুলো দেখবে। ছবির মূল সুর ও বক্তব্য বুঝতে পারবে। কিন্তু যখনই এখান থেকে একটা, ওখান থেকে একটা ডায়ালগ এনে ট্রেইলারে ব্যবহার করব, দর্শক বিভ্রান্ত হওয়ার গভীর সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমার শনিবার বিকেল ছবির দুটি সামান্য স্টিল ছবি নিয়ে যা হয়েছিল, তারপর কি এই ভুল বোঝাবুঝির রাস্তা ওপেন করা ঠিক হতো? মার্চের ১০ তারিখ ছবিটি রিলিজ হচ্ছে আমেরিকা এবং কানাডায়। চলেন ছবিটা দেখি। তারপর বলার মতো অনেক কথাই থাকবে আমাদের। কথা হবে। কারণ কথাই তো বলতে চাই আমরা।

দেশে কী কারণে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি বাধার মুখে পড়েছে বলে মনে করেন?

এর কারণ আমি জানি না, জানে তথ্য মন্ত্রণালয়। কারণ তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের নিজেদের বানানো আপিল কমিটির সিদ্ধান্তই মানছে না। আপিল কমিটির সদস্য শ্যামল দত্ত আপিল বোর্ডে ছবিটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আপিল কমিটি মনে করে ছবিতে আপত্তিকর কিছু নেই। এই ছবি প্রদর্শনে আর  কোনো বাধা নেই। পরে নানা টালবাহানা করে তথ্য মন্ত্রণালয় ইউ-টার্ন নিয়ে আমাদের জানায়, আপিল কমিটি ছবিটি আবার দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন শ্যামল দত্ত কমিটির পক্ষ থেকে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘আমরা আবার কেন দেখব? আমরা তো একবার দেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছি।’ এখন আপনারাই বোঝেন অবস্থাটা।

 

শুধু আপনার ছবিটি নয়, আরও কয়েকটি ছবি এভাবে সেন্সর বোর্ড আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, কী বলবেন?

এমন অযৌক্তিক বাধা একটি ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এটি করোরই কাম্য হতে পারে না। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশে কেবল এক ধরনের ছবিই হবে। ফিল্মমেকার বা সাফোকেটেড ফিল করবেন।

 

এ অবস্থায় এখন কী করবেন? নতুন কাজ কীভাবে করবেন?

আমি এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের মুখে কখনো থেমে থাকব না। এমন আচরণের অর্থ হলো এক ধরনের জঞ্জাল আমাদের পেছন থেকে টেনে ধরে রেখেছে। যেভাবেই আমাদের ভালো কাজ আটকানো হোক না কেন আমার কথা হলো হার মানব না, পেছন থেকে টেনে ধরে রাখলেও প্রয়োজনে জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়াতে হবে।

 

সেন্সর বোর্ডের নীতিমালা নিয়ে কিছু বলতে চান?

সেন্সর বোর্ডের নীতিমালা ভয়ংকর। প্রথমত সেন্সর বোর্ড থাকাই উচিত নয়, কারণ পৃথিবীর কোথাও সেন্সর বোর্ড বলে কিছু নেই, আছে ফিল্ম গ্রেডেশন বোর্ড। তারপরও বলব, ভালো ছবির স্বার্থে বর্তমানে সেন্সর বোর্ডের যেসব নীতিমালা রয়েছে তা বদলাতে হবে, নয়তো নীতিমালার সংজ্ঞা ও পরিধি স্পষ্ট করতে হবে। যেমন- ধর্ম, রাজনীতি বা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হওয়াসহ অন্যসব বিষয়ের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নীতিমালায় পরিষ্কার নয়। এগুলো স্পষ্ট করতে হবে। কারণ বর্তমান নীতিমালার এই অস্পষ্টতার কারণে যে কোনো কিছু আটকে দেওয়া হচ্ছে। এই নীতিমালা দিয়ে চাইলে এমনকি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও আটকে দেওয়া যাবে! জাস্ট সরকার বদলে গেলেই এর ভিকটিমও বদলে যেতে বাধ্য।

 

তাহলে কী বলা যায়, আপনি ফিল্ম পলেটিক্সের শিকার?

সেটি আমি জানি না, বলতেও পারব না।

 

ছবিটি নিয়ে ইসলামকে অবমাননার অভিযোগও আনা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কী বলবেন?

আমি একটি কথা বলতে চাই, ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে। অনেক ওয়াজে বলা হয়েছে এ ছবির মাধ্যমে আমি ইসলামকে অবমাননা করেছি, আমি তো এখন ছবিটির ট্রেইলার প্রকাশ করেছি। ট্রেইলার দেখে কী এই অভিযোগ যথার্থ বলে মনে হয়েছে। ১০ মার্চ ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মুক্তি পাচ্ছে, সেখানকার দর্শকদের বলব আপনারা ছবিটি দেখতে সিনেমা হলে যান, এসব অভিযোগের যথার্থতা এই ছবিতে খুঁজে পান কি না দেখুন। আমি বলব, ছবিটি  বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় সন্ধান করে। কোনো মত বা পথকে আক্রমণ বা কোনো মত বা পথের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য বানানো নয়। শিল্পীর কাজ ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস।

 

সবশেষে সরকার ও দেশের মানুষের কাছে আপনার কী বলার আছে?

সরকার ও দেশের মানুষের কাছে একটি কথাই বলতে চাই, মত প্রকাশের জায়গা থাকতে দিতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক নয়,  বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সবাই মানে সবাই, যে আমার মতের নয়, তারও।

সর্বশেষ খবর