গান ও ব্যক্তিজীবন দুটি নিয়েই পাঠকদের কাছে অন্যতম কৌতূহল জন্ম দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি। সম্প্রতি ঘুমের ওষুধ খেয়ে তার আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে খবর বের হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। এরপর সুস্থ হয়ে সাক্ষাৎকার দেন বেশ কিছু মিডিয়ায়। এক সাক্ষাৎকারে আলোচিত এই তারকা মৃত্যুর আগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত, পারিবারিকভাবেই ন্যান্সি বিএনপির সমর্থক। কয়েক মাস আগে ফেসবুকে তার একটি রাজনৈতিক স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় মিডিয়ায়। ওই স্ট্যাটাসের কারণে তিনি বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ন্যান্সির সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: আপনি এ সময়ের জনপ্রিয় একজন কণ্ঠশিল্পী। উঠতি ক্যারিয়ারের এ সুবর্ণ সময়ে কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন?
ন্যান্সি: দেখুন, আত্মহত্যা চেষ্টার খবরটাই মিথ্যা।
প্রশ্ন: তাহলে এতগুলো ঘুমের ওষুধ কেন খেলেন?
ন্যান্সি: ফেসবুকে আমার রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরার পর থেকে একের পর এক আমার স্টেজ শো বাতিল হচ্ছিল। রিহ্যাব ফেয়ার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের শো, হোটেল প্যালেসিয়া থেকে শুরু করে বেশকয়েকটি বড় বড় শো-তে আমন্ত্রণ জানানোর পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমি বেশ হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। ঘটনার দিন রাতে কোনোভাবেই আমার ঘুম আসছিল না। আমি বোকামি করে একের পর এক ৮-১০টি ঘুমের ওষুধ খাই। এরপর আর কিছুই মনে নেই।
প্রশ্ন: ডাক্তার বলেছেন, আপনি ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। এটা কি তাহলে মিথ্যা?
ন্যান্সি: এটা টোটালি রং ইনফরমেশন। আমার বিরুদ্ধে পুরোটাই অপপ্রচার।
প্রশ্ন: আপনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হলেন ডাক্তাররা, এটা তো অস্বাভাবিক একটা অবস্থা!
ন্যান্সি: ময়মনসিংহে ডাক্তাররা আমার চিকিৎসা করতে ভয় পেয়েছিলেন। তারা মনে করেছেন, ন্যান্সির চিকিৎসা করতে গিয়ে কোনো ভুল হয়ে গেলে সারা দেশে হৈচৈ পড়ে যাবে। বোঝেনই তো, সেলিব্রেটি হলে যা হয়! মিডিয়ার ভয়েই তারা আমাকে ঢাকায় পাঠান।
প্রশ্ন: কিন্তু ঢাকায় এসে আপনাকে ল্যাব এইডের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থা নিশ্চয় গুরুতর ছিল?
ন্যান্সি: এটা ডাক্তারদের ভুল ছিল। কারণ আইসিইউতে নেয়ার মতো খারাপ অবস্থা আমার ছিল না। এরপর আমার পারিবারিক ডাক্তার তাদের ভুল ধরিয়ে দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে কেবিনে স্থানান্তর করে।
প্রশ্ন: আপনাকে তো মনির খান বা বেবী নাজনীনের মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় না। আসলেই কী আপনি বিএনপি করেন?
ন্যান্সি: দেখা না যাক, আমি বিএনপির পক্ষে স্ট্যাটাস লিখেছি, ওটাই আমার অপরাধ। আমি বিএনপির সামান্য একজন সমর্থক মাত্র। সেটা পারিবারিকভাবেই। এটা বলাই কি আমার অপরাধ? তাহলে আমি কি স্বাধীন মতামতও দিতে পারব না? দেখুন আমার এখন ২৭ বছর বয়স। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছর। সে হিসাবে আমি আরো ৩৩ বছর বাঁচব। এ সময়ের মধ্যে যদি বিএনপি ক্ষমতায় না আসে তাও আমি বিএনপিই করবো।
প্রশ্ন: ফেসবুকে তো অনেক তারকাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে লেখেন। তাদের তো এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না…
ন্যান্সি: অন্যদের কথা জানি না। আমার সমস্যা হয়েছে এটা বুঝতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি ফেসবুকে যা লিখেছিলেন, সেই অবস্থানে অনড় আছেন?
ন্যান্সি: হ্যাঁ, আমাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলেও আমি আমার অবস্থান বদলাব না।
প্রশ্ন: তাহলে আর হতাশার কী আছে?
ন্যান্সি: না, হতাশা নয়। কথা হলো আমার তো কোনো অপরাধ নেই। কেন তাহলে আমার স্টেজ শো বাতিল করে দেবে বা বাধা দেবে। আমাকে তো জোর করে রাজনীতিতে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: খালেদা জিয়ার সঙ্গে আবার দেখা করবেন?
ন্যান্সি: দু’বার দেখা হয়েছে। ম্যাডামকে আমার অসাধারণ মনে হয়েছে। আবারও দেখা করার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: গান আর রাজনীতি কি একসঙ্গে চলবে?
ন্যান্সি: আর দু’মাস আমি দেখব। এর মধ্যে যদি স্টেজ শো আর গানের কাজ না আসে তাহলে আমি গান ছেড়ে দেব। গানই যদি গাইতে না পারি, তাহলে ঢাকায় থেকে কি হবে! চলে যাব গ্রামের বাড়িতে। আর দশটা সাধারণ নারীর মতো আমিও স্বামী-সন্তান নিয়ে দিন কাটাব।
প্রশ্ন: স্টেজ-শো না থাক, আপনার হাতে তো সিনেমার গানের কাজ রয়েছে। তাছাড়া আপনি নিজেও তো বিত্তশালী।
ন্যান্সি: দেখুন, দূর থেকে অনেক কিছুই মনে হয়। বাস্তবটা অনেক কঠিন। গত দু’মাসে আমি মাত্র চারটা ফিল্মের গানে ভয়েস দিয়েছি। এ মাসে আমার কোনো কাজ নেই। শুধু সুবীর নন্দী দাদার সঙ্গে একটা ডুয়েট গান করেছি। এভাবে কি চলবে? বাসাভাড়া, বড় মেয়ে রোদেলার স্কুল, অন্যান্য খরচ? এগুলো কোত্থকে আসবে।
প্রশ্ন: আপনি এখন শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত টাকা দিতে পারছেন না, এমন অভিযোগ শোনা যায়!
ন্যান্সি: এগুলো পুরোটাই অবান্তর। গসিপ।
প্রশ্ন: আপনার বাবার সঙ্গেও আপনার দূরত্ব, তার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে?
ন্যান্সি: এটাও ঠিক নয়। আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এখন থেকে ১৪ বছর আগে। তখন আমার মা ও আমরা এটা মেনে নিয়েছি। সুতরাং এখন প্রশ্ন ওঠা অবান্তর।
প্রশ্ন: আপনার শেষ ইচ্ছে কী?
ন্যান্সি: মৃত্যুর আগে আমি একবার তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে চাই।