বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি

উত্তপ্ত নির্বাচনী মাঠ

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত ১ অফিস ভাঙচুর, ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চতুর্থ ধাপের পৌরসভা ভোট কেন্দ্র করে দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে নির্বাচনী মাঠ। প্রচারণা নিয়ে সংঘাত-সহিংসতাও ঘটছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভায় দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রচার কার্যালয় ভাঙচুরের। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দুটি হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। গভীর রাতে একটি নির্বাচনী অফিসে আগুনও দেওয়া হয়। এ ছাড়া শনিবার মাদারীপুরে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

সংঘর্ষে প্রাণ গেল যুবকের : টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচনে দুই ‘মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের’ সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোপালপুরের ডুবাইলের সোমেশপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. খলিল (৩৫) উপজেলার ডুবাইল আটাপাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থক বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সন্ধ্যায় গোপালপুর থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জেরে ডুবাইলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় মো. খলিল মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, সোমবার রাতে নিহত খলিলের বাবা আসামিদের নাম-পরিচয় বলতে পারেননি তাই অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে খলিলের লাশ তার পরিবারে হস্তান্তর করা হয়। লাশ ডুবাইল আটাপাড়া গ্রামে পৌঁছার পর শত শত মানুষ ভিড় করে। খলিলের স্ত্রী ও দুই মেয়ে লাশ দেখে মূর্ছা যান। স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। খলিলের মেয়ে আঁখি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে।

১৪ ফেব্রুয়ারি গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচন। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র রকিবুল হক ছানা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কে এম গিয়াস উদ্দিন। বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম রুবেল এবং বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মো. শাহজাহান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রকিবুল হক ছানার নির্বাচনী প্রচারণায় জেলা আওয়ামী লীগের একটি দল সোমবার গোপালপুর যায়। তারা সন্ধ্যার দিকে থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী কে এম গিয়াস উদ্দিন ও তার সমর্থকরা ওই এলাকায় এলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার পর বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা ওই এলাকায় নৌকা প্রতীকের একটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেন। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা গিয়াস উদ্দিনের বাসায় হামলা ও দোকান ভাঙচুর করেন। গিয়াস উদ্দিনের গ্রাম ডুবাইলে এ হামলার খবর পৌঁছার পর সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। তার সমর্থকরা মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের দিকে রওনা হন। পথে সোমেশপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় খলিল নামক এক ব্যক্তি মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইলে নৌকার অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে আটজন আটক : গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রচার কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে আটজন আটক হয়েছেন। সোমবারের হত্যাকান্ড ও ভাঙচুরের ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে। তবে হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। গোপালপুর থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, রাতভর অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ঘটনায় আটজনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৩টায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম হীরা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। তার আগে রাত দেড়টায় সংঘর্ষে নিহত খলিলের বাবা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তার নিহত ছেলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থক।

ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হাতবোমা বিস্ফোরণ : পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়েছে। এর আগে গভীর রাতে এক নির্বাচনী অফিসে আগুনও দেওয়া হয়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা নিক্ষেপ করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম। এর আগে ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আর্ট গ্যালারি এলাকায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও আর্ট গ্যালারি এলাকায় পুড়িয়ে দেওয়া নৌকা প্রতীকের অফিস পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচন। একে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা, বিএনপির শরিফুল ইসলাম শরিফ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে গতকাল দুপুরে বোমা বিস্ফোরণের পর তৎক্ষণাৎ সহযোগী সংগঠনসহ জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে পথসভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর