বর্তমান পৃথিবী নতুন এক প্রাণিবিলুপ্তির বলয়ে প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে আশঙ্কার দিকটি হলো, এবারের বিলুপ্তির প্রথম ও প্রধানতম শিকার হতে যাচ্ছে মেরুদণ্ডী প্রাণিগুলো।
জীবজগৎ অভিন্ন শেকলে বাঁধা। মেরুদণ্ডী প্রাণি যদি বিলুপ্তির শিকার হতে থাকে, তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে অমেরুদণ্ডী প্রাণিও।
কিন্তু এ ধরনের ক্রিয়া দীর্ঘসময়ব্যাপী ঘটে বিধায়, মেরুদণ্ডীর বিপর্যস্ততাই আপাতত প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশ্বের বহুদিন যাবৎ এ আসন্ন বিলুপ্তিকাল নিয়ে আলাপ হতে থাকলেও মূলত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও লব্ধ তথ্য হতে তৈরি প্রতিবেদন বিষয়টিকে এ মুহূর্তে সামনে নিয়ে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, বার্কলে এবং ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়। স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন এবং বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেরুদণ্ডী প্রাণিগুলোর বিলুপ্তির সম্ভাব্যতা এ মুহূর্তে, পৃথিবীর বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে ১১৪ গুণ বেশি।
আশু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা এ থেকে সহজে আঁচ করা যায়। গত বছর প্রকাশিত ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করছে এ প্রতিবেদন।
নতুন আগত এ বিলুপ্তিকালকে জেরার্ডো সেবালোস, পল আর এরলিকসহ ছয় বিজ্ঞানী একে সংজ্ঞায়িত করছেন পৃথিবীর বুকে ষষ্ঠ মহাবিলুপ্তিকাল হিসেবে।
পৃথিবীতে প্রাণির আবির্ভাব ঘটেছিল আজ থেকে অন্তত ৩৫০ কোটি বছর আগে। আর শেষ মহাবিলুপ্তিকালটি পৃথিবী অতিক্রম করেছে ৬.৫ কোটি বছর আগে। তখন এ গ্রহের শাসনদণ্ড হাতে দাঁড়িয়েছিল ডায়নোসর।
প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে বলা হয়, ডায়নোসরের বিলুপ্তির কারণ পৃথিবীতে মহাখাদ্যাভাব এবং ব্যাপক পরিসরের উল্কাবৃষ্টি।
বর্তমানে উল্কাবৃষ্টির না হলেও ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মানুষের হাতে বিনষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে নবতর প্রাকৃতিক ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটা; প্রভৃতি প্রভাবক যদি আরও বিকাশমান থাকে, তো প্রাণিজগতে যে বিপুল প্রাণক্ষয় ঘটবে, প্রকৃতিতে তা পুষিয়ে উঠতে লক্ষকাল লেগে যেতে পারে।
বিলুপ্তির ধারায় গবেষককূলপ্রধান বিজ্ঞানী জেরার্ডো সেবালোসের মতে প্রথম শিকার হতে পারে মানুষ। উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টুয়ার্ট পিমও সেবালোসের মতো এই ষষ্ঠ মহাবিলুপ্তির যজ্ঞে মানুষকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন।
তার প্রতিবেদন আরও বিধ্বংসী। বলছেন, বর্তমান সময়ে বিলুপ্তির সম্ভাবনা অন্যসময়ের চেয়ে ১১৪ গুণ বেশি- এটি সত্য নয়। সত্যটি আরও ভয়ানক, বিলুপ্তির সম্ভাবনা অন্তত ১০০০ গুণ বেশি, যা প্রাণিজগতে নিয়ে আসতে পারে কোটি বছর আগের মতো নাটকীয় কোনো মোড়।
সেক্ষেত্রে, এটা মনে হতেই পারে, নিকট ভবিষ্যত থেকে শুরু করে আগাম সুদীর্ঘসময় পৃথিবীতে রাজত্ব করবে শুধু কীটপতঙ্গের দল; যদিও বৃক্ষপতন ঘটলে তারাও ক্রমে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জুন,২০১৫/ নাবিল