‘ভুল করে’ ৮৫৮ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মধ্যে অপরাধী এবং আগে ডিপোর্ট হওয়া লোকজনও রয়েছে। নবউদ্ভাবিত প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় ঘটাতে দাপ্তরিক ব্যর্থতার জের হিসেবে মার্কিন অভিবাসন দফতরের এরকম ক্রুটির ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়েছে। আর এমন উদ্বেগজনক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ এ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তদন্ত প্রতিবেদন থেকে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দফতরের অভিভাবক সংস্থা হচ্ছে এই ডিপার্টমেন্ট। ‘কন্সটিটিউশন ডে এবং সিটিজেনশিপ ডে’ উপলক্ষে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ স্থানে ৩৮ হাজার ইমিগ্র্যান্ট শপথ নেন নাগরিক (সিটিজেন) হিসেবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ভিসায় প্রবেশের পর গ্রীণকার্ড নিয়ে ৫ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে অতিবাহিত করা কিংবা সিটিজেন স্বামী/স্ত্রীর স্পন্সরে গ্রিনকার্ড লাভের ৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন হবার আবেদন করতে হয়।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে এমন ৮৫৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা ভুয়া পরিচয় দেখিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েছেন। নাম, জন্মতারিখ বদল করে পদ্ধতিগত ফাঁক-ফোকড়ের মাধ্যমে নাগরিক হয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এ তদন্তকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অপরাধ ও সন্দেহজনক আচরণের কারণে বেশ কিছু অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা নানা পন্থায় আবার ঢুকেছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিস বলছে, নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়া এসব ইমিগ্র্যান্টের আঙুলের ছাপ যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ২০০৮ সাল থেকে আঙুলের ছাপ প্রযুক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এর আগে আঙুলের ছাপ নথিভুক্ত করে রাখা হতো। নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী অনেক সন্দেহজনক ব্যক্তির আঙুলের ছাপ নথিভুক্ত ছিল। সেগুলোর রেকর্ড যথাযথ যাচাই না করেই অনেককে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ইমিগ্র্যান্টের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের অনেকেই সন্দেহজনক দেশ থেকে এসেছেন। আবার অনেক অভিবাসীর বিরুদ্ধে বিতাড়নের আদেশ রয়েছে। এই ইমিগ্র্যান্টদের মধ্যে অপরাধী এবং পলাতক ফেরারীও রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় লাখ লোকের আঙুলের ছাপ প্রযুক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় তারা সহজেই ফাঁকি দিতে পেরেছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাইয়ের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিস।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তদন্তে যারা ভুয়া তথ্য দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এর মধ্যেই ভূয়া তথ্য প্রদানকারী তিনজনের নাগরিকত্বের সনদ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল জন রট বলেছেন, অভিবাসনের আবেদনপত্রে জালিয়াতি বন্ধের জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগ প্রযুক্তিগতভাবে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপ যাচাই করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়েছে। এ কারণে নানা পথে পাওয়া নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ/ মাহবুব