বিশ্ব সংক্রমণের দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ ২০২১ এসে করোনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে তার দাপট ও তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের চেয়েও এপ্রিলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই ঊর্ধ্বগতির দিকে। কিন্তু ‘না মানা’র আমাদের তো অনেক ক্ষেত্রেই শিষ্টাচার মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না। সবকিছুকে অবজ্ঞা করে মাস্ক না পরা, পরলেও নাক খুলে থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখা, কেউ জিজ্ঞাসা করলে একটা অজুহাত তুলে তার মাস্ক না পরাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা নিজের, পরিবার, সমাজ তথা দেশের জন্য কত বড় ক্ষতিকর সেটা যতদিন না উপলব্ধি করতে পারব ততদিন করোনা তার তান্ডব চালিয়ে যাবে ও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান তিন ধরনের মিউট্যান্টের মধ্যে ইউকে ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিউট্যান্ট দুটোই আমাদের দেশে সংক্রমণ ও শনাক্ত করা হয়েছে। স¤প্রতি আইসিডিডিআরবির জেনোমিক সিকোয়েন্সে বাংলাদেশে সংক্রমণের যে ধরন তার ৮১% সাউথ আফ্রিকা ধরনের যা মার্চের শেষ হতে বেশি দেখা যায়। তার আগে ইউকে মিউট্যান্ট বেশি ছিল। ভারতে ডাবল মিউট্যান্টের খবর পাওয়া গেছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বাংলা মিউট্যান্ট আরও ভয়ানক রূপ নিতে পারে। প্রয়োজন কঠোর বিধিনিষেধ, সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের সমন্বয় ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে।
স¤প্রতি ওয়াশিংটন ভিত্তিক IHME-এর প্রতিবেদনে বর্তমান হারে সংক্রমণ হতে থাকলে মে মাসে গিয়ে যা প্রতিদিন কয়েক শতাধিক মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছে। টিকা কার্যক্রম দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি প্রথম ডোজ চালু আছে। টিকা নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে কানকথায় বিশ্বাস না করে সবাইকে টিকা নিতে হবে। ফাইজার-অ্যাস্ট্রোজেনকার টিকাসহ অন্যান্য টিকা দ্বিতীয় ডোজের দুই সপ্তাহ পর থেকে কভিডের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কেউ কেউ প্রথম ডোজের পর করোনায় আক্রান্ত হলেও তার শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা তৈরি হওয়ার ফলে ভয়াবহ বা মারাত্মক ঝুঁকিতে কেউ পড়েননি। স¤প্রতি WHO এই টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের বেশি বলে প্রতীয়মান করেছে।
কাজেই, আসুন এখনো সময় আছে, সবাই শিষ্টাচার মেনে মাস্ক ব্যবহার, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলি ও আমাদের আশপাশের সবাইকে সচেতন করে তুলি। সঠিক সময়ে টিকা নিয়ে নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করি। সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করে জনসমাবেশ এড়িয়ে চললে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই কমাতে সাহায্য করবে। ফলে এই বিশ্ব সংক্রমণের সময়, দেশ ও জাতি হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
-অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম ওয়ালিউল ইসলাম
এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।