রোগী না হয়েও এক ব্যক্তি মানুষ মাসের পর মাস হাসপাতালের শয্যায় কাটিয়েছেন দীর্ঘ ১৯ মাস। কারণ একটাই, ভয়। খুন হয়ে যাওয়ার ভয়। তাই 'প্রাণ বাঁচাতে' ১৯ মাস যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের মেঝেতে বসবাস করছেন রসুল সরদার (৪৮) নামের এক ব্যক্তি।
তিনি যশোর শহরের নিরিবিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২০১২ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে তিনি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
রসুল সরদারের দাবি, তার বাড়িতে যাওয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। সেটি না হলে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।
হাসপাতালেই শুয়ে বসে দিন কাটে তার। খুন হওয়ার ভয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য জ্বরের রোগী হিসেবে অভিনব কায়দায় হাসপাতালে ভর্তি হন। গত দেড় বছরে একাধিক বার তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি হাসপাতাল ছাড়েননি।
রসুল সরদার জানান, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিপক্ষরা ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এসময় যশোর ক্যাম্পের র্যাব সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন। এরপর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে ওই নেতার পরামর্শে তিনি ২০১২ সালের ১৯ অক্টোবর জ্বরের রোগী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হন।
তিনি বলেন, 'সেই থেকেই পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ফ্লোরে জীবনযাপন করছি।'
অন্যান্য রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে সময় কাটছে রসুলের। হাসপাতাল থেকে তিনি ঠিকমত খাবার পান না। বোনের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়েই বেঁচে আছেন তিনি।
রসুল সরদার জানান, তার পৈত্রিক নিবাস যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মিশ্রিদেয়াড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত দলু সরদার। বর্তমানে শহরের পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকার বাসিন্দা তিনি। দুই সন্তানের জনক। মিশ্রি দেয়াড়া গ্রামের পৈত্রিক বিশাল সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালী চক্র। ওই চক্রটির কাছে বংশপরম্পরায় রসুল সরদারের পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হয়েছেন।
১৯৬৪ ও ১৯৭৪ সালে সম্পত্তির বিরোধে তার পরিবারের সদস্য দাদা, চাচা, মামা ও মা হত্যা খুন হয়েছেন। এখন তিনিও দখলদার চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। পারিবারিক অশান্তির কারণে ২০০৭ সালে স্ত্রীও ডিভোর্স দিয়েছেন।
একজন সুস্থ মানুষের দিনের পর দিন হাসপাতালে থাকার রেকর্ড অনেককেই অবাক করেছে। হাসপাতাল তার বন্দি জীবনের গল্প নিয়ে প্রতিবেদন লিখা হয়েছে কয়েকবার। তবুও মুক্তি মেলেনি রসুল সরদারের।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রসুল সরদার বলেন, 'আব্বা আমাকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করো। আমি আর হাসপাতালে থাকতি পারছিনে। বাড়িতে যাওয়ার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক, আর না হয় জেলে পাঠিয়ে দিক।'
তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, রসুল সরদার এক সময় মাদক ব্যবসায় জেল খেটেছেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে রসুল বলেন, 'আমাকে যারা মাদক ব্যবসা করতে বাধ্য করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। আমি ২০ থেকে ২৫ বছর আগে মাদক ব্যবসায় করতে গিয়ে জেল খেটেছি, শাস্তি পেয়েছি। কিন্তু যারা আমার জমি দখল করেছে, আমার সংসার ভেঙেছে, যারা আমাকে হত্যা করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে তো কেউ কথা বলে না?'