বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার :- মিশা সওদাগর

আমি ফিল্মের লোক ফিল্মই করব

আমি ফিল্মের লোক ফিল্মই করব

ঢাকাই চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বেশির ভাগ ছবিতেই থাকে তাঁর সপ্রতিভ উপস্থিতি। মিশা সওদাগরের সঙ্গে সাম্প্রতিক  ব্যস্ততা ও কাজ নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কেমন?

আপনি অবাক হয়ে যাবেন, এখন আমি ১৭টি ফিল্ম নিয়ে আছি। আমার আট থেকে নয়টা ছবি রেডি। ঈদের ছবি তপু খানের ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ এবং ‘কিল হিম’ এ আমি আছি। ঈদে ‘আগুন’ আসারও কথা ছিল, সেটিতেও আমি রয়েছি। আমার ছবি রেডি রয়েছে-কুস্তিগীর, শত্রু, আহারে জীবন, লোকাল, বাহাদুর, এবার তোরা মানুষ হ। আমি কাজ করছি এখন ব্রিটে, রিভেঞ্জ, মালেক আফসারীর ‘নাইন এমএম’। আমি কাজ করতেছি নয়নতারা, যেটির ডেট দিয়েছি জুনে। শাকিবের দুটো নতুন ছবিতেও কাজের কথা হয়েছে। আর কয়েক দিন আগে সাইন করলাম নতুন আরেকটি ফিল্ম ‘যাযাবর’। তার মানে নয়টি ছবি রেডি, আর আটটি ছবি জুলাই পর্যন্ত ডেট দেওয়া! এরমধ্যে ‘আমেরিকান বয়েজ’ নামে ওয়েব সিরিজ করব, যেটির শুট হবে আমেরিকায়।

 

ফিল্মে এখন কী কী সংকট রয়েছে?

গোটা ফিল্মই এখন সংকটে। কারা ছবি বানায় ভাই! আর কাকরাইল তো বন্ধ। কাকরাইল এখন সুনসান মনে হয়। আমরা যখন আগে কাকরাইলে যেতাম তখন ঈদ ঈদ মনে হতো। বৃহস্পতিবার দিন ঈদ লাগত। এখন তো ফিল্মে শিল্পী সংকট, নায়কের সংকট, মেধার সংকট, স্ক্রিপ্ট রাইটার নেই। ভালো মিউজিক করা যায় না। ভালো গল্প পাওয়া যায় না। এখন তো একজন গিটারিস্টও অভিনয় করছেন। একজন গায়ক সেও অভিনেতা। নির্মাতা তাঁর ড্রাইভারকে দিয়ে অভিনয় করাচ্ছেন। যে চা দিচ্ছে সেও অভিনেতা হয়ে যাচ্ছে।

 

সপ্তাহে অনেকের সিনেমাই মুক্তি পায়। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ লোক তাদের উৎসাহ দিতে কার্পণ্যবোধ করে। এটি কি দৈন্যতা নয়?

এটি ডেফিনেটলি একটা দৈন্যতা। এ বিষয়ে অমিতাভ বচ্চনের একটা ডায়ালগ মনে পড়ে গেল। সেটি আমি হিন্দিতে না বলে বাংলায় বললে এরকম দাঁড়ায়- ‘কেউ তোমাকে গালি দেবে, কেউ তোমাকে তালি দেবে, কেউ তোমাকে সম্মান করবে, কেউ তোমাকে অসম্মান করবে। আসলে যার যতটুকু সঞ্চয় সে তোমাকে অতটুকুই দেবে। যে গালি লালন করে সে তোমাকে গালিই দেবে। তার ভান্ডারে তার সঞ্চয় গালিই আছে। যার ভিতরে সম্মান আছে সে তোমাকে সম্মানই করবে।’ কাজেই আমি মনে করি, এটা আমাদের একটা বিরাট দৈন্যতা। এই দৈন্যতা আমরা দূর করতে পারি না, কারণ আমরা তো দেশপ্রেমিকই নই। আমরা তো আমাদের দেশকে, সংস্কৃতিকে ভালোবাসি না, ইন্ডাস্ট্রি তো দূরের কথা। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আপনি আমার ওয়ালে মানে মিশা সওদাগরের ওয়ালে গেলে দেখবেন, আপনি ভিকি জাহেদের ‘সাইলেন্ট’ বলেন বা আশফাক নিপুণের ‘মহানগর’কে নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। আমি আশফাক নিপুণকে ফোন দিয়ে বলেছি, ভাই করোনাকালে ‘মহানগর’ আপনি দারুণ বানিয়েছেন। এর আগে মিজানুর রহমান আরিয়ান যখন বানিয়েছিল অপূর্ব-মেহজাবীনকে নিয়ে ‘বড় ছেলে’, তখন আমি ফোন করে ভালো লাগা শেয়ার করেছি। এই সময়ে যারা ভালো কাজ করে সেই সব নির্মাতাকে বা অপূর্ব-নিশো থেকে আরম্ভ করে যাদের কাজ ভালো লাগে তাদের নিয়ে আমি আমার পেইজে পোস্ট দিই। আমি খিজির হায়াত খানের ‘ওরা ৭ জন’র প্রশংসা করেও পোস্ট করেছি। আমার পেইজে গেলেই দেখতে পাবেন। আমি এসব নিঃস্বার্থভাবে দিয়ে থাকি।  

 

ওটিটিতেও বেশ কিছু কাজ করেছেন...

আমি ফিল্মের লোক, ফিল্মই করব। পাশাপাশি ওটিটির কিছু ওয়েবে কাজ করব। কারণ, ওটিটিতে এখন ভালো কাজ হচ্ছে। শুধু নায়ক-নায়িকা বেইজড বা রোমান্টিক ফিল্ম হবে তা নয়, এখানে সাবজেক্টটাকে খুব ভ্যালু দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন কনটেন্ট আসছে।

 

ফিল্ম থেকে ওটিটি কনটেন্ট কতখানি আলাদা?

ফিল্মে একরকম কমার্শিয়াল ধারা আছে। এর বাইরে গেলে একটু ডিফারেন্ট টাইপের ফিল্ম হয়। তো ওই সব ফিল্ম সাকসেস নাও হতে পারে। আমি বেশি দূরে যেতে চাই না। ফিল্মের একটাই ফর্মুলা-এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট! টাইটানিক দেখবেন। ১৫টা নমিনি পেয়েছিল অস্কারে, ১২টা অস্কার জিতেছিল। এটা ফর্মুলার ফিল্ম। টাইটানিকের পর যদি আসি তাহলে এখনকার ফর্মুলা ফিল্ম ‘পাঠান’। ফিল্মের যে আবহ তার সঙ্গে অন্য কোথাও মিল পাবেন না। ফিল্ম অনেক বাজেটের হয়। আর ওটিটির বিষয়টা একেবারেই আলাদা। শিল্পীর একটা খোরাক থাকে এক্সপেরিমেন্টাল অনেকরকম চরিত্র করার। তো সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, ওটিটি একটা তীর্থস্থান।

 

খলচরিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মিশা কেন ইতিবাচক চরিত্রেও কাজ করছেন?

দেখুন আমি কিন্তু ১৯৮৬ সালে নায়ক হয়ে দুটি ছবি করেছিলাম। একটি আমার ওস্তাদ ছটকু আহমেদের ‘চেতনা’ এবং অন্যটি আলমগীর কুমকুমের ‘অমর সঙ্গী’। তখন তো যুবক ছিলাম। হুমায়ুন ফরীদিকে যখন দেখলাম সব চরিত্রে নিজের নৈপুণ্য স্বাচ্ছন্দ্যে তুলে ধরছেন, তখন খুবই অবাক হতাম। যেহেতু আমি অভিনেতা, তাই আমার উচিত নয় একটা চরিত্রের ব্যারোমিটারে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। আমি কমেডিতেও কাজ করেছি এবং জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছি। আমি কিন্তু বাংলাদেশের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া একজন অভিনেতা। আমি বরাবরই একজন শিল্পী হতে চাই। শিল্পী যারা হতে চায়, তারা যেমন ডিফেন্সে খেলতে পারে আবার অফেন্সেও পারে।

 

ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মিশা সওদাগরের বক্তব্য কী?

অনেক কাজ করেছি। অনেক রকম কাজ করেছি। এই ইন্ডাস্ট্রিই আমাকে মিশা সওদাগর বানিয়েছে। টানা ৩৫ বছর ধরে আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। এখনো ১৮টা সিনেমা আমার হাতে। দ্যাটস মিন, ইন্ডাস্ট্রি মেড মি। নায়ক রুবেলের বাবা করেছি, যিনি আমার পাঁচ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও! আর এমন কোনো নায়ক নেই যার বাবা চরিত্র করিনি।  ইন্ডাস্ট্রি আমাকে অনেক দিয়েছে, বিশ্বাস করেছে। তাই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

 

আপনার বিকল্প ভিলেন কে?

আসলে সেভাবে কেউ তেমন করে চেষ্টা করেনি। যেমন অন্য কেউ শাকিবের মতো চেষ্টা করেও পারেনি। যোগ্যতা অনুযায়ীই তো সবার অবস্থান নিশ্চিত হয়, তাই না?

সর্বশেষ খবর