১২ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৪৩

বগুড়ায় ব্যস্ত সাদা সেমাই পল্লীর কারিগররা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় ব্যস্ত সাদা সেমাই পল্লীর কারিগররা

বগুড়ার আকাশ এখন মেঘলা। তেমন একটা কড়া রোদ নেই। কড়া রোদ না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে সাদা সেমাই তৈরিতে কর্মমুখর সাদা সেমাই পল্লীর কারিগররা। ঈদে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা থাকে বলে রাতদিন শ্রম দিয়ে সাদা সেমাই পল্লী এখন দারুণ ব্যস্ত। দম ফেলারও সময় নেই।

বগুড়ায় তৈরি সাদা সেমাইয়ের চাহিদা ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে। বগুড়াসহ উল্লেখিত জেলায় সাদা সেমাই সরবরাহ করতে কারিগররা কাজ করে চলেছে।

বগুড়ার রাজা বাজার ও ফতেহ আলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই ধরনের সাদা সেমাইয়ের মধ্যে একটি সুতার মতো চিকন এবং অপরটি তুলনামূলক মোটা। এই দুই ধরনের সেমাই তৈরি এবং বিক্রি হয়ে থাকে। খোলা বাজারে সেমাই দুটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ময়দা দিয়ে তৈরি সাদা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি, আবার সাদা সেমাই ভেজে প্যাকেট আকারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে।

জানা যায়, বগুড়া জেলায় কমপক্ষে তিন শতাধিক সেমাই কারখানায় সাদা চিকন সেমাই তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে বগুড়া শহরের মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, শ্যওলাকান্দি, বনানী, সুলতানগঞ্জপাড়া, চেলোপাড়া, নারুলী, নুরানী মোড়ে বৃন্দাবনপাড়ায়। কেউ কেউ কারখানা খুলে আবার কেউ কেউ নিজ নিজ বাড়িতে সেমাই তৈরি ও প্যাকেটজাত করেন। তবে তাদের বেশিরভাগই মওসুমি ব্যবসায়ী। পুরো রমজান মাসে এবং ঈদুল আযহার সময় সেমাই তৈরি ও বিক্রি শেষে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেন। আবার অনেকেই সারা বছর কারখানায় সেমাই তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে বগুড়া শহরের অর্ধশতাধিক বেকারি ও হোটেল রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সারা বছর সাদা সেমাই তেরি করে থাকে।

বগুড়া শহরের রাজা বাজার এলাকার সাদা সেমাই নিতাই রায় জানান, সময়মত কারিগর পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে বেশি দামে শ্রমিক রাখতে হয়। ময়দার দাম বেড়েছে। রোদ না থাকলে সাদা সেমাই শুকানো যায় না। এর সাথে যোগ দিয়েছে লোড শেডিং। এসব নানা কারণেই সাদা সেমাইয়ের দাম কিছু বেড়েছে। তিনি জানান, বগুড়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ, নওগাঁ, নাটোর, ঢাকা, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সাদা সেমাই সরবরাহ হয়ে থাকে। পাইকারি ব্যবসায়িদের চাহিদামতো কুরিয়ারের মাধ্যমে সেমাই পৌঁছানো হয়। দামের বিষয়টি হচ্ছে শুকানো এবং সেমাইয়ের গুনাগুণের উপর। তিনি জানান, ঈদ এবং সাদা সেমাইয়ের নাম ডাক ছড়ে যাওয়ায় সেমাইয়ের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ।

বগুড়া শহরের ঢাকন্তা গ্রামের সেমাই শ্রমিক মোজাহার আলী আকন্দ জানান, ময়দা পেস্ট করে মেশিনের মাধ্যমে সেমাই তৈরি করা হয়। মেশিন থেকে বের হওয়া সাদা সেমাই প্রথমে ভিজা থাকে। ভিজা সেমাইকে হাতের সাহায্যে একটি চিকন কাঠির সাথে ডেউ তোলার মতো করে দুই ভাজ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর এটি বাজারজাত করা হয়। রান্নার সময় একটু ভেজে নিতে হয়।

বগুড়া শহরের রওশন আলী গ্রুপের এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুজ্জামান আরিফ জানান, তারা সেমাই ও লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে উত্তরাঞ্চলের সকল জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদের আগে সেমাই এর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এসময় শ্রমিকদের দিনরাত পরিশ্রম করে অর্ডার পরিপূর্ণ করা হয়।  

বগুড়ার বেজোড়া এলাকার সেমাই কারখানার মালিক আব্দুর রশীদ জানান, ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন সাদা সেমাই নিতে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল করে পাঠাতে হয়।

তিনি জানান, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্রগ্রামের কিছু সেমাই পাঠানো শুরু হয়েছে রোজার শুরু থেকে। চলতি বছর ২৫ কেজি ওজনের এক খাচি সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা করে। ভালোমানের সেমাই পাইকারি বাজারে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দাম পড়ছে। আর খুচরা বাজারে ভালোমানের সাদা সেমাই দাম পড়বে ৬০ টাকা কেজি।


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর