১৭ মে, ২০২২ ১৬:৪৬

শিকলে বন্দী প্রতিবন্ধী শিল্পীর জীবন

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর।

শিকলে বন্দী প্রতিবন্ধী শিল্পীর জীবন

শিকলে বন্দী প্রতিবন্ধী শিল্পীর জীবন।

শিকলে বন্দী হয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের উত্তর লুধুয়া গ্রামের ঢালী বাড়ির প্রতিবন্ধী শিল্পী আক্তারের (৩১) জীবন কাটছে। দিনে বাড়ির সামনে খোলা কাচারি ঘরে বাঁশের খুঁটির সাথে আর রাতে বাড়ির দোচালা টিনের ঘরে চৌকির সাথে বেঁধে রাখা হয় তাকে।

জন্মের পর থেকেই শিল্পী মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। শিল্পীর মা (রাশিদা বেগম) ২০ বছর আগে মারা গেলেও বাবা (যোহর আলী ঢালী) মারা যান ২ বছর আগে। ঘরে আছে সৎ মা, ৪ ভাই ও ২ বোন। ভাইরা সবাই দিনমজুরের কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট বোনের বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি অবস্থান করছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সে কথা বলতে পারে না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হাউমাউ করে কাঁদে। কাচারি ঘরে সে শুধুই খুঁটির চারপাশে হাঁটছে। অনেক সময় অপলক দৃষ্টিতে মাথা নিচু করে শুধুই তাকিয়ে থাকে।

বড় ভাই লিটন ঢালী জানান, জন্মের পরই শিল্পী প্রতিবন্ধীর মতো। বাবা তখন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়নি। সে আস্তে আস্তে পূর্ণাঙ্গ মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সে সুযোগ পেলে বাড়ি থেকে এদিক-সেদিক চলে যেত। এমনকি কেউ বুঝে ওঠার আগেই কারো হাতে কামড় বসিয়ে দিত। তাই সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে তাকে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, বাবাই সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিল। ভাইরা বিয়ে করে আলাদাভাবে সংসার করছে। শিল্পীকে নিয়ে আমরা অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সরকারি সহায়তা হিসেবে প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা পাই, তা দিয়ে শিল্পীর ভরণ-পোষণ বা চিকিৎসা করানো কঠিন। আমাদের কাজ না থাকলে পরিবারের খাওয়া-দাওয়া সেভাবে হয় না। আমি আমার এই বোনটির চিকিৎসাসহ সার্বিক দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বিত্তবান ও সরকারের সহায়তা কামনা করছি।

শিল্পীর কাজিন তাসলিমা বেগম বলেন, শিল্পী আক্তার সত্যিই অসহায়, তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। ঘরে সৎ মা, সেও কিছুটা প্রতিবন্ধী। অর্থাভাবে শুরুতে তার বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। যথাসময়ে চিকিৎসা করা গেলে শিল্পী হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে পারতো। যেহেতু শিল্পী একটি মেয়ে মানুষ, তাই তার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও স্থানীয়রা খেয়াল রাখেন। ছোট বোন শ্বশুর বাড়ি থেকেও প্রতিবন্ধী শিল্পীসহ পরিবারের সবার খেয়াল রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করে থাকে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে আমার ইউনিয়নে শিকলে বন্দী শিল্পীর খবর জেনেছি। আমার ব্যক্তিগত ও পরিষদের পক্ষ থেকে শিল্পীকে যথাসাধ্য সহায়তা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে শিল্পীর শিকলে বন্দী জীবন সম্পর্কে জানতে পারলাম। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এর বাইরে আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শিল্পীকে কী ধরনের সহায়তা করা যায়, তা দেখে ব্যবস্থা নেব।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর