বয়স ১৬ পেরুতেই মনের মধ্যে ভালবাসার ডালপালাগুলো যেন তরতর করে বাড়তে শুরু করে। ৩০ পেরুতেই মনের মধ্যে শূণ্যতার গহ্বর যেন সবকিছুেক গ্রাস করতে শুরু করে। সঙ্গীহীন জীবন বৃথা মনে হয়। দৃঢ়প্রতীজ্ঞ চিরকুমারদের বিষয়টি বাদ দিলে সবাই চায় এক ছাদের নিচে একজন কাছের মানুষ, যার সঙ্গে শেয়ার হবে জীবনের সব খুটিনাটি। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ভালবাসার ফাঁদ পেতে বসেছে জাপানের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। প্রেমের অভিনয় করে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।
সম্প্রতি প্রেমে ধোঁকা খাওয়া ১২ জন জাপানি নাগরিক ঠিক একই রকমের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জনই মহিলা৷ প্রত্যেকেরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর কোঠায়৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, ধোঁকা খাওয়া এসব প্রেমিক-প্রেমিকার প্রায় সবারই ভালবাসার শুরুটা হয়েছিল অলনাইনে।
গল্পটা হলো- অনলাইন ডেটিং সাইটে পরিচয় হয়েছিল অচেনা যুবক বা যুবতীর সঙ্গে৷ চলতে থাকে চ্যাটিং। ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে স্পুটনিেকর গতিতে । চ্যাটিং থেকে ফোনিং। মন দেওয়া- নেওয়া। বিবাহবন্ধনের আগেই প্রেমিক বা প্রেমিকা হঠাৎ লাপাত্তা৷ তবে, কেটে পড়ার আগে এই ভুয়া প্রেমিক বা প্রেমিকারা একটা কাজ করেছেন অত্যন্ত সুকৌশলে৷ প্রেমের ফাঁদে হাবুডুবু খেয়ে সত্যিকারের প্রেমিক-প্রেমিকারা অন্তত আড়াই লক্ষ ডলার মূল্যের একটি করে ফ্ল্যাট কিনেছেন৷ একজন তো প্রেমে এতটাই অন্ধ ছিলেন যে, প্রেমিকের কথায় একবারে তিনটে ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন৷ তারপরই খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, পলাতক প্রেমিক বা প্রেমিকারা কোন না কোন রিয়েল এস্টেট এজেন্সির কর্মী৷ প্রেম-ট্রেম কিছুই নয়, আসলে ফ্ল্যাট বিক্রির জন্যই এরা প্রত্যেকে প্রেমের জাল বিস্তার করেছিলেন৷ আর ফ্ল্যাট বিক্রির পরই প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ফ্ল্যাটের চাবি ধরিয়ে প্রেমের পাখি ফুরুৎ৷
একসঙ্গে থাকার আশায় ফ্ল্যাট কিনে সুখীগৃহকোণ তৈরি আর হল না৷ তাও যদি তারা বাজার মূল্যে ফ্ল্যাট কিনতেন, তাহলে প্রতারণার জ্বালা কিছুটা হলেও কমত৷ দেখা গেছে, এদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই ফ্ল্যাটের দাম বাজার মূল্যের থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি নেওয়া হয়েছে৷ প্রতারিত এই ১২ জন মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ১৯লক্ষ ৫০ হাজার ডলার দাবি করে মামলা ঠুকেছেন৷
জাপানে প্রেমের ছলে প্রতারণার ঘটনা বিগত দু’বছরে দ্রুত হারে বেড়েছে৷ জাপানের জাতীয় উপভোক্তা তথ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে এমন অভিযোগে মোট ২৬টি মামলা হয়েছিল৷ আর ২০১৩ সালে হয়েছে ৪২টি।