প্রযুক্তির আধুনিকায়ন এবং অপরাধের ধরন পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সব সময় চেষ্টা ছিল আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) প্রশিক্ষিত হবে এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য দেশে-বিদেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসএফ সদস্যদের গড়ে তোলা হচ্ছে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এসএসএফের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পরিবর্তনশীল জগতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষের জীবন গতিশীল হচ্ছে, কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। সেই সঙ্গে অপরাধীরা, জঙ্গিরাও সুযোগ নিচ্ছে। কাজেই বিজ্ঞান বা আধুনিকতা আমাদের যেমন সুযোগ দেয় সেই সঙ্গে জীবনের জন্য ঝুঁকিও সৃষ্টি করে- এটা হলো বাস্তবতা। সরকারপ্রধান বলেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় চেষ্টা ছিল আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এই বিশেষ বাহিনী, তারাও সেভাবে প্রশিক্ষিত হবে এবং তাদের দক্ষতাও সব সময় বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য দেশে-বিদেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, অন্যান্য দেশে কীভাবে ট্রেনিং হয় সেগুলো দেখা, সেগুলো যেমন আমরা গড়ে তুলেছি, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
এসএসএফ সদস্যদের দক্ষতার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা তাদের পরিবারববর্গ নয়, বিদেশি অতিথিরাও যখন আসেন, তাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা একটা কঠিন দায়িত্ব। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই, যখনই যিনি এসেছেন আমাদের এসএসএফ সদস্যরা এত চমৎকারভাবে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন যে প্রত্যেকেই তাদের প্রশংসা করেছেন এবং সবাই তাদের দক্ষতা ও আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এসএসএফ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের পক্ষ থেকে ১০০ গৃহহীন পরিবারের জন্য ২ কোটি টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান। মুজিববর্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সম্পাদিত ‘মুজিব-বাঙালি-বাংলাদেশ’ নামে একটি ই-বুক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মুজিব আদর্শে বিশ্বাসীরা তিনটি করে গাছ লাগান : সকালে কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন তারা প্রত্যেকে তিনটি করে গাছ লাগাবেন। শেখ হাসিনা বলেন, সবাই তিনটি করে গাছ লাগান। একটি বনজ, একটি ফলদ ও একটি ভেষজ। প্রত্যেকে অন্তত এ তিনটি গাছ লাগাবেন। কারণ গাছ আপনাদের আর্থিকভাবেও মূল্য দেবে, পরিবেশও রক্ষা হবে। আর সেই সঙ্গে পুষ্টির জোগানও দেবে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল গণভবন আঙিনায় দুটি গাছের চারা রোপণ করেন। এ সময় সেখানে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী-সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, আমাদের কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সব সহযোগী সংগঠন, এমনকি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে শুরু করে সবাইকে আমি আহ্বান জানাব যে, মুজিব আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন প্রত্যেকে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে এই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ আরও সবুজ হোক, আরও সুন্দর হোক এবং আমাদের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে। তিনি বলেন, পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ঠিক রেখে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা করতে চাই। সে উন্নয়নের জন্যই আমাদের এ পদক্ষেপ। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে আমি ১৯৯৬ সালে দেখেছিলাম মাত্র ৭ শতাংশ বনায়ন ছিল। আজ আমরা ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছি। তা ছাড়া সারা বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে ঘরে বাগান তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই এভাবেই আমাদের বনায়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে, পরিবেশ উন্নত হবে। আমাদের প্রতিবেশ সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশটা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।