বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপিকে সংলাপে নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিকে সংলাপে নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকা

কাজী হাবিবুল আউয়াল

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য কমিশন চিঠি দিয়েছে। বিএনপিকে চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন পর গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিইসি এমন কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মূল জিনিসটা হলো- আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই উনাদের সংলাপে ডাকিনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি- আনুষ্ঠানিক না হলেও, আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ; অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহ্বানটা করেছি।’ হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা ব্যথিত হই, যখন বলা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি, আজ্ঞা বহন করিনি। আমরা নির্বাচন নিয়ে আলাপ করি, আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে, বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।’ বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এখনো আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আপনাদের (বিএনপির) যদি কোনো কৌশল থাকে, তার ওপর ইসির কোনো মন্তব্য থাকবে না। তারপরও আমরা আলোচনা করতে চাই আপনাদের সঙ্গে। ফল ইতিবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। প্রয়াস থাকবে। প্রয়াস গ্রহণ করতে বাধা থাকা উচিত নয়’।

বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কথা জানিয়ে গত ২৩ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছিলেন, সিইসির দফতর থেকে বিএনপি মহাসচিবকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ওই চিঠি পাঠানোর পর বিএনপির তরফ থেকে কোনো সাড়া পায়নি ইসি। এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে সিইসি গতকাল বলেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। তার ভাষায়, বিএনপিকে চিঠি দেওয়ায় ইসির কোনো ‘কূটকৌশল’ ছিল না, কোনো মহলের ‘চাপও নেই’। নির্বাচন ভবনে সিইসি যখন নিজের কক্ষের সামনে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, চার নির্বাচন কমিশনারও তার সঙ্গে ছিলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিকপত্র দিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। আনুষ্ঠানিক নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অন্তত আপনারা অংশগ্রহণ করতে পারেন। একটি চিঠি দিয়েছিলাম বৃহস্পতিবার শেষ বেলায়। আমার মনে হয়, চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনো জবাব আসেনি। ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন।’ ‘অনেকে বলতে চেয়েছে এটা সরকারের একটি কূটকৌশল। আমি, আপনাদের মাধ্যমে পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই- এ পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না। যদি কেউ এটাকে কূটকৈৗশল হিসেবে মনে করতে চান, তাহলে এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে; সরকারের কূটকৌশল এটা নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনো কূটকৌশল হিসেবে এ কাজটি করেনি।’

সিইসি বলেন, ইসি একেবারে প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে। ইসি মনে করে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে, দলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই মুখ্য। বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন কখনো সম্ভব হয় না। দলগুলোর চর্চার মাধ্যমে তা বিকশিত হোক, গণতান্ত্রিক সরকার সংহত হোক- এটা চেষ্টা করা হয়েছে।

জবাবের অপেক্ষায় ইসি : এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, যে কোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে।... আমরা আশা করি, যেহেতু মহাসচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসে- সেটাই কাক্সিক্ষত। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। আগাম কোনো মন্তব্য নেই।’ বিএনপি যদি আসে, তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেই প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘উনারা কী বলবেন, আমরা কী বলব- আগাম কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’ বিএনপি যদি আলোচনার জন্য এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তারপরও বসতে চান সিইসি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সব কমিশনারই জানেন। সিইসির পত্র নয়, সিইসি লিখেছেন, কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।’ কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেওয়া কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা।’ বিএনপির জবাব পেতে কতদিন অপেক্ষা করবে কমিশন- এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান সিইসি।

সর্বশেষ খবর