৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:২৬
কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভেল

বাংলায় শুটিং করতে আসার ওয়াদা করলেন সালমান খান

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলায় শুটিং করতে আসার ওয়াদা করলেন সালমান খান

মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। বিকালে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বলিউড অভিনেতা সলমান খান। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, অভিনেতা অনিল কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা, সোনাক্ষী সিনহা, পরিচালক মহেশ ভাট, রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেড সৌরভ গাঙ্গুলী, উৎসবের জুরি বোর্ডের সদস্য রাশিয়ান পরিচালক পাভেল লুঙ্গিন, জুরি বোর্ডের সদস্য ভারতীয় পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া, জুরি বোর্ডের সদস্য মার্কিন পরিচালক লরেন্স কার্দিশ, অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক ব্রুশ বেরেসফোর্ড প্রমুখ। 

এছাড়াও ওই অনুষ্ঠান আলো করে ছিলেন টলিউড অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, দেব, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, সোহম চক্রবর্তী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, রাজ চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মিমি চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, লিলি চক্রবর্তী, মাধুরী মুখার্জী সহ এক ঝাঁক তারকা। এর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যটির একাধিক মন্ত্রী রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক মনোজ মালব্য, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, মুখ্য সচিব এইচকে দ্বিবেদী বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি প্রমুখ। 

এরপরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সংবর্ধনা জানানো হয়। পরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'বাংলার মানুষ সিনেমাকে ভালোবাসে, সিনেমাকে কদর করতে জানে। তাই গৌতম ঘোষ থেকে শুরু করে সকলেই এখানে উপস্থিত আছেন। বাংলা ভারতের সংস্কৃতিক রাজধানী। জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠীর গন্ডির বেড়া টপকে চলচ্চিত্রের ভাষা এখন বিশ্বজনীন হয়েছে। চলচ্চিত্র জগতে হৃত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, উত্তম কুমারদের মতো ব্যক্তিত্বের ভূমিকা আমরা কখনোই ভুলতে পারি না।'  

তিনি বলেন, এবারে চলচ্চিত্র উৎসবে আমরা অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানকে মিস করছি। কারণ অমিতাভ বচ্চন অসুস্থ, শাহরুখ খান তার মেয়ের ছবির প্রোমশনে ব্যস্ত। তাই তারা আসতে পারেননি। 

বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পীদের দক্ষতার প্রশংসা করার পাশাপাশি পরিচালক মহেশ ভাট, অনিল কাপুর, সালমান খানদের উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, বাংলার চলচ্চিত্র জগতে আপনারা যদি কিছু দিতে চান তবে বাংলাকে কিছুটা ভাবুন। আমাদের এই রাজ্যে এত ভালো ভালো স্পট আছে সেখানে শুটিং করতে পারেন। কারণ মুম্বাই চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাই এখন ডেস্টিনেশন। কালিম্পং থেকে শুরু করে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, শিলিগুড়ি, বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমান, আসানসোল, হাওড়া, হুগলিতে সমস্ত অবকাঠামো আছে। আপনারা এখানে আসুন এখানে কাজ করুন। আমাদের বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুব ট্যালেন্টেড পার্সন আছে তারও আপনাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।' 

মমতা বলেন, এ রাজ্য থেকে কুমার শানু, বাপি লাহিড়ি, অরিজিৎ সিং এর মত শিল্পীরা মুম্বাইতে গিয়ে কাজ করছে। তবে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে প্রমোট করতে সালমানের মতো শিল্পীরা বাংলায় কেন কাজ করবে না। 

একসময় তিনি বলেন, ভাইজানকে কথা দিতে হবে, কারণ আমাদের এখানে টেলি একাডেমি আছে, ফিল্ম একাডেমি আছে। সালমানও জানিয়ে দেন এখানে শুটিং করার জন্য তিনি অবশ্যই আসবেন। 

এরপরই মমতা বলেন, বলিউড সবসময়ই টলিউডের সাথে সম্পর্কযুক্ত, আবার টলিউড সবসময় হলিউডের সাথে সম্পর্কিত। এই কারণে আপনাকে এখানে আসতে হবে, ছবি করতে হবে। মানুষের মন জয় করতে হবে। কখনো কোন প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে মনে করবেন। যদি সত্যিই কোন রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে থাকে তবে তা এই রাজ্য। বাংলার মানুষই আপনাকে সাহায্য করতে পারে কারণ তারা আপনাকে ভালোবাসে। কারণ বাংলার মতো অতিথি পরায়ণ কেউ নেই।

পাশাপাশি আগামী চলচ্চিত্র উৎসবেও কলকাতায় আসার আহ্বান আমন্ত্রণ জানান মমতা। তাতে সম্মতিও জানান সল্লু মিয়া। 

তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগে বক্তব্য রাখতে এসে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ সালমান বলেন, 'আমার বলার জন্য কিছুই রাখা হয়নি। কারণ মহেশ ভাট, অনিল কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা, সোনাক্ষী সকলেই এত কিছু বলে দিয়েছেন তারপরে আমার বলা সাজেনা। আমি উপরওয়ালার নামে শপথ করে বলছি আমার যা যা বলার ছিল, সবই ওনারা বলে দিয়েছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আবার এই কথাগুলি কি নতুন করে বলার কোন দরকার আছে? এরপরে হাত জোড় করে নমস্কার করে মঞ্চ ছাড়ার প্রচেষ্টা নেন। যদি স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা তাকে ছাড়তে নারাজ। এরপর বাংলায় তার প্রশ্ন 'কেমন আছো?' তারপর ফের ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চ ছাড়তে চান। ফের দর্শকদের চিৎকারে আবার ফিরে আসেন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই আমি একটি কনসার্টে যোগ দিতে কলকাতা এসেছিলাম। দেখে মনে হচ্ছিল গোটা কলকাতা ওই কনসার্টে যোগ দিয়েছিল। এখানে যে কত মানুষ এখানে থাকে সেটাও আমার জানা হয়ে গিয়েছিল। তখনই মমতা দিদি আমাকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আর এটা তো সোনাক্ষীও জানে যে আমি যদি একবার কথা দিই, তবে সেটা আমি রাখি। সেই কারণে আজ এখানে আসা।' 

মমতা দিদি যখন আমাকে তার বাড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালো আমি তখন ভেবেছিলাম যে ওনার বাড়িতে গিয়ে দেখবো ওর ঘর আমার থেকে ছোট কিনা। আমি একবার অনিল কাপুরের বাড়িতে গিয়েছিলাম তার পাঁচতলা বাড়ি। এখন হয়তো আরো বেড়েছে। শত্রুঘ্ন সিনহা আমার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি দেখেছেন যে আমার ঘরে বসার জায়গা নেই। কিন্তু দিদির বাড়িতে গিয়ে দেখলাম সত্যিই আমার থেকেও তার ঘর ছোট। আর তা দেখে আমার সত্যিই হিংসে হয় যে এইরকম একটা পদে থেকে মমতা দিদির ঘর এত ছোট হয় কি করে? আসলে তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন।' 

পরিচালক মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ঋষিকেশ মুখার্জি, অসিত থেকে অভিনেত্রী জয়া বচ্চন, শর্মিলা ঠাকুর-এই বাংলা থেকে অনেকেই হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে অবদান রেখেছেন। আর এই কারণেই হিন্দি ছবি আজ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে বলে সালমানের অভিমত। 

এদিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলী ও জুন মালিয়া। সঞ্চালকের অনুরোধে এই চলচ্চিত্র উৎসবের থিম সং'এর গানের তালে তালে পা মেলাতে দেখা যায় মমতা ব্যানার্জি, সল্লু মিয়া, সোনাক্ষী, মহেশ ভাট, অনিল কাপুরদের। 

এদিনের অনুষ্ঠান থেকে মমতার আঁকা একটি ছবি সালমান খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

এদিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় উত্তম কুমার-তনুজা-তরুণ কুমার-লিলি চক্রবর্তী অভিনীত বাংলা ছবি 'দেয়া নেয়া'। 

উল্লেখ্য আট দিনের (উৎসবের শেষ দিন ১২ ডিসেম্বর) এই চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৯ টি দেশের মোট ২১৯ টি ছবি দেখানো হবে। এরমধ্যে রয়েছে ১৬৯ টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি এবং ৫০ টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ও তথ্যচিত্র। এর মধ্যে বিদেশী ছবির সংখ্যা ৬৩।  

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ছবি হিসাবে জায়গা পেয়েছে পরিচালক সৈয়দা নিগার বানুর 'নোনা পানি' ছবিটি।  

নন্দন-১,২,৩, শিশির মঞ্চ, প্রিয়া, নজরুল তীর্থ-১,২, রবীন্দ্রসদন, নবীনা, সাউথ সিটি, মিনার, বিজলী, মেনকা, অশোকা, স্টার, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, কোয়েস্ট মলসহ কলকাতার ২৩ টি পেক্ষাগৃহে এই ছবিগুলি প্রদর্শিত হবে। 

এবারের উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি 'স্পেন', স্পেশাল ফোকাস কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। 

এবার মোট পাঁচটি আলাদা প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ রয়েছে-  এগুলি হল ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন (ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজ), কম্পিটিশন অল ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস, এশিয়ান সিলেট (নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড), বেঙ্গলি প্যানোরামা, ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন ডকুমেন্টারি এবং ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন শর্ট ফিকশন। এছাড়াও নন-কম্পিটিশন বিভাগে থাকছে সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর