২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:০৯

দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ও মেলা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ও মেলা

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দেড়শ বছরের ঐহিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে তেলজুড়ি গ্রামের কুমার নদীতে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা বাইচকে ঘিরে সকাল থেকেই দূর দুরান্ত থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হয় কুমার নদীর দুই পাড়ে। বিকেলে নানা রংয়ের ছোট বড় বাইচ নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১০টি বাইচ। এসময় গোটা এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা ছোট-বড় নৌকা ও ট্রলারে চড়ে নেচে গেয়ে আনন্দ উৎসব করে। এ উৎসবে নারী পুরুষ বৃদ্ধ-শিশুরাও অংশ নেয়।

নৌকা বাইচকে ঘিরে কুমার নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষের উপচেপড়া ভিড় জমে। অনেকেই নদীর পাড়ে স্থান না পেয়ে নদীর পানিতে নেমেই বাইচ প্রতিযোগিতা দেখেন। কুমার নদীর দুই পাড় ছাড়াও বাড়ির ছাদে, গাছে এমনকি মোবাইল ফোনের টাওয়ারে উঠে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। নৌকা বাইচকে ঘিরে তেলজুড়ি বাজারে বিশাল মেলা বসে। মেলায় হরেক রকমের পণ্য নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। গ্রামের ঐতিহ্য হিসেবে মাছ, আখ ও মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামাইসহ স্বজনেরা এ মেলা থেকে মাছ, আখ ও মিষ্টি কিনে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যান। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় আসেন দোকানিরা। দুই দিন ব্যাপী এ মেলায় মূল আকর্ষণ হচ্ছে, দূর দুরান্ত থেকে আসা এ গ্রামের জামাইয়েরা বড় বড় মাছ  ও মিষ্টি (আমেত্তি) কিনে নিয়ে আত্মীয় বাড়িতে যান। ফলে মেলায় মাছ ও মিষ্টির দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।  স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা জানান, তেলজুড়ি গ্রামের মেলা ও নৌকা বাইচ দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এ বছরও বড় পরিসরে মেলা ও বাইচের আয়োজন করা হয়েছে। দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এ মেলায় সকলের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঢাকার দোহার থেকে এ গ্রামের জামাই আবুল খালেক জানান, তিনি প্রতি বছর তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন এ দিনটিকে সামনে রেখে। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বেড়াতেই তিনি বছরের এ দিনটিকে বেছে নেন। এখানকার ঐতিহ্য হিসেবে বড় মাছ ও মিষ্টি কিনে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যাবেন।

মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী শ্যামল, অখিল ও মিষ্টি ব্যবসায়ী অজিত সাহা, আফিল হোসেন জানান, এ মেলার ঐতিহ্য হিসেবে বড় মাছ ও মিষ্টি কিনে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যান কুটুমেরা। ফলে এ দিনে মাছ, মিষ্টি ব্যবসা জমে উঠে। এবারের মেলাটি বড় পরিসরে হওয়ায় লোকজনের আনাগোনাও বেশি। এতে তাদের বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে।

মেলা ও বাইচ কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল জানান, প্রতি বছর ৯ আশ্বিন ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তেলজুড়ি গ্রামের এতিহ্য হিসেবে এ মেলাটি এতদাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আয়োজন। বিগত দুই মাস ধরে স্থানীয়দের সহায়তায় মেলা ও বাইচ অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। মেলাটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নৌকা বাইচে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল আকিল ডেভিড সিকদার। বাইচে অংশ নেওয়া তিনটি নৌকার মালিককে বিজয়ী হিসাবে ফ্রিজ বিতরণ করা হয়। নৌকা বাইচ ও মেলাকে ঘিরে বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, সালথা ও মুকসেদপুর ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করেন। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর