ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে ভারত সরকারকে এ বিষয়ে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। গতকাল পৃথক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করতে বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। এটা ভারতকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে, সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভারত থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর কথা জানান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। (তাকে) (প্রত্যর্পণ) করার জন্য, এটি প্রক্রিয়াধীন। আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের দপ্তরে আসেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তখন শেখ হাসিনাকে ফেরাতে চিঠি দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালান শেখ হাসিনা। এর আগে অভ্যুত্থান দমনে ব্যাপক বলপ্রয়োগ করে হাসিনা সরকার। এতে সরকারি হিসাবেই প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আর আন্দোলনকারীদের হিসাবে এ সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার শেখ হাসিনাসহ অভ্যুত্থানে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানের সময়ে হত্যাকাণ্ড, গত ১৬ বছরে গুম-ক্রসফায়ার, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে। এরই মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
চিঠি পেয়ে যা বলল ভারত : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘(হাসিনাকে) প্রত্যর্পণের অনুরোধ সম্পর্কিত একটি কূটনৈতিক পত্র আজ (গতকাল) বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আমরা হাতে পেয়েছি। তবে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
এর আগে ভারতকে কূটনৈতিক পত্র পাঠানোর তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানান অন্তর্র্বতী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা জানান তিনি।
এদিকে, গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোন উপায়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর পিলখানার বিজিবি সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। এক্সট্রাডিশন করার জন্য, এটি প্রক্রিয়াধীন।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কথা গত কয়েকদিন ধরেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিছুদিন আগেই হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।