করোনাভাইরাস সংক্রমণে আধাআধি লকডাউনে কোনো উপকার আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে লকডাউন করলে পুরোপুরি করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে করে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। এ জন্য সরকারকে সেই ধরনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। কিন্তু আধাআধি লকডাউনে কোনো উপকার আসবে না। এখানে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের দেশে করোনার যে ঊর্ধ্বগতি তাতে লকডাউনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটা হতে হবে শক্ত। কারণ, করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কেমন হতে পারে এ নিয়ে আমাদের গবেষণা নেই। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানতে লকডাউনের বিকল্প নেই। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। ফোনালাপে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, যেহেতু আমরা পুরোপুরি লকডাউনে যেতে পারছি না, তাই ব্যক্তি সচেতনতাটাই বাড়াতে হবে। আমরা যদি সবাই বাধ্যতামূলক মাস্ক পরি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই করোনা কমে আসবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে যত বেশি করোনার পরীক্ষা হবে, তত বেশি রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এতে রোগীকে প্রটেকশন দেওয়াও সহজ হবে। অধ্যাপক বি. চৌধুরী বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইমিউনিটি তৈরি হয় না। প্রথম দফা টিকা নেওয়ার ১৫ দিন পর মানুষের শরীরে ৫০-৬০ ভাগ ইমিউনিটি তৈরি হয়। তাই একটি টিকা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যদি কেউ মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, মাস্ক পরবেন না-এটা হবে চরম ভুল। তিনিও যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন। দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পর আরও অন্তত ১৫ দিন পর পুরোপুরি ইমিউনিটি চলে আসবে। মনে রাখতে হবে, টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইমিউনিটি আসে না। এ জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরতেই হবে। কেউ মাস্ক না পরলে তাকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। মাস্ক শুধু করোনাকেই প্রতিরোধ করে না, অন্য নানা রোগেরও প্রতিরোধ করে। ঢাকা শহরে ধুলাবালিসহ নানা দূষণ থেকে রক্ষা পেতেও মাস্ক পরতে হবে। তাছাড়া টিকা তো দেশের সবাইকে দেওয়া হচ্ছে না। একটি ক্ষুদ্র অংশকে দেওয়া হচ্ছে। অন্তত ৬০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হলে হার্ড ইমিউনিটি চলে আসত। কিন্তু সেটি এখনো বাংলাদেশে হয়নি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বি. চৌধুরী বলেন, এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এগুলো আগের ভাইরাসের চেয়ে আরও জটিল, বেশি প্রাণঘাতী বলছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টেড ভাইরাস বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এটাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখন যে টিকা বাজারে পাওয়া গেছে, তা গত বছরের ভাইরাস প্রতিরোধে তৈরি করা। এরপর আরও নতুন ধরনের টিকাও আসবে ওইসব নতুন নতুন ভাইরাসের উপস্থিতির কারণে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী মনে করেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে নিজস্ব কিছু গবেষণা থাকা উচিত। প্রথম ডোজ দেওয়া প্রায় শেষের দিকে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। টিকার সংখ্যা ধরে কী পরিমাণ মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। এতে টিকার কার্যকারিতা কেমন তা জানা যাবে। টিকা নেওয়ার আগে কী অবস্থা, পরে কী অবস্থা তার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে হবে। টিকা নেওয়ার পর কত শতাংশ আক্রান্ত হলো, আবার কত শতাংশ ভালো হলো তাও জানা দরকার। তবে দুই ডোজের টিকা নিলে স্বাভাবিকভাবে কেউ গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয় না বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। টিকা নেওয়ার অন্তত ১৫ দিন পর থেকে ইমিউনিটি তৈরি হয়। দুই ডোজ নেওয়ার পর প্রায় শতভাগ ইমিউনিটি আসার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য সুযোগ থাকলে অবশ্যই সবাইকে টিকা নিতে হবে।