বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু অদৃশ্য এক শক্তি ধীরে ধীরে মাথা তুলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি নেতা-কর্মীরা ইস্পাতকঠিন ঐক্য ধরে রাখতে পারেন, তাহলে জনগণের রায় ধানের শীষের পক্ষেই আসবে। গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদরের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা স্টেডিয়ামে সমবেত হন। হাজারো কর্মীর উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় সম্মেলন। নেতা-কর্মীর সরব উপস্থিতি স্টেডিয়াম ছেড়েও আশপাশ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পাশাপাশি সম্মেলন ঘিরে পুরো জেলায় উৎসবে পরিণত হয়।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে। যেই সংস্কারগুলোর প্রস্তাব দিয়েছে, এই প্রস্তাবগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ বিএনপি আরও আড়াই বছর আগে দেশের সামনে, দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যেন বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। এই ব্যাপারে আপনাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ, জনগণ এবং জনগণ। এই জনগণের সঙ্গে আমাদের থাকতে হবে, জনগণের পাশে আমাদের থাকতে হবে, জনগণকে আমাদের পাশে রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে আপনাদের এটি নিশ্চিত করতে হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আজকের এ কাউন্সিলে প্রার্থীরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলাদেশের জনগণ আমাদের মূল শক্তি।
সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অপপ্রচার করা হচ্ছে একটি বিশেষ মহল থেকে। বলা হচ্ছে, বিএনপি ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে না। অথচ বিএনপি সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছে। যারা এই অপপ্রচার করছে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছিল। সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফার মধ্যেই সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। ৩১ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নত, আদর্শ, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে। বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভারতের আধিপত্যবাদের পক্ষে, অন্যটি আধিপত্যবাদের বিপক্ষে। বিএনপির জন্মই হয়েছে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে।’ তিনি বলেন, বিএনপি ডানপন্থি নয়, বামপন্থিও নয়, মধ্যপন্থি দল। বিএনপি সব মানুষের অধিকারের পক্ষে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, জামায়াতে ইসলামী বেহেশতের টিকিট বিক্রি শুরু করছে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা করছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এরা একাত্তরে পাকবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে হত্যা করেছে। তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, একটি দল পিআরের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই পিআর পিআর জপছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব আকন্দ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি লায়লা বেগম প্রমুখ।