শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকার

বিএনপি জঙ্গি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মাঠে নামিয়েছে

-ওবায়দুল কাদের

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপি জঙ্গি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মাঠে নামিয়েছে

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, লন্ডন থেকে নির্দেশ পেয়ে বিএনপি নেতারা জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক, অপশক্তিকে মাঠে নামিয়েছে। ঢাকায় গণসমাবেশ ঘিরে নাশকতার অংশ হিসেবে বিএনপি ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। বিএনপি যে সন্ত্রাসী দল ইতোমধ্যে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। দলীয় নেতা-কর্মীদের বলতে চাই- সবাই প্রস্তুত থাকুন, সতর্ক থাকুন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকুন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

একান্ত আলাপচারিতায় বিএনপির আজকের সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার পাশাপাশি, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি অফিসে বোমা পাওয়া, পুলিশের ওপর আক্রমণ, নানা ধরনের হুমকি-ধমকিতে ঢাকাবাসী কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত। কারণ বিএনপি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পছন্দ করে না।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বিএনপির না আসার কারণ কী বলে মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলছে তারা ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা এটা করতেই পারে। কিন্তু তাদের পছন্দ নয়াপল্টনের ৩৫ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা। সরকারের সদিচ্ছা আছে বলেই তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলেছিল। কিন্তু তাদের সেখানে পছন্দ নয়। কারণ এটা ঐতিহাসিক স্থান। যেখানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, দেশবাসীকে স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। সেই ভাষণটি বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছে। এই সেই উদ্যান যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিএনপির দোসর পাকিস্তান সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিল। সে কারণেই হয়তো মির্জা ফখরুল সাহেবের পছন্দ না। কারণ মির্জা ফখরুলের বাবা ১৯৭১ সালে কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেগম জিয়া গত নির্বাচনেও সভা করেছেন। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ৮-৯ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বরে এগিয়ে আনা হয়েছিল।

১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী দল। তারা স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বাস করে না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওইদিন আলবদর বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন ও সাংবাদিক সৈয়দ নজমুল হককে ধরে নিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো নৃশংসতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা শুরুর দিন ১০ ডিসেম্বরকেই বিএনপি বেছে নিয়েছে।

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিক জবাব দিতে পারবে। তবে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে গ্রেফতার করবে এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা এবং পার্টি অফিসে তালা দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা বিএনপির পুরনো অভ্যাস। কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেনি। আর যেটুকু জেনেছি, বিএনপি অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে, তাদের অফিসে বোমা পাওয়া গেছে। তল্লাশি চলছে। তল্লাশি শেষে খুলে দেওয়া হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া থাকত। দলীয় নেতা-কর্মীদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হতো না। প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিম, প্রবীণ নেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে কীভাবে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল সেগুলো কি দেশবাসী ভুলে গেছে? বিএনপি আমলে পুলিশের অফিসার কোহিনুর আমাদের এক নারী নেত্রীকে যিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাকেও পিটিয়েছে। সেগুলো নিশ্চয় মানুষ ভুলে যায়নি।

‘বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে, আপনারা প্রায়ই এমন অভিযোগ করে আসছেন কিন্তু কেন?’ জবাবে তিনি বলেন, যে দলটির জন্মই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেই দল ষড়যন্ত্র ছাড়া কী করবে? দীর্ঘদিন ক্ষমতাহারা। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে নতুন মর্যাদা পেয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বিএনপির পছন্দ নয়। কারণ তারা দেশের উন্নতি দেখতে চায় না। তাই এখন বিদেশি মিশনগুলোয় আমাদের সম্পর্কে খারাপ বার্তা দিচ্ছে। কিছু কিছু কূটনীতিকের ইঙ্গিতে তারা দেশের ভিতর অরাজকতার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা, মেধা ও আন্তরিকতার কারণে দেশ এগিয়ে চলেছে। দেশবাসী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন।

বিএনপির অন্য বিভাগীয় সমাবেশে বাস ধর্মঘট করা হয়েছে, ঢাকার গণসমাবেশে বাস ধর্মঘট না ডাকতে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে; এটা সরকারের নমনীয়তা নাকি দুর্বলতা?- এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছুই করার নেই। কারণ পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনে সব দলের নেতাই রয়েছে। ঢাকায় যেন গণসমাবেশ করতে পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে মালিক পরিবহন ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে। এটা সরকারের উদারতা, দুর্বলতা নয়।

সবশেষে ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে তারা সংঘাতেরই আভাস দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাসী। আমাদের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে চাইলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

এজন্য পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকতে হবে। যেখানেই সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর