মো. দুলাল মিয়া। বাবার নাম সুরুজ মিয়া। পুরান ঢাকার বাসিন্দা। ৪০ বছর ধরে এফডিসিই তার ঘরবাড়ি। জীবনের এতটা বছর এখানে কাটাচ্ছেন, ছোটখাটো অভিনয় করে যাচ্ছেন, সবার কাজে সহযোগিতাও করছেন। তারপরও ভাগ্যদেবী তার প্রতি আজ পর্যন্ত সুপ্রসন্ন হননি। অনেক কষ্টে নিজেকে অভাব-অনটনের বেড়াজালে কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রোডাকশনের কাজ ছাড়াও ফুটফরমায়েশি কাজের মাধ্যমে সিনেমা অঙ্গনে নিজেকে ধরে রেখেছেন। বিনোদনের সর্বোচ্চ গ্ল্যামার জগতের একজন বাসিন্দা হয়েও দুলাল মিয়া প্রায় ৪০ বছর ধরে লুঙ্গি পরেই কাজ করে চলেছেন। প্যান্ট পরার অভ্যাস তার নেই। প্যান্ট পরলে অস্বস্তি বোধ করেন। এটি তার সরল জীবনের বৈশিষ্ট্য। দুলাল মিয়ার দীর্ঘ কর্মজীবনে কোনো নির্দিষ্ট পদবি খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রোডাকশনের কাজ থেকে শুরু করে গাড়ি ধোয়া, গেট থেকে রিকশা বা সিএনজি আনা, কিংবা ক্যান্টিনে কাউকে খাবার পাঠানোর মতো ছোট-বড় সব কাজই তিনি তার সাধ্যমতো করতে চেষ্টা করেন। একটা বিষয় খুব লক্ষণীয়, তার কোনো কাজে ভুল ধরেন না কেউ। প্রায় সবাই তার সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। তার এই ব্যস্ত জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করেন এবং এখানেই তিনি খুঁজে পান তার জীবনের আনন্দ। দুলাল মিয়ার জীবনের সাদামাটা আনন্দময় উপলব্ধি অনেককেই বাড়তি বিনোদিত করে। তাত্ত্বিক রূপায়ণে দুলালের ফরমায়েশি কাজের ভিতর তার একাগ্রতা থেকে অনেকের হতাশা, ক্ষোভ বা আকাঙ্ক্ষার বিপরীত প্রতীকীরূপে ধরে নেওয়া যায়। এ কথা বলে দুলাল মিয়ার জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাহাবুব তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘তাত্ত্বিক সমুদ্রের বিন্দু জ্ঞান পরিধি আমার বেষ্টনীর আওতায় থাকলে দুলাল মিয়ার মতো আরও যারা আছেন তাদের অস্থিমজ্জা আবিষ্কারে সক্ষম হতে পারতাম। আর যাদের আছে নিশ্চয়ই তারা এমন জীবনের পাশে প্রসারিত হবেন। পরিচালক সমিতির আঙিনায় আমরা যখন আডডায় গল্পে থাকি তখন দুলাল আশপাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘোরেফেরে। যখন তার মুখপানে তাকাই সঙ্গে সঙ্গে তার দুই চোখ নামিয়ে ফেলে কিংবা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। খুব মায়া হয় তার জন্য। পোস্টটা করার সময় আমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে। আর জিজ্ঞেস করছিল, স্যার আসলেই কি আপনি আমার ছবি দিচ্ছেন ফেসবুকে। দুলালের এই আনন্দটাও আমার কাছে অনেক বেশি আনন্দের। আমরা সিনেমার মানুষরা তার পাশে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম তাহলে কি ভালো হতো না। আমরা কি পারি না দুলাল ভাইয়ের মতো সহজ-সরল মানুষটির পাশে একটু সহানুভূতির হাত বাড়াতে? তার জীবনমান বদলে দিতে? এফডিসিতেই তার সুখ-দুঃখ। দিন-রাত। জীবন। তার মধ্যে কিছু অলীক ভাবনাও কাজ করে।
মনে করে, বিএফডিসির প্রাঙ্গণ কর্মকোলাহলে আবার সোনালিরূপে জেগে উঠবে। ফ্লোরগুলো লাইট ক্যামেরা অ্যাকশানের ঝংকারে আবার মুখরিত হবে...।’