চট্টগ্রামে থই থই করছে জোয়ার-বৃষ্টির পানি। ডুবেছে মেয়রের বাড়ির আঙিনা। নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। এসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা এসব খবর পাঠিয়েছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। নগরের নিম্নাঞ্চলে গতকাল তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জোয়ারের সময় পানি উঠে সড়ক, গলি থই থই করে। ফলে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হয় চট্টগ্রাম নগরবাসীর। কারও বাসায় জ্বলেনি চুলা। পাইকারি বাণিজ্যের কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে মালামাল। নষ্ট হয়েছে বাড়ির আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। মেয়রের বাড়ির আঙিনায়ও ওঠে পানি। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা এবং একটি স্থল নিম্নচাপ থাকায় এর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার এমন আচরণ আরও দু-তিন দিন থাকতে পারে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জানা যায়, গতকাল দুপুরের দিকে নগরের, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, চকবাজার, ডিসি রোড, ফুলতলা, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, আরাকান রোড, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সড়ক, তিনপুলের মাথা, মোহরা, হামিদচর, চররাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাস টার্মিনাল, ২ নম্বর গেট, ষোলশহর, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, প্রবর্তক মোড়ে বৃষ্টির পানি জমে যায়। জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জোয়ারের পানি ওঠে। চকবাজার মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেন এলাকার বাসিন্দা গোলাম ফারুক বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে যায়। হাঁটুপানি উঠে যায় বাসা, গলি ও বাড়ির উঠানে। বাসায় গ্যাস জ্বলেনি। হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে।
ডুবল মেয়রের বাড়ির আঙিনা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করে। সেই চসিকের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির আঙিনাও পানিতে ডুবেছে। নগরের বহদ্দারহাট এলাকার মেয়রের দ্বিতল বাড়ির উঠানে পানি থই থই করে। বাড়ির সামনের সড়কেও ছিল পানি। বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির পর থেকে সামনের রাস্তায় পানি জমতে শুরু করে। গতকাল সকালের ভারী বর্ষণে পানি বাড়ির আঙিনায় চলে আসে। গত বছরের বর্ষা মৌসুমেও মেয়রের বাড়িতে পানি উঠেছিল।
বাগেরহাট : নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল ও কচুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম এবং মোংলা পোর্ট পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানগুছি নদীর পানির তোড়ে মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের আধা কিলোমিটার সড়ক ধসে গেছে। ভাঙনহুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী ২৫ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, বাড়িঘর, বাজার, ১২ মিটার বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে রয়েছে সুন্দরবন।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে জলাশয়ের মাছ, ডুবে গেছে ফসলের খেত। ঝালকাঠি সদর ও নলছিটির চার গ্রামে পানি ঢোকায় ওই গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িঘর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ফসলের খেত ও পুকুরের মাছ তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ভোলা : ভোলার মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দিনে দুবার প্লাবিত হচ্ছে বাঁধের বাইরের অন্তত ১৫টি গ্রাম।। গতকাল মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে অন্তত ২০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বরিশালের ৯ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
বরিশাল : বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদীর পানি আরও কমেছে। তবে গতকালও ৯টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করে প্রবাহিত হয়েছে।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে ভাঙন বাড়ছে
কক্সবাজার : সমুদ্রের জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের অন্তত নতুন ৫টি স্পটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে হাদুরছড়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন শ্মশান পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টায় ওই এলাকার পশ্চিম মুণ্ডারডেইল সংলগ্ন ১৫০ মিটারের বেশি নতুন করে ভেঙেছে। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় ৬০ মিটারের কাছাকাছি সড়ক ভেঙে গিয়েছিল।
লক্ষ্মীপুরে তিন দিন পর ফেরি চলাচল
লক্ষ্মীপুর : তিন দিন পর লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে ফেরি চলাচল গতকাল থেকে চালু হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট থেকে ভোলার ইলিশাগামী সব ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। ঝড়ের কবলে পড়ে মজু চৌধুরীর হাট থেকে ছেড়ে যাওয়া কিষানি নামে একটি ফেরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভোলার ইলিশা ঘাটের অদূরের চরে উঠে পড়ে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ‘কদম’ নামে আরেকটি ফেরিকে ওই ঘাটের অদূরে নোঙর করে রাখা হয়।